• ভয়াবহ ঝুঁকিতে অনলাইন ব্যাংকিং

    আদম মালেক | ১২ জুন ২০১৯ | ৩:৩০ পিএম

    ভয়াবহ ঝুঁকিতে অনলাইন ব্যাংকিং
    apps

    ব্যাংকিং সেবা যখন মানুষের দোরগোড়ায় তখনই সাইবার ঝুঁকিতে পড়েছে অনলাইন ব্যাংকিং। একের পর এক সাইবার হামলায় অর্থ খোয়াচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাদ পড়েনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাইবার হামলা মোকাবেলায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অপ্রতুল প্রস্তুতির কারণেই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ অনলাইন ব্যাংকিং। সম্প্রতি ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে চুরি অনলাইন ব্যাংকিংকে ভয়াবহ ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে সূত্র জানায়।

    এদিকে চোখ কপালে ওঠার মতো তথ্য এসেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। ৩ বছর আগে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আনুমানিক ২ হাজার এটিএম বুথের যন্ত্র সরবরাহ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতষ্ঠান। ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গোপন চুক্তির পরিকল্পনা করেছিল একটি হ্যাকার গ্রæপ। তিন বছর আগে ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া এক বিদেশি অপরাধী রিমান্ডে তাদের এই তথ্য দিয়েছিল। স¤প্রতি গ্রেফতার হওয়া বিদেশিদের কাছেও এই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

    সূত্র জানায়, সম্প্রতি ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৫ টি এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। সেগুলো রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেল, কাকরাইল, রামপুরার ডিআইটি সড়ক ও নিকুঞ্জ এলাকার। গত ৩১ মে প্রথমে মধ্য বাড্ডার বুথ থেকে টাকা চুরি হয়। বাকি সব বুথে চুরি হয় ১ জুন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৬ লাখ টাকা চুরির খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া আরও ৩টি বেসরকারী ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হয় বলে জানা যায়। তবে তদন্ত সংস্থা ও বাংলাদেশ কেউ এই তিন ব্যাংকের নাম প্রকাশ করেনি।

    এর আগে জালিয়াত চক্র ২০১৬ সালের ৬ থেকে ১২ ফেব্রæয়ারির মধ্যে দেশের ভেতরে ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে ১ হাজার ২০০ গ্রাহকের তথ্য চুরি করে। এর মধ্যে ৪০ জন গ্রাহকের ২০ লাখ ৫৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকেও কয়েকশ গ্রাহকের তথ্য চুরি করেছে ওই চক্র। গ্রাহকের কার্ড ক্লোন বিদেশে হলেও টাকা তোলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। । ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারিতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। খোয়া যায় ৪৯ গ্রাহকের ২০ লাখ টাকা।


    বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকগুলোর ৫২ শতাংশই তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। যার মধ্যে ১৬ শতাংশ খুবই উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে এবং ৩৬ শতাংশ উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অন্য এক গবেষণায় বলা হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা সম্পর্কে ৫০ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তাই অজ্ঞ। যার মধ্যে ২৮ শতাংশ খুবই অজ্ঞ এবং ২২ শতাংশ কিছুটা কম অজ্ঞ। এ ছাড়া সামান্য ধারণা রয়েছে ২০ শতাংশ কর্মকর্তার।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি অপারেশন এন্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ব্যাংকগুলোর আইটি বিভাগে নানা দুর্বলতা রয়েছে। এ দুর্বলতা চিহ্নিত করতে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা নিতে হবে।

    ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে আলোচিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত এবং অর্থ উদ্ধার কোনোটিই শেষ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ঘটনার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত গাফিলতি এবং সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে তথ্য দিয়েছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা
    ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আর্থিক খাতের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংকিংখাতে সাইবার হামলা অনাকাঙ্খিত। এতে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশী বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হতে হবে।

    জানা গেছে, দেশে কার্যরত ৫৭ ব্যাংকের প্রায় ১০ হাজারের অধিক শাখা এবং প্রায় ৭ হাজার ৩০০ এটিএম বুথ রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকরা অনলাইনে লেনদেন করতে পারছেন। এর বাইরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৫ কোটি ৯৮ লাখের বেশি। এর বাইরে অনেক গ্রাহক ব্যাংকগুলোর অনলাইন সেবা নিচ্ছেন। ফলে ব্যাংকিং খাতের একটি বড় অংশই চলে গেছে অনলাইনের সেবায়। এভাবেই গত এক দশকে ‘ডিজিটাল ব্যাংকিং’ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে।

    Facebook Comments Box

    বাংলাদেশ সময়: ৩:৩০ পিএম | বুধবার, ১২ জুন ২০১৯

    bankbimaarthonity.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    November 2023
    S S M T W T F
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    252627282930  
  • ফেসবুকে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি