কামারুন-নাহার-মুকুল | শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 45 বার পঠিত
ফিনিক্স গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদের জন্মদিন আজ। ১৯৩৮ সালের ৩ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আর্থিক সেক্টরে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন দীন মোহাম্মদ। সততা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে তিনি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তার হাত ধরে দেশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প, ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
তার প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ফিনিক্স ইন্সুরেন্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেড। দীন মোহাম্মদ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠিত ফিনিক্স গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজকে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে রূপ দেন।
তিনি বিদেশ ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি শিল্পায়নের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের শিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। একে একে গড়ে তোলেন ফিনিক্স টেক্সটাইল মিলস, ইস্টার্ন ডাইং অ্যান্ড ক্যালেন্ডারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড, ফিনিক্স ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড, ফিনিক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, ফিনিক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও রংধনু স্পিনিং মিলস লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এক পর্যায়ে ২০টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ফিনিক্স গ্রুপ।
দেশের অন্যতম শিল্প উদ্যোক্তা দীন মোহাম্মদের শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়; পড়াশোনা করেছেন ঢাকার বর্তমান মুসলিম সরকারি হাইস্কুলে। বাবা মরহুম হাজী নুর মোহাম্মাদ পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা; ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। মাতা মরহুম আসমা খাতুন। দাদা-বাবা উভয়েই ব্যবসা করতেন। বাবার ব্যবসা ছিল আসাম ও গৌহাটিতে। ১৯৪৭ সালে প্রোপার্টি একচেঞ্জ করে এদেশে আসেন এবং দেশ স্বাধীনের পর সকল ব্যবসা গুটিয়ে স্থায়ীভাবে চলে অসেন। জন্মের পর থেকেই দীন মোহাম্মদ ব্যবসায়িক পরিবেশে বড় হয়েছেন। আদমজী, লতিফ বাওয়ানী ও ইস্পাহানির মতো বনেদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার বাবার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। তাই তরুণ বয়স থেকেই তার মধ্যে বড় শিল্প গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রবল হয়। ১৯৬০ সালে তার ব্যবসায়িক কর্মজীবন শুরু হয়। ষাটের দশকে বাবার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ট্রেডিং ব্যবসা দিয়ে পথচলা শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ব্যবসায়ে সুনাম অর্জন করেন। তিনি ১৯৬২ সালে শিল্পে প্রবেশ করেন এবং সময়ের সাথে সাথে ব্যবসা ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশের শিল্পায়ন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হন। তারপর ট্রেডিং থেকে তিনি মনোনিবেশ করেন শিল্পপণ্য উৎপাদনে। ঢাকার আদি ব্যবসায়ীদের অন্যতম হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন।
তিনি কেবল ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। মানুষ মানুষের জন্য; জীবন জীবনের জন্য এই মানবিকবোধ থেকেই তিনি তৃণমূল পর্যায়ের দুস্থ ও অসহায় যারা স্বামী পরিত্যক্ত, বয়স্ক, সহায়-সম্বলহীনদের জন্য একটি সেবামূলক পূনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলেন বগুড়ার সাতশিমুলিয়া লাহাড়ীপাড়ায়।
ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি এক সময় লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাব ও রহমতগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। লালবাগ শাহী মসজিদ ও জামিয়া কুরআনিয়া আরব মাদ্রাসা পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন। ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের সম্মানিত আজীবন সদস্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শাহী মসজিদ এর সভাপতি ছিলেন।
শিল্প ও বাণিজ্য প্রসারে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালে তিনি মরহুম মাওলানা আকরাম খা গোল্ড মেডেল (শিল্পায়ন)-এ এবং ১৯৯৯ সালে জগদীশ চন্দ্র স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়া তার ফিনিক্স ফিনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডকে আন্তর্জাতিক স্টার অ্যাওয়ার্ড কোয়ালিটিতে (আইএসএকিউ) ভূষিত করা হয়।
Posted ২:২১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy