বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোংলায় আট প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকি ৫৭২ কোটি টাকা

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   882 বার পঠিত

মোংলায় আট প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকি ৫৭২ কোটি টাকা

মোংলা কাস্টম হাউজে আটটি প্রতিষ্ঠানের কাছে রাজস্ব বকেয়া রয়েছে প্রায় ৫৭২ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেছে। কাস্টম হাউজ এসব প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুলনার লকপুর শিল্পগোষ্ঠীর দুটি প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি প্রায় ৫০৩ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও আলোচিত খুলনা প্রিন্টিং প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ১০৯ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। বাকি ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি প্রায় ৬৯ কোটি টাকা। সম্প্রতি মোংলা কাস্টম হাউজ কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসের সই করা বকেয়া প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে এসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার (বন্ড) তথ্য তুলে ধরা হয়। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া আটটি প্রতিষ্ঠান হলো খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, সাউথ এশিয়ান প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেসার্স মৌলি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেসার্স বেঙ্গল প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেসার্স শরীফা প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজার্স প্রাইভেট লিমিটেড, মেসার্স সাউথ ওয়েস্ট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও হাজী এ মালেক নিটওয়্যার।

এর মধ্যে বন্ড সুবিধার সবচেয়ে বেশি অপব্যবহারের অভিযোগ লকপুর শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে বকেয়া প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম দফায় রয়েছে প্রায় ৩৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে রিটের বিপরীতে ২০১৭ সালের ১৮ মে ছয় মাসের সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হলে আদালত ছয় মাস সময় বৃদ্ধি করে। এরপর কোনো আদেশের কপি মোংলা কাস্টমসের কাছে নেই। এছাড়া প্রায় ১১ কোটি ৪৮ লাখ ও প্রায় ১০ কোটি ৮১ লাখ টাকা ফাঁকির আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। একটি মামলায় ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় তিন কোটি ৮৩ লাখ টাকা শুল্ককর ও প্রায় সাত কোটি ৬৬ লাখ টাকা জরিমানা। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০ লাখ হাজার টাকা জরিমানা করে মোংলা কাস্টমসের আদেশ রহিত করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে মোংলা কাস্টমস আপিলাত ডিভিশনে সিপি (সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল) দায়ের করেছে। অপর মামলার প্রায় ১০ কোটি ৮১ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় এক কোটি ২৬ লাখ টাকার শুল্ককর ও প্রায় ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা রয়েছে। কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি বাতিল করে পুনর্বিবেচনার জন্য কাস্টমস হাউজে ফেরত পাঠিয়েছে।

খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১২-১৩ থেকে ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে তিন মেয়াদে এক হাজার ২০৪টি চালান বন্ড সুবিধায় আমদানি করে। এর মধ্যে ৭৬টি এলসির কিছু চালান বন্ড রেজিস্টারে ওঠানো হলেও শুল্ক কর্তৃপক্ষের হিসাবে ওঠানো হয়নি। আবার বন্ড রেজিস্টারে ওঠানো হলেও তা প্রতিষ্ঠানের গুদামজাত রেজিস্টারে ওঠানো হয়নি। এর ফলে যে পরিমাণ পণ্য গুদামে থাকার কথা ছিল, এর চেয়ে কম ছিল। এসব পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রচ্ছন্ন রফতানির শর্ত হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন না করে ২৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নথির সঙ্গে বাস্তবে পণ্যের লেনদেনে মিল না রেখে ২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে নিজস্ব গুদামে ওঠানোর আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করার মাধ্যমে ৩১ লাখ টাকার শুল্ককর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় শীর্ষ বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। লকপুর শিল্পগোষ্ঠীর সহযোগী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রায় ১০৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা শুল্ককর ও ৪০ কোটি টাকা জরিমানা। কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে মোংলা কাস্টম হাউজ আপিল দায়েরের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাউথ এশিয়ান প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩৩ কোটি ৯ লাখ টাকা বকেয়া। এর মধ্যে শুল্ককর প্রায় ২৪ কোটি ৯ লাখ টাকা ও জরিমানা ৯ কোটি টাকা। মোংলা কাস্টমস হাউজ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করে। পরে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়। আপিলাত ট্রাইব্যুনাল মামলা গ্রহণের জন্য ফি জমা দেওয়ার অনুরোধ করলে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের ২৮ মে’র রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।

চতুর্থ স্থানে রয়েছে শরীফা প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজার্স প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া প্রায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুল্ককর প্রায় ২০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও জরিমানা আট কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিও একইভাবে ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল থেকে ফি জমা না দিয়ে ২০১৭ সালের ৪ জুন উচ্চ আদালতে রিট করে। বর্তমানে মামলাটির ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এছাড়া বেঙ্গল প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা ও সাউথ ওয়েস্ট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের সাড়ে ৪৬ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এ দুটি মামলাও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এছাড়া হাজী এ মালেক নিটওয়্যারে প্রায় পৌনে ৩৬ লাখ টাকার বকেয়া রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধ করছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, এনবিআর দেশের সব কাস্টম হাউজ, বন্ড ও ভ্যাট কমিশনারেটে এসব বড় মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের পথ খুঁজছে। সেজন্য যেসব মামলা উচ্চ আদালতে রয়েছে তা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে। তিনি বলেন, মোংলা কাস্টমস হাউজের আটটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৭২ কোটি টাকার মধ্যে লকপুর গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া প্রায় ৫০৩ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব না দিয়ে আদালতের দোহাই দেয়। আমরা আদালতের মাধ্যমে এসব টাকা আদায় করার চেষ্টা করছি।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৪১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11359 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।