নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬ নভেম্বর ২০২১ | ৩:৩২ অপরাহ্ণ
বীমা খাতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের প্রধান কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. মাসুদ বিশ্বাস। বীমা খাতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ করতে না পারলে চোরাকারবার, ঘুষ, দুর্নীতি, অবৈধ মাদক ব্যবসা ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ অর্থনীতির মূল স্রোতে প্রবেশের সুযোগ পাবে বলে জানান তিনি। সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বীমা খাতের ক্যামেলকোদের দুইদিন ব্যাপী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন আব্দুল্ল্যাহ হারুন পাশা, অতিরিক্ত সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; মঈনুল ইসলাম, সদস্য (প্রশাসন) আইডিআরএ; বিএম ইউসুফ আলী, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) এবং মো. মামুনুর রশীদ, জেলা প্রশাসক (কক্সবাজার)। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ, ব্যাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ এবং বীমা কোম্পানিগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
বীমা খাতে মানিলন্ডারিং অপরাধ প্রতিরোধের লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মানদন্ড বজায় রেখে প্রণীত আইন ও বিধি বিধানের পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য সকলের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
মাসুদ বিশ্বাস বলেন, বীমা খাতকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিএফআইইউ এবং আইডিআরএ’র দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। আর সে প্রয়াসেই বিএফআইইউ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যৌর্থভাবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং কক্সবাজারে দুইদিন ব্যাপী এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ তারই প্রয়াস।
বীমা খাতের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআর) সুনিদিষ্ট দায়িত্ব অপর্ণ করা হয়েছে। আর বীমা খাতকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মুক্ত রাখার জন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর আওতায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন,অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিএফআইইউ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে গঠিত কমিটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং বিধি বিধিান বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে । তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির পরামর্শ ও সহযোগিতায় কাজ করছে বিএফআইউ।
বিএফআইইউ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে ব্যাংক ,বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মানিচেঞ্জার, মানি রেমিটার, ক্যাপিটাল মার্কেট, রিয়ের এস্ট্রেট সেক্টর, কো-অপারটের সোসাইটি, চার্টর্ড অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তকর্জাতিক মানদন্ড স্থাপনকারী আন্ত:রাষ্ট্রীয় সংস্থা এএটিএফ’র তৈরিকৃত ৪০টি সুপারিশের ভিত্তিতে একটি দেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত কার্যক্রম মূল্যায়ল করা হয়ে থাকে। এপিজে কর্তৃক বাংলাদেশকে মূল্যায়ণ করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে এপিজির মূল্যায়নে বাংলাদেশ কমপ্লায়ান্ট কান্টি হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।
মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন,২০০২ সালে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধের কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৮ সাল থেকে বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহ রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা সিহেবে অন্তভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ওই সময় থেকে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কাঙ্খিত সাফল্য এখনো অর্জন হয়নি। সর্বশেষ ২০২০ সালে বিএফআইইউ কর্তৃক লাইফ ও নন লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত সিস্টেম চেক পরিদর্শনে পরিপালন কর্মকর্তার মূল্যায়ন, সেফ অ্যাসেসমেন্ট, কেওয়াইসি প্রক্রিয়া, লেনদেন মনিটরিং সন্দেহজনক রিপোর্টিং , ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কমিটমেন্ট ইত্যাদি খাতে ঘাটতি রয়েছে। বীমা খাত থেকে এসটিআর দাখিলের হার কম। বীমা খাতের প্রতি আমাদেশের দেশের মানুষের আস্তার ঘাটতি অনেক বেশি। অথচ উন্নত দেশগুলোতে বীমা খাতে তাদের জনগণের আস্তার কোনো ঘাটতি নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০১৫ সালে সর্বশেষ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশোধন করা হয়েছে এবং ২০১৯ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিধিমালা জারি করা হয়েছে। এই বিধিমালায় বিএফআইইউ কর্তৃক নতুন নতুন নির্দেশনা জারির পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে ’এএমএল/সিএফটি’ পরিপালনীয় বিষয় হালনাগাদ পরিবর্তন এসেছে। ফলে এসব বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিপালনের মাধ্যমে ’এএমএল’ রেটিং উন্নত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিএফআইইউ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরুপে সম্পাদনের নিমিত্তে এবং মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ,সিআইডি, পুলিশের সহযোগিতায় ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থার ঝুঁকি নিরুপন করা হয়েছে।
মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, অপরাধীরা সব সময়ই তাদের অপরাধলদ্ধ অর্থ লুকিয়ে রাখার জন্য নতুন কলা কৌশল অবলন্বন করেন। তাই বীমা খাতকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক অবস্থানে নিয়ে যাবার জন্য এই খাতের অপরাধীদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৫টি লাইফ এবং ৪৬টি নন লাইফসহ মোট (বীমা) ৮১টি ইন্সুরেন্স কোম্পানি রয়েছে।
তিনি বলেন, সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশ আজ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে কমপ্লায়েন্ট কান্টির স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ এশিয়ার দেশগুলোকে পেরিয়ে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সমকক্ষ অবস্থানে পৌছেছে। তবে উন্নত বিশ্বে বীমা সেক্টর দারুন ও সফলভাবে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মাঝে এখনো বীমা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে। এখানে কিছুটা আস্থার অভাব রয়েছে। অথচ বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম। আর বীমা শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৮তম।
মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, জিডিপি অনুপাতে বীমা প্রিমিয়াম প্রায় ৫ শতাংশ, এটি ইমার্জি এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। এ অবস্থায় গতানুগতিক বীমা সেবার পাশাপাশি যুগের সাথে পরিবর্তিত মানুষের চাহিদাকে চিহ্নিত করে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাস্টমাইজড বীমা পলিসি তৈরি,বীমাকে সহজ, স্বচ্ছ এবং কাস্টমারের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে হবে। অনলাইনে ও অফলাইনে তা মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:৩২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ |
৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ |
১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ |
২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |
২৯ | ৩০ |