মঙ্গলবার ১৭ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x
শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব

ভয়াবহ সংকটে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত

আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্উদ   |   রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   608 বার পঠিত

ভয়াবহ সংকটে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত ভয়াবহ সংকটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই এ খাতের ১২টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান নামেই বেঁচে আছে। এক্ষেত্রে দেশে ব্যাংকিং খাতের সমালোচনা হলেও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থা সেভাবে সামনে আসছে না। নীরবেই রক্তশূন্য হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।

খেলাপি ঋণ, মূলধন সংকট, প্রভিশন ঘাটতি, গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে না পারাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্ধারিত নগদ জমা (সিআরআর) সংরক্ষণ করতেও পারছে না তারা। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ৯৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এসব টাকার অধিকাংশই কোম্পানির মালিকরা নামে-বেনামে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।

এরই মধ্যে পিপলস লিজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরো খাতে যা এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি করেছে। এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারেও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুর্বল এসব প্রতিষ্ঠান যত দ্রুত সম্ভব বিক্রি করে গ্রাহককে টাকা দেয়া যাবে, ততই মঙ্গল।

এদিকে শুধু গ্রাহক নয়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও সংকট সৃষ্টি করছে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ফলে কোনো কোনো কোম্পানির ১০ টাকার শেয়ারের দাম ৩ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ একটি সিগারেটের দামে এ কোম্পানির ৪টি শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে।

এ ছাড়াও ফারইস্ট ফাইন্যান্সের শেয়ারের সর্বশেষ মূল্য ৩ টাকা, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ৫ টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬ টাকা ও ফাস ফাইন্যান্সের প্রতিটি শেয়ার ৭ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

বর্তমানে সারা দেশে ৩৪টি ব্যাংকবহির্ভ‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রাহকের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের সর্বশেষ স্থিতি ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বেশির ভাগ বিতরণ করা হয়েছে আবাসন খাতে। প্রতিবছরই এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে ফাইন্যান্সিয়াল স্টাবিলিটি রিপোর্ট নামে একটি প্রকাশনা বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সর্বশেষ প্রকাশনায় দেখা গেছে, ১ থেকে ৫ পর্যন্ত অর্থাৎ ভাল থেকে খারাপ বিবেচনা করে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া হলুদ তালিকায় বা সহনীয় অবস্থায় রয়েছে ১৮টি প্রতিষ্ঠান। মাত্র ৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভালো বা সবুজ তালিকায়। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থার বিষয়টি আলোচনায় এলেও নীরবে প্রায় অস্তিত্বহীন হচ্ছে আর্থিক খাত।

মূলত খেলাপি ঋণ, আর্থিক সক্ষমতা, আমানত ও ঋণের ধরন বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ম‚ল্যায়ন করা হয়। ৩১ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে মোট ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (বিএফআইসি) খেলাপি ঋণ ৯৬ শতাংশ। ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে হাজার কোটি টাকা ঋণই প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের কাছে। অবসায়ন হতে যাওয়া পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ ৬৮ শতাংশ। ফার্স্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশ। এসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম। হাজার হাজার গ্রাহক আমানত ফিরে পাওয়ার জন্য হাহাকার করছেন।

আমানত ফেরত দেয়া তো দূরের কথা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতেই পারছে না এসব প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও প্রিমিয়ার লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ ২৯ শতাংশ, অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (ইডকল) খেলাপি ঋণ ২৪, প্রাইম ফাইন্যান্সের ১৮, ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ১৭, ফাস ফাইন্যান্সের ১৬, মাইডাস ফাইন্যান্সের ১৫, জিএসপি ফাইন্যান্সের ১৪, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ১১, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ১০, বে-লিজিংয়ের ১০ ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ১০ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কোম্পানি অবসায়ন একমাত্র পথ। যত দ্রুত সম্ভব এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করে গ্রাহককে টাকা ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি গ্রাহকের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে নতুন আমানত আসার সম্ভাবনা নেই। তার মতে, টাকা ফেরত দেয়ার মতো সম্পদ কোম্পানির না থাকলে গ্রাহকের ক্ষতি হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। তবে দিন যত যাবে, ক্ষতির পরিমাণ ততই বাড়বে।

Facebook Comments Box

Posted ২:১৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।