রবিবার ২০ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x
১৫৪ কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদান

বোনাস শেয়ারে ঝুঁকিতে বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজার ডেস্ক   |   বুধবার, ০৯ জানুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   1160 বার পঠিত

বোনাস শেয়ারে ঝুঁকিতে বিনিয়োগকারীরা

বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে শেয়ার। এরই মধ্যে এসব বোনাস লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের পোর্টফোলিওতে জমা হতে শুরু করেছে। এই শেয়ারগুলো সব জমা হলে বাজারে শেয়ার সংখ্যা বাড়বে প্রায় ৩৫৫ কোটি, যার মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। এ পরিমাণ শেয়ার বৃদ্ধির কারণে বাজার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে ব্যাংক খাতের ২০, আর্থিক খাতের ১২, প্রকৌশল খাতের ২৩, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ছয়, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সাত, টেক্সটাইল খাতের ২৯, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৪, সার্ভিস অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট খাতের এক, সিমেন্ট খাতের দুই, আইটি খাতের চার, ট্যানারি খাতের দুই, সিরামিক খাতের তিন, ইন্স্যুরেন্স খাতের ২৪ ও বিবিধ খাতের সাতটিসহ মোট ১৫৪ কোম্পানি ৩৫৫ কোটি ৭৬ লাখ বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে। এসব শেয়ারের মাধ্যমে তিন হাজার ৫৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মোট ১৪২ কোম্পানি ২৭৭ কোটি ৬৮ লাখ বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে দুই হাজার ৭৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূলধন বৃদ্ধি করে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বোনাস লভ্যাংশের মাধ্যমে যে পরিমাণ নতুন শেয়ার আসছে, তা বাজারের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ নতুন শেয়ারের জোগান বাড়লে এর বিপরীতে চাহিদা খুব কম থাকবে। এতে শেয়ারের দর কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ যেসব কোম্পানি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে, তাদের বেশিরভাই কোম্পানিরই শেয়ার চাহিদা এমনিতেই কম। এর মধ্যে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বেশিরভাগ কোম্পানিই চালাকি করে বোনাস শেয়ার ইস্যু করে। পরবর্তীকালে তারা কোম্পানির উন্নয়নে কোনো কাজ করে না। ফলে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দুর্বল কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার দেওয়া হলে তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, এ বছর যে পরিমাণ বোনাস শেয়ার যোগ হবে, তা বাজারের জন্য ভালো নাও হতে পারে। কারণ দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কেউ কিনতে চান না। যে কারণে এসব শেয়ারের দর কমতে থাকে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন শেয়ারহোল্ডাররা। বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করব, যারা বেশি বোনাস লভ্যাংশ দেয়, সেসব কোম্পানি থেকে দূরে থাকতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক পরিচালক এ প্রসঙ্গে বলেন, বোনাস শেয়ার বাজারে আসায় যে পরিমাণ শেয়ারের জোগান বাড়বে, সে পরিমাণ চাহিদা থাকবে না। কারণ কোনো কোম্পানির শেয়ার যখন বেড়ে যায়, সে কোম্পানির শেয়ারদর তখন কমে। বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার জন্য নীতিমালা থাকা উচিত। এটা না থাকায় কোম্পানিগুলোকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, বেশিরভাগ কোম্পানি দায় সারার জন্য শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার ধরিয়ে দেয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, যেসব কোম্পানির বোনাস শেয়ার দেওয়ার প্রবণতা বেশি, সেসব কোম্পানির অধিকাংশের আর্থিক অবস্থা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। তাই বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। তাদের মতে, বোনাস শেয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর যখন সার্বিক পুঁজিবাজার পরিস্থিতি খুব নাজুক থাকে। দেশের পুঁজিবাজারে এখন সে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজার পরিস্থিতি খুবই বৈরী। এ সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারের সূচক কমার পাশাপাশি কমছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। তাই দর হারিয়ে নাগালে থাকলেও তা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এর মূল কারণ শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি না হওয়া।

তারা বলছেন, এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর বোনাস শেয়ার প্রদান বিমাতাসুলভ আচরণ। নিজেদের স্বার্থ বাঁচাতে কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার ইস্যু করে বিপদে ফেলছে বিনিয়োগকারীদের। এতে শুধু বিনিয়োগকারীই ঝুঁকিতে পড়ছেন না, ঝুঁকিতে পড়ছে সার্বিক বাজারও।

Facebook Comments Box

Posted ১২:০০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৯ জানুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।