বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়ায় ‍বৃহৎ ঈদ জামাত

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ০৫ জুন ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   587 বার পঠিত

বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়ায় ‍বৃহৎ ঈদ জামাত

প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্মরণকালের সবচেয়ে আটোসাটো ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে বৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। অনেকেই এ ঈদ জামাতকে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত বলে দাবি করেছেন।

এবারের জামাতে চার লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে ধারণা আয়োজকদের। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে শুরু হওয়া ঈদুল ফিতরের ১৯২তম জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেছেন, নিরাপত্তার কড়াকড়ির পর এবার চার লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এটি শোলাকিয়ার প্রতি মানুষের ভালোবাসারই নিদর্শন।

মেঘলা আকাশ থাকায় গত রাত থেকেই শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। তারপর সকালে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এর মাঝেই প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোর থেকেই হাজার হাজার মুসল্লির জনস্রোত নামে সড়কে সড়কে। অগনিত মানুষের বিশাল বহর গিয়ে মিয়ে মিশে শোলাকিয়া মাঠে। সকাল নয়টার আগেই কানায় কানায় ভরে যায় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ।

এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই কঠোর ছিল যে মুসল্লিদের প্রত্যেকে অন্তত তিন থেকে চারবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। জায়নামাজ ছাড়া অন্যকিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি কাউকে। ফলে অনেক মুসল্লি ঢুকতে পারেনি মূল ঈদগাহ মাঠে। এ কারণে অনেককে মাঠের আশপাশের রাস্তায় নামাজ আদায় করতে দেখা যায়।

ঈদ জামাতকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রাখতে পুরো শহরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। ভোরের আলো ফোটার আগেই শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ধরনের যানবাহন চলাচল। ফলে মুসল্লিদের পায়ে হেঁটে শোলাকিয়া মাঠে যেতে হয়। শোলাকিয়া মাঠ ও আশপাশের এলাকায় কার্যকর করা হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোন উৎসব ঘিরে এতটা আটোসাটো ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিকট অতীতে দেখেনি শহরবাসী। এতসব নিরাপত্তাজনিত ভোগান্তিও হাসিমুখে মেনে নিতে দেখা যায় মুসল্লিদের।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও দেশের কয়েকটি স্থানে হামলা এবং এর আগে ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনা মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তার বিষয়গুলো সাজানো হয়েছিল। আমাদের লক্ষ ছিল শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত। সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া মুসল্লিদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষকে সামলাতে একবারের জন্যও পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়নি। সবাই ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জামাতে অংশ নিয়েছেন।

শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে এবার পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, এক হাজার ২০০ পুলিশ, ১০০ র‌্যাব, এপিবিএন ও বিপুল সংখ্যক আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিশ্চিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে বসানো সিসি ক্যামেরা ও ১২টি ওয়াচ টাওয়ার। এবার সুর্নিদিষ্ট ৩২টি গেট দিয়ে দেহ তল্লাশির পর মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় মুসল্লিরা। নজদারিতে আকাশে টহল দিয়ে বেড়ায় ড্রোন ক্যামেরা। মাঠের নিরাপত্তায় প্রস্তুত রাখা হয় মাইন সুপিং ও বোমা নিস্ক্রিয়করণ দল। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হয় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। আর প্রথমবারের মতো ওয়াচ টাওয়ারগুলোতে স্নাইপিং রাইফেল নিয়ে দায়িত্ব পালন করে র‌্যাবের স্নাইপাররা।

২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর থেকে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ঈদ জামাতের আয়োজন করছে প্রশাসন। মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত এক মাস ধরে চলে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।

এ উপলক্ষে শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোরণ। রাস্তার দু’পাশে টাঙানো হয় রঙ-বেরঙের পতাকা ও ব্যানার। সকালে দুটি বিশেষ ট্রেন ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে কিশোরগঞ্জে আসে।

রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সঙ্কেত দেওয়া হয়। গুলির শব্দের সঙ্কেত পেয়ে শুরু হয় ঈদের জামাত।

জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

সাধারণ মুসল্লিদের বিশ্বাস বেশি লোক একসাথে নামাজ পড়ে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। সে কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করতে আসেন।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৩১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ জুন ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।