বিবিএনিউজ.নেট | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, রোববার বীমা সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও ব্যাংক বীমা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট বীমাবিদ আবদুল জব্বার মেহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯৩৪ সালের এই দিনে বরিশালের হিজলা উপজেলার মেহমানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম মুন্সি মোবারক আলী এবং মা মরহুমা আছিয়া খাতুন।
আবদুল জব্বার মেহমান মিল্লাত পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে কিংবদন্তি বীমাবিদ খোদা বক্সের হাত ধরে ইন্স্যুরেন্স জগতে পথচলা শুরু করেন। মেহমান নিজ আগ্রহে খোদা বক্সের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর কোম্পানিতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি তা সাগ্রহে গ্রহণ করেন।
সাহসী ছিলেন বলে মেহমানকে খোদা বক্স খুব স্নেহ করতেন এবং এ পেশায় উৎসাহ দিতেন। মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার। তাই খোদা বক্স তার এ ক্ষমতার প্রশংসা করতেন। তাকে দিয়ে যে কোনো কাজই সাফল্যের সাথে করানো যাবে বলে তার মধ্যে একটা বিশ্বাস জন্মায়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে খোদা বক্সই তাকে জীবন বীমা করপোরেশনের গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ইনচার্জ করেন। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে দুজনের মধ্যে হৃদ্যতা গড়ে ওঠে ও সম্পর্ক হয় সুদৃঢ়। মেহমান গ্রাহকের মন জয় করতে পটু ছিলেন, প্রিমিয়াম আদায়েও ছিলেন দক্ষ। গ্রাহকের কাছে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে ঠোঁটে তেল মেখে দুপুরে না খেয়ে অভুক্ত থাকাকে আড়াল করে রাখতেন। শত কষ্টকে হাসি দিয়ে ম্লান করে দিতেন। খোদা বক্স বিভিন্ন সময়ে জানাজায় শরিক হতেন; সঙ্গী হতেন মেহমান। কেবল সঙ্গীই নন, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সের টাকা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও পালন করতেন তিনি। এভাবেই তার সাথে থেকে অসুস্থদের প্রিমিয়াম জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও সহায়তা করেছেন। সচেতনতা বোধটা তার মধ্যে ছিল দৃঢ়। ছিলেন মিশুক প্রকৃতির মানুষ।
একটা সময়ে বীমা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এর কার্যপরিধি অজ্ঞতার বেড়াজালেই আবদ্ধ ছিল। তৎকালে হাতেগোনা ব্যাংক ছিল ৫-৬টি আর অবহেলিত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সংখ্যাও ছিল ৫-৬টি। ব্যাংক-বীমার তথ্য সংবলিত কোনো ইয়ার বুক বা কোনো পত্রিকা প্রকাশ হতো না তখন। এই অভাববোধ থেকেই ব্যাংক-বীমা পত্রিকা বের করার উদ্যোগ নেন। অর্থনৈতিক সেক্টরে ব্যাংক-বীমার মতো একটি মুখপত্রের প্রয়োজন আছে বলে এই দূরদর্শী মানুষটি সেই নব্বই দশকে অনুধাবন করেন। বীমা সেক্টরকে বিকশিত করার লক্ষ্যে নব্বই দশকের প্রথমদিকে তারই প্রকাশনায় আত্মপ্রকাশ করে পাক্ষিক ব্যাংক বীমা পত্রিকা; যার প্রকাশক ও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
মেহমানের অধীনে যারা কাজ করেছেন বা কাজ শিখেছেন তাদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। এ হিসেবে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামানের নাম উল্লেখযোগ্য। এদিক থেকে মেহমানকে বীমা সাংবাদিক গড়ার কারিগর বলা যায়। নিজ এলাকায় জনহিতকর কাজ করে বিশেষ করে পুল নির্মাণের ক্ষেত্রে এক অনন্য পরিচয় দিয়েছেন। বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলাধীন ‘আবদুল জব্বার মেহমান কলেজ’। কলেজের অধীন আছে একটি ছাত্রাবাসও। তিনি ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক।
৮৪ বছর বয়সে ২০১৭ সালের ৬ জুলাই চিকনগুনিয়ায় কাছে হেরে এ বীমাব্যক্তিত্ব পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। হিজলায় তারই প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদ্রাসার কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়তাকে সমাহিত করা হয়।
ইকনোমিক মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন ১১ মার্চ ২০১৯ সালে সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিক গড়ার এ কারিগরকে গুণীজন সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
bankbimaarthonity.com | Sajeed