বিবিএনিউজ.নেট | শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 770 বার পঠিত
বাজারে গিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার দিন শেষ হয়ে আসছে। নানা ব্যস্ততার মাঝে সময় বাঁচাতে মানুষ দারস্থ হচ্ছে ইন্টারনেটের কাছে। অনলাইনে বসে এক ক্লিকেই দেওয়া যায় অর্ডার। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য চলে আসছে ঠিকানায়।
খাবার থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার তো আছেই, চাইলে কিনে ফেলা যায় গাড়ি, বাড়ি, বিমান বা ট্রেনের টিকিটসহ সবকিছুই। অনলাইনে কেনাকাটার এই বিষয়টিকেই বলা হয় ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স।
নানা সুবিধার কারণে পুরো বিশ্বে দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে ই-কমার্স। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই সেবা গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এদেশেও দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইনে কেনাকাটা।
সম্প্রতি আঙ্কটাড (বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সম্মেলন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের বিক্রি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এই হিসাবের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-ক্যাব বলছে, বাংলাদেশে এই বিক্রির পরিমাণ আরও বেশি। আঙ্কটাডের দেওয়া তথ্যের প্রায় দ্বিগুণ, ২৫ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ১-৫ এপ্রিল বৈশ্বিকভাবে ই-কমার্স সপ্তাহ পালন করা হয়। তবে বাংলাদেশে পালিত হয় ৭-১৪ এপ্রিল। আর ই-কমার্স দিবস পালন করা হয় ৭ এপ্রিল।
আঙ্কটাড বৈশ্বিক ই-কমার্স সপ্তাহ পালনকালে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে ‘গ্লোবাল ই-কমার্স সেল’ ১৩ শতাংশ বেড়েছে যার আর্থিক মূল্য ২৯ ট্রিলিয়ন ডলার। যদিও ইন্টারনেটের বেশিরভাগ ক্রেতাই দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে থাকে। তবে ২০১৫ সালে ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য কেনার পরিমাণ বেড়েছে ১৫ শতাংশ। যা ২০১৭ সালে বেড়েছে ২১ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়েছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর ভিত্তি করে।
এতে করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিজনেস টু কনজিউমার বা বি-টু-সি সেল পৌঁছে গেছে ৪১২ বিলিয়ন ডলারে। এক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে ৪ শতাংশ। এ বিষয়ে ইউএনসিটিএডি (বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সম্মেলন)-এর মহাসচিব মুখিসা কিতুইয়ি বলেন, ‘এসব সংখ্যা দেখেই বোঝা যায় যে রফতানির সুযোগ তৈরি করছে ই-কমার্স। কিন্তু প্রশ্ন হলো উন্নয়নশীল দেশগুলো কি এই সুযোগ লুফে নিতে তৈরি আছে?’
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের স্থায়ী সদর সফতরে ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ‘ই-কমার্স সপ্তাহে’ আলোচনা করা হবে।
এবারের ই-কমার্স সপ্তাহে অংশগ্রহণকারী হিসেবে থাকছে ১২০টি দেশের এক হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী। ‘ফ্রম ডিজিটালাইজেশন টু ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পঞ্চমবারের মতো এই বৈশ্বিক আসর বসেছে। চলবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
এদিকে ই-ক্যাব (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এর সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ২০১৭-২০১৮ সালে দেশে ই-কমার্সের বিক্রি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। বৈশ্বিক ই-কমার্স সপ্তাহ উপলক্ষে আমরা দেশব্যাপী ডাকঘরগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে ই-কমার্স মেলা করছি। আমাদের বিশেষ দুটি আয়োজন থাকবে। ৭ এপ্রিল রাজশাহীতে এবং ১৩ এপ্রিল সিলেটে ই-কমার্স মেলায় বিশেষ আয়োজন থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য। সারাদেশে মেলা হওয়ায় গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে।
এরই মধ্যে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা দেশীয় বাজার নষ্ট করতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। বাজারদরের চেয়ে কম দামে ই-কমার্স সাইটে পণ্য বিক্রি করছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে না। এরই মধ্যে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাজারে।
এসব বিষয়ে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাগডুম ডট কমের নির্বাহী চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘বর্তমান সময়ের তুলনায় দেশে ই-কমার্সের বাজার আরও বড় হওয়া উচিত। বছরে বছরে দেশের ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধি হলেও এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল অংকের বিনিয়োগ করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য বাজার থেকে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিতাড়িত করা। এটা করতে পারলে বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে জাঁকিয়ে ব্যবসা করতে পারবে। ই-কমার্স নীতিমালা পুরোপুরিভাবে না মানায় এই সমস্যা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
Posted ১২:০৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed