রবিবার ১৬ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে এবি ব্যাংকে

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   857 বার পঠিত

বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে এবি ব্যাংকে

পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে বেসরকারি এবি ব্যাংক লিমিটেডের। এরই মধ্যে ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ (রুমি) আলী। শিগগিরই তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। পরিবর্তন আসছে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায়ও। সবকিছু ঠিক থাকলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দেবেন মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদ। বর্তমানে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় এ পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে বেসরকারি খাতের প্রথম ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এবি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুহাম্মদ এ (রুমি) আলী। তিনি বলেন, এবি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছি। ব্যাংকটির বর্তমান পরিস্থিতি কী, সেটি এখনো জানি না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞাত হতে পারব।

রুমি আলী বলেন, এবি ব্যাংক দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংক। গত কয়েক বছরে এ ব্যাংকের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা শুনেছি। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে অতীত গৌরব ফিরে পেয়ে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে।

ব্যাংকটিকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবেই সফল ব্যাংকার মুহাম্মদ এ (রুমি) আলীকে বেছে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর রুমি আলী আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গঠিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিয়াক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে। এর আগে বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ দেশে-বিদেশে বহুজাতিক বিভিন্ন ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছেন।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদের। তিনি ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবি) অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হোলসেল ব্যাংকিংয়ের প্রধান ছিলেন।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদ এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, সময় হলে সবাইকে বিষয়টি জানানো হবে।

তিন বছর ধরে অস্থিরতা চলছে এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায়। এর মধ্যে দুই দফায় পরিবর্তন এসেছে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এমডি পদে। মাত্র ১৭ মাস দায়িত্ব পালন করে গত বছরের অক্টোবরে পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির এমডি মসিউর রহমান চৌধুরী। ব্যাংকটির সাবেক এমডি কাইজার আহমেদ চৌধুরী, এম ফজলুর রহমান, শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, মসিউর রহমান চৌধুরীসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বড় অংশই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলার আসামি। এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়ছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৯৬৭ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ২০ শতাংশ নাম লিখিয়েছে খেলাপির খাতায়। এর বাইরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় অবলোপন করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।

সূত্র বলছে, গত দুই বছর ধরেই এবি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কার্যত বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ঋণের কিস্তি আদায় না হওয়ায় সুদ যোগ হয়ে ব্যাংকটির ঋণ বেড়েছে। যে হারে ব্যাংক থেকে আমানত বেরিয়েছে, সে হারে যুক্ত হয়নি। এতে এবি ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের অনুপাত (এডি রেশিও) বেড়েই চলছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকটির এডি রেশিও দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকটির এডি রেশিও ৮৫ শতাংশের নিচে থাকার কথা।

এবি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ব্যাংকটির আমানত না বেড়ে উল্টো কমেছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ২৩ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এবি ব্যাংকের আমানত ২২ হাজার ৯৪১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। একই সময়ে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। মূলত অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করে এডি রেশিও কমানোর চেষ্টা করছে ব্যাংকটি।

এবি ব্যাংকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত দুই বছরে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ প্রায় বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বিতরণকৃত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় মূল ঋণের সঙ্গে সুদ যুক্ত হয়ে এডি রেশিও বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শাখা ব্যবস্থাপকদের ১০ শতাংশ আমানত বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণ থেকে আদায় বাড়ানোর ব্যাপারেও কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অন্যান্য সূচকের নিম্নমুখিতা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবি ব্যাংকের মুনাফায়। ব্যাংকটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন প্রান্তিকে মাত্র ২৫০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করে। যদিও ২০১৭ সালের একই সময়ে ৩৭৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। এর আগের বছরগুলোয় ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা অনেক বেশি ছিল। ২০১৮ সালের আর্থিক প্রতিবেদন এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি ব্যাংকটি।

বিপর্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবি ব্যাংকের শেয়ারদরে। দুই বছর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দর ২৫ টাকার বেশি থাকলেও বর্তমানে তা ১১ টাকায় নেমে এসেছে।

সংকটের কারণে মূলধন ও সঞ্চিতি ঘাটতিতেও পড়েছে এবি ব্যাংক। গত ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল ১০১ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটি ১১২ কোটি টাকা সঞ্চিতি ঘাটতিতে ছিল। তবে মূলধন ঘাটতি পূরণে ৫০০ কোটি টাকার নন-কনভার্টিবল ফ্লোটিং রেট সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। এরই মধ্যে বন্ড ইস্যুতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেলে আগামী জুনে বন্ড বিক্রির অর্থ এবি ব্যাংকের মূলধনে যুক্ত হবে।

Facebook Comments Box
top-1

Posted ২:২৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।