শনিবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x

ব্যাংকগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে, হস্তক্ষেপ করবে না বিএবি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১৫ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   421 বার পঠিত

ব্যাংকগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে, হস্তক্ষেপ করবে না বিএবি

বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা একসঙ্গে বসেছিলাম। একটি ইনফর্মাল আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা যায় তার একটা সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোনো ব্যাংককে এ চিঠি বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কারণ, ব্যাংক কীভাবে চলবে সেটা ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তাদের বিনিয়োগ ও স্যালারির ধরনও ভিন্ন। ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে। এক্ষেত্রে বিএবি কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
এর আগে ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কমানোর বিষয়ে ব্যাংকে ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। একই সঙ্গে কর্মীদের পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেন্টিভ বোনাস বন্ধ করাসহ ব্যাংক বাঁচাতে ১৩ দফা সুপারিশ করেছিল সংগঠনটি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাংকে ব্যাংকে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনার ঝড়। এমন পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতা কমানোর সুপারিশ থেকে সরে এসেছে বিএবি।

এমটিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন, অনেক ব্যাংকার মারা গেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময় বেতন-ভাতা কমানো কেনোমতেই ঠিক হবে না। এতে করে তাদের মনোবল ভেঙে যাবে। কর্মস্পৃহাও কমে যাবে

এদিকে ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা বেতন কমাতে চায় এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় সোমবার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

একাধিক ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার মহামারিতে এমনিতেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যেকোনো সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এখন যদি ব্যাংক বেতন-ভাতা কমায় তাহলে তাদের ওপর এটি বাড়তি মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ ছাড়া কিছুই না।

তারা জানান, মাসিক বেতন একটা বাজেটের মধ্য দিয়ে খরচ করতে হয়। এখন হঠাৎ করে বেতন কমানো হলে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হবে। ব্যাংকগুলো প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার মুনাফা করে। যার পেছনে কাজ করেন কর্মীরাই। ব্যাংক তো লসে নেই যে কর্মীর বেতন-ভাতা কমাতে হবে। মহামারির কারণে ব্যবসা কিছুটা কমবে। তবে লোকসান হবে না। তাই এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এই মুহূর্তে কর্মী ছাঁটাই বা বেতন-ভাতা না কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে অনেক ব্যাংকার ও তাদের পরিবার আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকাররা কর্মস্থলে আসছেন, গ্রাহকের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময় ব্যাংকারদের বেতন-ভাতা কমানো কোনো মতেই ঠিক হবে না। এতে তাদের মনোবল ভেঙে যাবে। কর্মস্পৃহাও কমে যাবে।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন বলেন, ১০০ টাকার আয়ে ৬৬ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। ব্যাংক বাঁচাতে ব্যয় কমানো ছাড়া উপায় নেই। কর্মীদের ছাঁটাই না করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২২ জুন পর্ষদ সভায় এটি চূড়ান্ত হবে

তিনি বলেন, বেতন-ভাতা কমানোর মতো সিদ্ধান্ত এখনই না নিয়ে ব্যাংকের অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে মহামারির এ সময় ব্যয় কমানো যেতে পারে। তবে এসব সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ। আশা করি ব্যাংকের ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা না কমিয়ে অন্য বিষয়গুলো প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবে পরিচালনা পর্ষদ বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেতন-ভাতা কমানোসহ ১৩ দফা সুপারিশ করে বিএবির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়।

সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যাংকগুলোতে চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশও করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপ-শাখা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

বিএবি বলেছে, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংককে সচল রাখার জন্য প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিএবি।

১৩ দফা সুপারিশ সম্বলিত চিঠিতে আরও আছে, সব প্রকার স্থায়ী সম্পদ ক্রয় বন্ধ রাখা, কর্মীদের লোকাল ও বিদেশি প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা, সব বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা, সব প্রকার সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখা, পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব প্রকার বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখা, সব কাস্টমার গেট-টুগেদার বন্ধ রাখা।

চিঠিতে বিএবি বলেছে, কর্মকর্তাদের গেট-টুগেদার ও ব্যবস্থাপক সম্মেলন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে এসব সম্মেলন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নিজস্ব পরিমণ্ডলে করতে হবে। এ ছাড়া বড় ধরনের ব্যয় (আইটি সম্পর্কিত, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ক্রয়) আপাতত সীমিত রাখা এবং অন্য সব ব্যয় কমিয়ে আনা।

ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। কমে গেছে বিনিয়োগের ওপর সুদের হারও। ব্যাংকের ঋণ আদায় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতির কারণে এ সুপারিশ করা হয়েছে- বলছে বিএবি।

এদিকে বেতন-ভাতা কমাতে বেসরকারি সব ব্যাংকের ওপর বিএবি তার নির্দেশনা চাপানোর চেষ্টা করছিল। তবে এতে ব্যাংক কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হওয়ায় সে অবস্থা থেকে পিছু হটে ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠনটি। বিএবি এমন নির্দেশনা দিতে পারে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পর তারা এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রয়েছে।

যদিও ব্যয় কমাতে বিভিন্ন ব্যাংক ইতোমধ্যে কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কর্মীদের ১৬ শতাংশ বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন বলেন, করোনার কারণে এখন নতুন কোনো ব্যবসা নেই। অন্যদিকে সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনায় আয় কমে গেছে। ব্যয় বেড়ে ৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ১০০ টাকার আয়ে ৬৬ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এখন ব্যাংক বাঁচাতে ব্যয় কমানো ছাড়া উপায় নেই। এসব বিবেচনায় কর্মীদের চাকরি থেকে ছাঁটাই না করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২২ জুন পর্ষদ সভায় এটি চূড়ান্ত হবে।

এদিকে গত মাস থেকেই এন্ট্রি লেভেল থেকে এমডি পর্যন্ত ৩ ও ৫ শতাংশ হারে বেতন-ভাতা কর্তন শুরু করেছে বেসরকারি এবি ব্যাংক। একই পথে হাঁটতে যাচ্ছে বিএবি চেযারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারের এক্সিম ব্যাংকও। ব্যাংকটি ১২ শতাংশের মতো বেতন-ভাতা কমাতে চাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত ৫৯টি ব্যাংকে বর্তমানে জনবল রয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকে আছেন এক লাখ ৯ হাজার ১২৭ জন। বিদেশি ব্যাংকে তিন হাজার ৮৫৮ জন। সরকারি ব্যাংকে ৬৫ হাজার ৪৪৫ জন।

Facebook Comments Box

Posted ৯:১৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11629 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।