
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ | বুধবার, ৩১ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 610 বার পঠিত
ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার ঈদের ছুটিও বাতিল করেছে সরকার। অথচ দেশে নেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জানা গেছে, তিনি বর্তমানে সপরিবারে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। এদিকে সরকারি হাসাপতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এলাকা মানিকগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সপরিবারে মালয়েশিয়া গেছেন। সাতদিন পর তার দেশে ফেরার কথা। তবে সরকারি কোনো কাজে তিনি যাননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান গত মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের জানান, ‘মন্ত্রী মানিকগঞ্জে নিজ এলাকায় বন্যার্তদের সহায়তার কাজে গেছেন। দু-একদিন পর ঢাকায় ফিরবেন। এ মুহূর্তে তিনি কোথায় আছেন তা আমার জানা নেই।’ যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীর বিদেশ সফরের বিষয়টি স্বীকার করছেন না।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২৮ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী সপরিবার মালয়েশিয়া গেছেন। টিকিট অনুযায়ী ৪ আগস্ট তাঁর ফেরার কথা। প্রসঙ্গত. এ সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডেঙ্গু ও বন্যার কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এধরনের কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। তিনি গত সপ্তাহে তাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে কক্সবাজারও ভ্রমণ করেন। গত ২৩ ও ২৪ জুলাই কক্সবাজারে হোটেল সি প্যালেস বলরুমে অনুষ্ঠিত সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবসা উন্নয়ন সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
দেশের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি ও ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার দুর্যোগের মধ্যে তিনি কীভাবে পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এ-রকম একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে কক্সবাজারে ভ্রমণ করেন তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে।
এদিকে সরকারি হাসাপতালে ফ্রি ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার নির্দেশনা সত্ত্বেও খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এলাকার সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষায় রোগীদের কাছ থেকে ফি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ল্যাব) আবদুল কুদ্দুস মাসুদ বলেন, এ পর্যন্ত ৩২ জন রোগীর পরীক্ষা করানো হয়। এর মধ্যে সাতজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ৩০০ টাকা করে ফি নেয়া হচ্ছিল। পরে পরিপত্র জারির পর থেকে বিনামূল্যে পরীক্ষা করানো হচ্ছে। আগে যাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা ফি নেয়া হয়েছিল তাদের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে।
সারাদেশের মতো মানিকগঞ্জে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট ও রি-এজেন্ট সুবিধা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানায়, জ্বর নিয়ে হাসপাতালে এসে ডেঙ্গু কিনা তা শনাক্তের পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট ও রি-এজেন্ট না থাকায় হাসপাতালের বাইরে গিয়ে প্রাইভেট প্যাথলজি সেন্টার থেকে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল আওয়াল বলেন, আগে থেকে হাসপাতালে সরকারিভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোনো প্যাথলজিক্যাল কিট ও রি-এজেন্ট ছিল না। ডেঙ্গু রোগী আসা শুরু করলে প্রথম পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের বিশেষ অনুদানে কিছু কিট ও রি-এজেন্ট কেনা হয়। গত এক সপ্তাহের পরীক্ষায় সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এখনো প্রয়োজনীয় কিট ও রি-এজেন্ট আসেনি। তবে খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে।
দেশে ডেঙ্গু রোগ সংক্রান্ত জনভোগান্তি নিরসনে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চলমান কার্যক্রম তদারক করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার নিজ দফতরে ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ গঠন করেছেন বলে মঙ্গলবার এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়। এই সেল ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার ফি-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনার কোনো প্রকার লঙ্ঘন হলে অভিযোগ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
Posted ৩:১১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩১ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed