বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 440 বার পঠিত
স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভারতে পুরনো স্বর্ণ বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। একই কারণে জুন প্রান্তিকে মূল্যবান ধাতুটি বিক্রিতে ভারতীয় স্বর্ণ ব্যবহারকারীদের হিড়িক পড়ে। এ সময়ে ভারতীয় স্বর্ণ ব্যবহারকারীরা মোট ৩৭ দশমিক ৯ টন পুরনো স্বর্ণ বিক্রি করেছেন, যা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পর প্রথম কোনো প্রান্তিকে সর্বোচ্চ। সে সময় দেশটির ব্যবহারকারীরা ৩৯ টন পুরনো স্বর্ণ বিক্রি করেছিলো। ওয়ার্ল্ভ্র গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) গোল্ড ডিমান্ড ট্রেন্ডসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৪০০ ডলার অতিক্রম করে, যা ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর পর থেকে মূল্যবান ধাতুটির দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এর ওপর দেশটিতে স্বর্ণ আমদানিতে আরোপিত শুল্ক ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে স্বর্ণ আমদানি এবং তৈরিতে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, বার্ষিক হিসাবে এ বছর দেশটিতে পুরনো স্বর্ণালংকারের বিক্রি সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। আর বছর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১০০ টনে।
এর আগে ২০১২ সালে ব্যবহার করা স্বর্ণালংকার মজুদ দাঁড়িয়েছিল ১১৮ টনে। সে সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবান ধাতুটির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকজন স্বর্ণালংকার বিক্রি করে নগদ টাকা সংগ্রহে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছিল।
ডব্লিউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর ভারতে ইউনিয়ন বাজেটের পর স্বর্ণ চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা কম দামে স্বর্ণ বিক্রি করতে পারছেন। এমনকি মুম্বাইয়ে স্বর্ণের স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণে ২৩-২৫ ডলার পর্যন্ত ছাড় দিয়ে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা, যা ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ। স্পট মূল্য ছাড়ের এ পরিমাণ ১০ গ্রাম স্বর্ণ আমদানি খরচের চেয়ে বেশি।
ডব্লিউজিসির ভারতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি আর সুমাসুনদারাম বলেন, আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ভারতীয় স্বর্ণের বাজারে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে, বলে মনে করছি না। যদিও চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকেও বাড়তি শুল্কের বড় প্রভাব থাকবে স্বর্ণের বাজারে।
অনেকগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান সামনে রেখে ভারতে জুন প্রান্তিকে স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হয় বলে মনে করেন পি আর সুমাসুনদারাম। তার মতে, এপ্রিল-মে মাসে দাম কমে যাওয়ায় এপ্রিল থেকে জুনে ভারতে স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আর সে কারণে এ সময়ে দেশটির ব্যবহারকারীরা তাদের পুরনো স্বর্ণ বিক্রির মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন। যদিও স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি এবং আমদানি শুল্ক কমে যাওয়ার প্রত্যাশায় জুন প্রান্তিক শেষে দেশটির স্বর্ণের বাজার স্থিতিশীল হয়েছিল।
ডব্লিউজিসির প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছরে ভারতে অভ্যন্তরীণ স্বর্ণের চাহিদা ৭৫০ থেকে ৮৫০ টনের মধ্যে থাকবে। এর আগে গত বছর দেশটিতে স্বর্ণের চাহিদা ছিল ৭৬০ টন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে দেশটিতে স্বর্ণের চাহিদা ছিল ৭৭১ টন।
চলতি বছরের এপ্রিল এবং মে মাসে দেশটিতে স্বর্ণের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ১৩ শতাংশ বেড়ে যায়। এ সময় দেশটিতে স্বর্ণের চাহিদা দাঁড়ায় ২১৩ দশমিক ২ টনে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে মূল্যবান ধাতুটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ১৮৯ দশমিক ২ টন।
গোল্ড ডিমান্ড ট্রেন্ড তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এবং আর্থিক বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছে। যার ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বর্ণভিত্তিক এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) এপ্রিল-জুনে স্বর্ণের মজুদ ৬৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৫৪৮ টনে দাঁড়িয়েছে, যা ছয় বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চলতি বছরের এপ্রিল-জুনে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মোট ২২৪ দশমিক ৪ টন স্বর্ণ ক্রয় করেছে। এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর চলতি বছরের প্রথমার্ধে স্বর্ণের মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭৪ দশমিক ১ টনে, যা বছরের প্রথমার্ধে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর ফলে স্বর্ণের ক্রয়ের চাহিদা ভারতের মতো উদীয়মান বাজারসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
Posted ২:০৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed