বিবিএনিউজ.নেট | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২:৩৬ অপরাহ্ণ
মেজর (অব.) আবদুল মান্নান
বর্তমান থ্রি-জি ও ফোর-জি প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে গেছে একসময়কার টেলিফোন বেজড ইন্টারনেট ও ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস। প্রযুক্তিবিদদের মতে, বর্তমান ফোর-জি এবং আসন্ন ফাইভ-জি’র ভিড়ে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট আর দাঁড়াতেই পারবে না। এরপরও প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হলে স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্ন জাগে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন কমিউনিকেশনস লিমিটেড। যার চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন শিল্পপতি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর এর যাত্রা শুরু করে প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। কিন্তু ইন্টারনেট ও গ্রাহকসেবা ব্যর্থতার পরিক্রমায় সে আগ্রহ, বিরক্ত ও দুর্ভোগে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধই বলা চলে। কিন্তু পতনোন্মুখ এ প্রতিষ্ঠানে এরপরও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রযুক্তির সম্ভাবনা নেই, এরপরও কেন এ অহেতুক বিনিয়োগ?
বিআইএফসির অর্থ কেলেঙ্কারি :
মূলত বিনিয়োগের নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এসব কারসাজি করছেন বলে মনে করেন একাধিক বিশিষ্টজন। কেননা এর আগেও তার বিরুদ্ধে এমন আর্থিক অনিয়মে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মেজর (অব.) মান্নানের আওতাধীন সবক’টি প্রতিষ্ঠানটিই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে সাতশ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ঋণ দিয়েছেন। এ বিষয়ে গত বছরের আগস্ট মাসে মেজর (অব.) মান্নানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে কথা হয়, বিআইএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) একেএম আশফাকুর রহমান চৌধুরী এবং কোম্পানি সচিব মো. আহসান উল্লাহের সাথে। আশফাকুর রহমান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে মোট ঋণের ৯৫ শতাংশই কুঋণ। আগের পর্ষদ নিজেদের মধ্যে এ ঋণ বিতরণ করেছে। এখন তারা দিচ্ছে না। সাবেক পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা কারণ দেখিয়ে তারা স্টে অর্ডার আনে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ ধাপে সময় বাড়িয়েছে। একবার বলে, লোনের বিপরীতে বিআইএফসি তাদের ৭০০ শতাংশ ইন্টারেস্ট চার্জ করেছে। পরে আদালতের নির্দেশে একজন ইনডিপেনডেন্ট অডিটর নিয়োগ করলে ১২ শতাংশ চার্জ করা হয়েছে বলে জানান তারা। এরকম ধাপে ধাপে, ৬ মাস, ৯ মাস, ৩ মাস বৃদ্ধি করে এ পর্যন্ত এসেছে। এখন এ-রকমই আছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ইতিহাস বলে, কোনো বড় ঋণখেলাপিকে গ্রেফতার করা যায় না। বড় ধরনের পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত এককভাবে আমাদের পক্ষে বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু করা সম্ভব না। ৮শ কোটি, এক হাজার কোটি টাকা খেলাপি হওয়াতো আর ছেলেখেলা নয়। পঞ্চাশ কোটি বা একশ কোটি হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু করা যেতো। এখন যদি সরকারি ব্যাংকগুলো আমাদের সাপোর্ট দেয়, সরকারের বড় কোনো সিদ্ধান্ত আসে, সেক্ষেত্রে হয়তো কিছু করা যেতে পারে।
কোম্পানি সচিব আহসান উল্লাহ বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে। করাপ্ট হওয়ার কারণে এখন পুলিশ যদি খুঁজে না পায়, তাহলে তো বলার কিছু নেই। আমাদের কোম্পানির অ্যাকাউন্টস একেবারে স্বচ্ছ। অ্যাকাউন্টসের স্বচ্ছতার দিক দিয়ে প্রথম পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে এটাও গণ্য করতে হবে। সরকার যদি চায় তাহলে ৫ মিনিটের বিষয়, আর না চাইলে ৫ হাজার বছরেও মামলার কিছু হবে না। এখন শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক এটাকে বাঁচিয়ে রাখছে। বেতন ৫ বছর আগে যা ছিল, এখনো তাই আছে। ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে রেড জোনে। এদের ক্যাপিটালও নেই। কারো টাকা ফেরত দেয়ার ক্ষমতা নেই, দিচ্ছেও না। আমাদের প্রতিষ্ঠানসহ ৫টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়কে। বর্তমানে মেজর (অব.) মান্নানের বিরুদ্ধে বিআইএফসির মামলার অবস্থা সম্পর্কে বলেন, মামলায় তো অনেকের বিরুদ্ধেই অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আছে। কিন্তু তাদের তো খুঁজে পাওয়া যায় না। পুলিশ যদি না ধরে, তবে আমরা কি করবো? এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ কি- জানতে চাইলে বলেন, এখানে বিনিয়োগকারীরাই এখন খারাপ অবস্থায় আছে। এ প্রতিষ্ঠানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হলো ১৬ শতাংশ। বাকিগুলোর মালিক যারা, তারা তো আগেই তাদের মুনাফা নিয়ে সটকে পড়েছে। এখন অবস্থা এমন বিনিয়োগকারীদের দেখার কেউ নেই।
বিআইএফসির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আশফাকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমাদের সাম্প্রতিক পলিসি অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানকে মুনাফা দিচ্ছি না। শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক এফডিআরের বিপরীতে মুনাফা দেয়া হচ্ছে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, অর্থাৎ যখন যে ফান্ড আসে সে অনুযায়ী। বর্তমানে আমরা কোনো ডিপোজিট নিচ্ছিও না এবং লোনও দিচ্ছি না। দুই বছর ধরে এসব বন্ধ আছে। মূলত এখন প্রতিষ্ঠান বাকি ৫ শতাংশ ঋণের বিপরীতে আহরিত মুনাফা দিয়ে বেঁচে আছে। তাও তো চলা যাচ্ছে না। এক মাসের বেতন হয় তিন মাস পর। ৬ মাস ধরে বেতন বকেয়া, এ-রকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে এমন হলে তা এতোদিনে বন্ধ হয়ে যেতো। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বলে ইচ্ছে হলেই বন্ধ করে দিতে পারে না। তাই কোনোরকম লাইফ সাপোর্টে বেঁচে আছে আরকি।
উল্লেখ্য, দুদকের মামলা ছাড়াও মেজর (অব.) মান্নানের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের আগস্টে মুদ্রা পাচার আইনে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।স্ত্রী উম্মে কুলসুমের সাথে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান
কর্মী ছাঁটাই, বকেয়া গ্রাহক দাবি, অনৈতিক বিনিয়োগে বিপর্যস্ত সানফ্লাওয়ার :
এবার বীমা খাতের প্রতিষ্ঠান সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রতি বাড়িয়েছে তার হাত। অর্থ সংকটে গ্রাহকের টাকা দিতে না পারলেও এ প্রতিষ্ঠান থেকে সাত কোটি টাকা বাংলালায়নে বিনিয়োগের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানসূত্রে এমনটিই জানা গেছে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না এ বীমা কোম্পানিটি। গ্রাহকের বকেয়া রয়েছে প্রায় ৩০ কোটি থেকে ৪০ কোটি টাকা। প্রতিদিনই প্রধান কার্যালয় ও শাখা অফিসে ভিড় করছেন পাওনাদার গ্রাহক। মাত্র কয়েক হাজার টাকার জন্য অনেকে ঘুরছেন দীর্ঘসময় ধরে। বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ল²ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বগুড়া, কক্সবাজার, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকদের দাবি বকেয়া রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এছাড়া চলমান কোভিড মহামারীতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ ছিল অনেকদিন। তবে এপ্রিল ও মে মাসে বেতন দেয়া হলেও তা ছিল অর্ধেক। তাছাড়া কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে আকস্মিক ছাঁটাই করা হয়েছে। আবার তার নামে সানফ্লাওয়ারে নিজের শেয়ার বন্ধক রেখে এবি ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের টাকা ঋণ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া সানফ্লাওয়ারের তহবিল থেকেও সাত কোটি টাকা নিয়ে বাংলালায়নে বিনিয়োগ করেছেন, যা প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৬-এর ৩১নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। অথচ এ বিনিয়োগ থেকে কোনো আয় হচ্ছে না সানফ্লাওয়ার লাইফের। এছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে বিআইএফসিতে ১২ কোটি টাকা এফডিআর করা হয়েছে, যা একইভাবে বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৬-১৭ এর ২৬নং পৃষ্ঠার ১৩নং টিকায় উল্লেখ রয়েছে। এ এফডিআরের বিপরীতে বিআইএফসি লাভবান হলেও কোনো মুনাফা পাচ্ছে না সানফ্লাওয়ার লাইফ। অন্যদিকে বিআইএফসিতে এফডিআর করাটাও আইন ভঙ্গের শামিল। কেননা বীমা আইনে একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ না করতে নির্দেশ দেয়া আছে। এদিকে নিজের শেয়ার এবি ব্যাংকে মর্টগেজ রাখার পরও প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধনের টাকাও লিয়েন করে এবি ব্যাংকে রেখেছেন। এক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন ১৮ কোটি টাকা থাকার নিয়ম থাকলেও খোঁজ নিয়ে মাত্র তিন কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার :
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, নিয়মানুসারে প্রতিষ্ঠান চেয়ারম্যান হিসেবে একটি গাড়ি বরাদ্দ থাকলেও নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রতিষ্ঠানের চারটি গাড়ি ব্যবহার করছেন মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, যা নিয়মবহির্ভূত ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ অপব্যবহারের শামিল। এক্ষেত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান নিজে একটি প্রাডো ঢাকা মেট্রো-খ ১১-৮০৬৫ গাড়ি, স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান একটি নোয়াহ্ মাইক্রোবাস ঢাকা মেট্রো-গ ১৫-৭০৫৩ এবং শ্যালক রইস উদ্দিন দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। যার একটি হলো ক্লুগার ঢাকা মেট্রো-গ ১১-৮৮০১ এবং অন্যটি টয়োটা এফ প্রিমিও ঢাকা মেট্রো-ঘ ২৩-৯৩০৩।
একেএম মহিউদ্দিন, এএনএম জাহাঙ্গীর আলম, জিএম ফারুক খান (ওপরের সারিতে), রইস উদ্দিন, রোকেয়া ফেরদৌস, শাহনাজ মহিউদ্দিন (নিচের সারিতে)
পরিবারতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কবলে সানফ্লাওয়ার :
প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারভুক্ত না হওয়ায় এবং পারিবারিক বলয়ে পরিচালিত হওয়ায় এসব অনিয়মের বিষয় প্রায় অজানাই থেকে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মেজর (অব.) আবদুল মান্নান নিজে চেয়ারম্যান পদে থেকে ভাইস চেয়ারম্যান করেছেন স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নানকে। অন্যদিকে পরিচালকদের মধ্যে রইস উদ্দিন হলেন চেয়ারম্যানের ছোট শ্যালক এবং রাদিয়া রইস হলেন ছোট শ্যালকের স্ত্রী, আলহাজ একেএম মহিউদ্দিন হলেন চেয়ারম্যানের বড় শ্যালক এবং তার স্ত্রী শাহনাজ মহিউদ্দিনও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, রোকেয়া ফেরদৌস হলেন চেয়ারম্যানের বোনের মেয়ে এবং তাসনিমা মান্নান সানিয়া চেয়ারম্যানের মেয়ে। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে জিএম ফারুক খান এবং এএনএম জাহাঙ্গির আলম দু’জনই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। এর বাইরে পরিচালক না হয়েও চেয়ারম্যানের ছোট মেয়ে তানজিলা নিয়মিত বোর্ড ফি নিচ্ছেন এবং অফিসিয়াল কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে কথা হয় সানফ্লাওয়ার লাইফের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সাথে। বিআইএফসিতে এফডিআরের বিপরীতে মুনাফা না পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিআইএফসি দিচ্ছে না। প্রশান্ত কুমার কারসাজি করে নিয়ে গেছে। ওটা এখন কোর্টে মামলা আছে।’
সানফ্লাওয়ারে ফান্ড নেই অথচ এখানকার টাকা নিয়ে বাংলালায়নে বিনিয়োগ করেছেন- এরূপ জানতে চাইলে বলেন, ওটা দিয়ে বাংলালায়নের শেয়ার কেনা হয়েছে। অনেক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাংলালায়নের শেয়ার কিনেছে অনেক বেশি টাকার। সানফ্লাওয়ার তো অল্প টাকার কিনেছে। ফারইস্ট ৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। এটা শেয়ার ডিপার্টমেন্টের ওরা বলতে পারবে।
গ্রাহকের দাবি পরিশোধ না করার বিষয়ে বলেন, ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত এর আগের চার মাসের সব টাকা দিয়ে দেবো। টাকা দিতে কোম্পানির ফান্ড নেই এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কে বলেছে ফান্ড নেই। আমার এখন থেকে যে ব্যবসা হবে, সে ব্যবসায় যে ডিফারেন্স আছে, সেই ডিফারেন্স তো আমার কাছে আছে। আমরা বলেছি, কোনো পাওনাদার কবে টাকা পাবে এটা সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে জানিয়ে দাও।
মাত্র ৩৬ কোটি টাকা লাইফ ফান্ড দিয়ে কি দাবি পরিশোধ করা যাবে? এমন প্রশ্নে বলেন, সানফ্লাওয়ারের তো প্রোপার্টি আছে। প্রয়োজন হলে প্রোপার্টি বিক্রি করে পরিশোধ করবো। প্রোপার্টি নিয়েও যে মামলা আছে, এমনটা বললে জানান, কে বলেছে মামলা আছে? কোথা থেকে আপনারা এ সমস্ত খবর পান? আমার নামে নামজারি আছে। আমার সব আছে। আপনাকে বেসিক কথাটা বলি, কোনো মামলা নেই। আমি এখন চাইলেও তো ওটা ৫০ কোটি টাকায় বিক্রি করতে পারি। এ প্রসঙ্গে জানা যায়, ২০০৪ সালে মেজর (অব.) মান্নানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের (সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশন) নামে ৩৩ কাঠা জমি কবলা করা হয় রাজধানীর দৈনিক বাংলা এলাকায়। জমি ক্রয়ে প্রতিটি কোম্পানি ৪ কোটি টাকা করে মোট ১২ কোটি টাকা দেয়। জমি ক্রয় করলেও তা দখলে নেই। এ নিয়ে মামলা চলছে। মূলত জমি কেনার পূর্ব থেকেই এ নিয়ে মামলা ছিল। জেনেশুনে এমন জমি কেন কবলা করা হলো তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
পরিবার-স্বজন ব্যক্তিগত কাজে কোম্পানির গাড়ি ব্যবহার করছে, এমনটা জানালে বলেন, আমার শ্যালক তো পরিচালক। অফিসের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে পরিচালকরা ব্যবহার করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, নিশ্চয়ই বিধান আছে। না হলে তারা চলবে কিভাবে?
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, স্বতন্ত্র পরিচালক আত্মীয়তার সূত্রে জড়িত থাকায় পরিবারতন্ত্র চলছে কিনা- এমন প্রশ্নে বলেন, কোম্পানি আইনে তো পরিচালক হতে নিষেধ নেই। তাছাড়া আমার মেয়ে, স্ত্রী মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ারও নেই। এটা আইনমতোই হয়েছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? এছাড়া কর্মী ছাঁটাই প্রসঙ্গে বলেন, এটা ম্যানেজমেন্ট করেছে। কোম্পানিতে অতিরিক্ত লোক ছিল, তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। আইডিআরএ বলেছে ১৬ কোটি টাকা খরচ কমাতে হবে। আমরা কমাতে পারছি না। এরপর আমরা লোক ছাঁটাই করেছি। এরপরও আমাদের খরচ অনেক বেশি। ১৬ কোটি থেকে ১৭ কোটি টাকা খরচ করেছে ম্যানেজমেন্ট। আইডিআরএ’র পরামর্শে আমরা লোক কমিয়েছি। এরপরও আমাদের লোক অনেক বেশি আছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিআইএফসির মতো দুর্ঘটনা ঠেকাতে প্রতিষ্ঠানটিতে করপোরেট সুশাসন ও আইন পরিপালনের ওপর জোর দিচ্ছেন বীমা বিশ্লেষকরা। সেটা সম্ভব না হলে অচিরেই দেউলিয়াত্বের গহ্বরে পতিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। আর এমনটা হলে তা যে দেশের আর্থিক খাতের বর্তমান অবস্থায় মোটেও সুখকর বিষয় হবে না তা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশ সময়: ২:৩৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed