বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯ | প্রিন্ট | 334 বার পঠিত
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পাঁচ দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
শুক্রবার বিকালে বুয়েট অডিটোরিয়ামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক বৈঠকে উপাচার্য তাদের এসব দাবি পূরণের কথা জানান।
আবরার খুন হওয়ার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি থাকার কথা স্বীকার করে অধ্যাপক সাইফুল হলভর্তি শিক্ষার্থীদের সামনে বলেন, “আমার ঘাটতি ছিল। পিতৃতুল্য হিসেবে আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।”
ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরে আবরার নিহতের পর ‘দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য’ সমালোচনার মধ্যে ছিলেন উপাচার্য সাইফুল ইসলাম। গত মঙ্গলবারই তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি নীতিগতভাবে মেনে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
শুক্রবার দাবি পূরণের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “তোমাদের ১০টা দাবি আমি হাতে পেয়েছি। তোমরা আমার সন্তানের সমান। সন্তানের মত মনে করি। সিসিটিভি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে… আমরা সরকারের উঁচু পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি এ ব্যাপারে।
“তোমাদের দাবিরে প্রেক্ষিতে মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হল। পাশাপাশি বুয়েটের সকল রাজনৈতিক সংগঠন ও এদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হল।”
শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবিই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে উপাচার্য বলেন, “আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে। বুয়েটে র্যাগিং বন্ধ হবে।”
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় কানায় কানায় পূর্ণ বুয়েট অডিটোরিয়ামে এ বৈঠক শুরু হয়। শুরুতেই আবরারের জন্য পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমানের পরিচালনায় উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে সভামঞ্চে ছিলেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ এবং কয়েকজন ডিন।
সমাধান আসবে?
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত রোববার রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। তারপর থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন এই শিক্ষার্থীরা।
আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বুয়েট থেকে বহন করা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি, অবিলম্বে অভিযোগপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন সময়ে নিরর্যাতনে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল তাদের দশ দফার মধ্যে।
তাদের ওই দশ দফার প্রতি সংহতি জানিয়ে আলাদাভাবে সাত দফা দাবি জানায় বুয়েট শিক্ষক সমিতি। রাজনীতি বন্ধের পাশাপাশি দায়িত্বে ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও রয়েছে এর মধ্যে।
বুধবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় এ বিষয়ে আলোচনার পর সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, “তোমরা যে রকম দাবি করেছ, ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার জন্য, আমরা সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিক্ষক-ছাত্র রাজনীতির কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নন। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুয়েট তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে।
“…একটা ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি উঠাবে যে ছাত্র রাজনীতি ব্যান। আমি নিজেই যেহেতু ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি। সেখানে আমি ছাত্র রাজনীতি ব্যান বলব কেন?”
আর শুক্রবার বুয়েট কর্তৃপক্ষ রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এ পদক্ষেপ বুয়েটের সমস্যার সমাধান দেবে না।
“বরং ছাত্র রাজনীতি না থাকার কারণেই আবরার হত্যার মত ঘটনা ঘটছে। এই জন্য সমাধান হল- ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, দুর্বৃত্তায়িত শক্তিকে অপসারণ করে এবং ছাত্র রাজনীতি স্বাধীনভাবে করতে দিতে হবে। ছাত্র রাজনীতি কমানো নয়, তা উন্মুক্ত করে দেওয়াই হবে সমাধান।”
তবু অমীমাংসিত
বুয়েটের বর্তমান চারটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের শর্ত অনুযায়ী সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও এ সভা দেখার সুযোগ পান।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী, বুয়েটের মেইন গেইট থেকে দুই দফা পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীরা অডিটোরিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। বিকাল ৩টার পর থেকেই লাইন ধরে আইডি কার্ড দেখিয়ে অডিটোরিয়ামে ঢোকেন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা।
তবে দীর্ঘ তিন ঘণ্টার এই বৈঠক স্পষ্ট কোনো সমঝোতা ছাড়োই শেষ হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কারের আশ্বাস দেওয়া হলেও হলগুলোতে এখনও দলীয় নেতাকর্মী রয়েছেন। ক্যাম্পাসের পরিবেশ এখনও ‘নিরাপদ নয়’। তাই আগামী ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে তারা।
অন্যদিকে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের বলেন, যারা অবৈধভাবে হলে আছে, তাদের বের করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে হলগুলোতে অভিযান চালানো হবে।
শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পাশে আছে মন্তব্য করে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানান তিনি। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাতে সাড়া না দিলে অনেকটা অমীমাংসিতভাবেই শেষ হয় বৈঠক। রাতে শহীদ মিনারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়, উপাচার্যের অনুরোধে এবং ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ‘স্বল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা যায়’ এরকম পাঁচটি পয়েন্টে তারা ঠিক করেছেন। সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে তবেই তারা ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে ধরে নেবেন।
“যতদিন বাস্তবায়ন না করছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা ধরে নেব, এই ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয় এবং ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে সম্পূর্ণ প্রসেসটা বিতর্কিত হবে।”
দশ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলবে এবং শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পরে জানিয়ে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় ব্রিফিং থেকে।
আরো পড়ুন : সকাল ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে আবরারকে প্রচণ্ড মারধর করে
Posted ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed