
এস জেড ইসলাম | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১ | প্রিন্ট | 590 বার পঠিত
জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে আইন অনুযায়ী প্রতিবছর অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট দিতে হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র (আইডিআরএ) কাছে। কিন্তু সে আইন লঙ্ঘন করে ২০১৩ সাল থেকে এই প্রতিবেদন দাখিল বন্ধ রেখেছে বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। অব্যাহত আইন ভাঙ্গায় প্রতিষ্ঠানটিকে শোকজ ও জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে ব্যক্তির অবহেলার দায় গ্রাহক নেবে না বলে জানিয়েছেন কোম্পানির সিইও।
বীমা আইন-২০১০ এর ৩০ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে বছরে অন্তত একবার অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন বা দায়মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরী করতে হয়। একই আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী পরবর্তী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ প্রতিবেদন তৈরীর ৯ মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দাখিল করতে হয়। কিন্তু ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স বীমা আইনের উল্লিখিত ধারাগুলো পরিপালন করেনি। ফলে ধারা-১৩০ এর (ক) ও (খ) এর সাথে সামঞ্জস্য থাকায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা এবং লঙ্ঘন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনের জন্য সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া ধারা ১৩৪ অনুসারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা ও অব্যাহত লঙ্ঘনে প্রতিদিনের জন্য সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। ফলে কোম্পানির মোট জরিমানার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এমন প্রেক্ষাপটে আইডিআরএর সদস্য (আইন) মো. দলিল উদ্দিনকে সভাপতি করে আইন অনুবিভাগ ও লাইফ অনুবিভাগের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে শুনানির আয়োজন করে।
এদিকে আইন লঙ্ঘনে কোম্পানির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) একরামুল আমীনকে ব্যক্তিগতভাবে জরিমানা করে আইডিআরএ। জরিমানা মওকুফের আবেদন জানিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সংস্থার কাছে চিঠি দেন তিনি। পাশাপাশি অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন না করার কারণও উল্লেখ করেন। এছাড়া দেশে অ্যাকচুয়ারি সংকটকেও এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেন তিনি।
এরপরও ভ্যালুয়েশনের ব্যাপারে তৎকালীন অ্যাকচুয়ারিকে বারবার অনুরোধ জানালে তিনি সাড়া দেননি। এতে সময় ক্ষেপণ হয়। পরবর্তীতে অ্যাকচুয়ারি জাফর হালিমের কাছে চিঠি পাঠালে তিনি এতে সাড়া দেন। তবে তিনি যে পারিশ্রমিক দাবী করেন তা কোম্পানির জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল বলে উল্লেখ করেন একরামুল আমীন। এরপর অ্যাকচুয়ারি আফসার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করে পারিশ্রমিক নির্ধারণে উভয় পক্ষ সম্মত হলে তাকে অ্যাকচুয়ারি হিসেবে নিয়োগ করে কোম্পানি। এতে বেশ কিছুট সময় ক্ষেপন হয়। তাছাড়া উক্ত সময়ের প্রথম তিন বছরে কোম্পানিতে কোন কার্যকরি লাইফ ফান্ড না থাকাকেও কারণ হিসেবে তুলে ধরেন একরামুল আমীন।
এ বিষয়ে কোম্পানির বর্তমান সিইও সোলায়মান হোসেন বলেন, ‘জরিমানার টাকা গ্রাহকের আমানত থেকেই তো দিতে হবে। কোন ব্যক্তি যদি দায়িত্বে থেকে অবহেলা করেন তাহলে তার অবহেলার দায় কোম্পানি বা গ্রাহক নিতে পারে না।’ তবে কি আইডিআরএকে জরিমানা পরিশোধ করবেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘গ্রাহকের টাকা থেকে জরিমানা পরিশোধ করা হবে না। জরিমানা মওকুফে আমরা আইডিআরএর কাছে ইতোমধ্যে আপীল করেছি। যারা এর সাথে জড়িত তাদেরই এর দায়ভার নিতে হবে।’
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সোলায়মান হোসেন জানান, ‘আমি ২০১৯ সালে যোগদানের পর কোম্পানির উন্নতির প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের লাইফ ফান্ড রয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে আমাদের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম হয়েছে ১৪ কোটি টাকা এবং নবায়ন প্রিমিয়াম ছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা। আশা করি অতি শিঘ্রই আমরা আইপিওতে আসতে পারবো।’
Posted ১১:০২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy