
নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ৩০ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট | 738 বার পঠিত
‘স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করতে বীমাখাতের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তাই বীমাকে করপোরেট মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মূল্যায়িত করলে জাতির পিতাকেই সম্মান জানানো হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত রোববার রাজধানীর দিলকুশাস্থ পিপল্স ইন্স্যুরেন্স ভবনে বীমাখাতের মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সংগঠনের সভাপতি ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও বিএম ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মঈনুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘আমরা যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তারা আল্লাহ, ফেরেশতা, জান্নাত, জাহান্নাম বা পরকাল সরাসরি দেখিনি, কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা আল্লাহর প্রেরিত রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে জেনেছি এবং বিশ্বাস করেছি। এখন যদি আমরা রাসুল (সা.)-কে অবিশ্বাস করি, তাহলে এসব বিষয়ে আমার বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। তার মানে একজন ব্যক্তি। তাকে যদি সরিয়ে দেয়া যায়, তাহলে কোনো কিছু বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই। তেমনি বাঙালি জাতির যিনি স্থপতি, স্বাধীনতার মহান নায়ক তাকে যদি সরিয়ে ফেলা যায়, তাহলে বাঙালি জাতির অস্তিত্বই মুছে ফেলা যাবে।’
১৫ আগস্টের ঘটনাকে জাতির জন্য কলঙ্কময় ও অত্যন্ত ভয়াবহ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সেদিনের সে ভয়াবহ দিনটিকে যদি ভিজ্যুয়ালাইজড করা যায়, তাহলে বোঝা যায় সেটা কতটা মর্মান্তিক ছিল। জাতির পিতা আমাদের যা দিয়েছেন, তা শোধ করার কোনো পথ আমাদের কাছে নেই, আমরা শুধু পারি এই মহান ব্যক্তির সম্পর্কে একটু আলোচনাই করতে।’
বঙ্গবন্ধুর গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল বর্তমানে জাতি ভোগ করছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার সিদ্ধান্তগুলো সম্পূর্ণ সঠিক ছিল। আজ বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচকে আমরা বড় বড় দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। শান্তি সূচকে প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছি। একসময় জাতির জনক আমাদের এর সুফল দিয়েছেন এখন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সুফল আমাদের দিয়ে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, আমরা যদি যার যার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করি, তাহলে বিশ্বাস করি আমাদের জাতির সামগ্রিক ভালো কাজের একটি সুফল আল্লাহপাক তাকে পরকালে দেবেন। তাই আমরা যদি ভালো কিছু করি, তাহলে তিনি খুশি হবেন।’
বীমাখাতকে করপোরেট মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতির পিতা যে বীমায় ছিলেন, এটা আমাদের গর্বের বিষয়। তিনি এখানে রুজির সন্ধানে আসেননি, বরং এই খাতটিকে এগিয়ে নিতে, দেশ স্বাধীন করতেই এসেছিলেন। তাই আমরা বীমাকে করপোরেট ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা বলতে পারি। এতে জাতির পিতার চিন্তা ও ধ্যান-ধারণাকেই সম্মান জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই বীমা পরিবারের সদস্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি একটি সেক্টরকে এমনভাবে ভালোবাসে এবং আমরা যদি তার সাথে একটু আগাই, তাহলে আশা করা যায় আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো।’
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বঙ্গন্ধুকে আমরা ফিরে পাবো না। অনন্তকাল ধরে শোক পালন করলেও তা হবে না। তবে বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে তখনই যখন তিনি পরকালে থেকে দেখবেন তার বাঙালিরা মানুষ হয়েছে, তখনই তার আত্মা শান্তি পাবে। সেটা করতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে, তার আদর্শকে ধারণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুকন্য প্রধানমন্ত্রী সোনার বাংলা গড়তে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সে কাজে সহযোগিতা করতে হবে। পাশাপাশি আরেকটা জিনিস বলবো, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে ছিল, তাদের নাম প্রকাশ্যে আসতে হবে। প্রয়োজনে তাদের মরণোত্তর বিচার করতে হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর ওপরে এখনো হুমকি রয়েছে। তাকে কয়েকবার শেষ করার তথা, স্বাধীনতাকে ধূলিসাৎ করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। তাই জাতিকে এ ষড়যন্ত্রকারীদের চিনে রাখতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএম ইউসুফ আলী বলেন, ‘আজকে আগস্টের এই শোকসভার বক্তাদের সাথে আমি আরেকটি জিনিস যোগ করবো যেটা এই আগস্টেই ঘটেছিল। সেটা হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। যারা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব মুছে দিতে চেয়েছিল, তারাই ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর জীবিত থাকা রক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাত দিয়েই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বেন এটাই হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।’ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের মেগা প্রজেক্ট, মেট্রোরেল হচ্ছে। এগুলো সবই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে। আমাদের পদ্মা সেতু প্রায় শেষ পর্যায়ে।
আশা করা যায়, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এটার উদ্বোধন হবে। এরপর পুরো দক্ষিণবঙ্গের সাথে রাজধানীর ঢাকার একটি চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে। অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে পুরো বাংলাদেশের। আমাদের কাজ এখন একটিই। সেটা হলো বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমেই তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা।’
এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের সিইও আবদুল খালেক মিয়া, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের সিইও পিকে রায় এবং এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের সিইও ইমাম শাহীন। এ সময় বীমাখাতের অর্ধশতাধিক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে জাতির জনক ও শহিদ পরিবারের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
Posted ৬:৩৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ৩০ আগস্ট ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy