বুধবার ১২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x

যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২   |   প্রিন্ট   |   224 বার পঠিত

যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই অনিয়ম

ইআরএফ আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান
এমন কোনো জায়গা দেখিনি যেখানে অনিয়ম নেই। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে আমরা যেখানেই হাত দিচ্ছি সেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, হঠাৎ করেই ঈদের আগে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি হলো। বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় সয়াবিন তেল মজুত করে রাখা হলো। সয়াবিন তেল নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তেলের বাজার নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা খুচরা থেকে পাইকারি, পাইকারি থেকে কারখানা- সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। বড় বড় রিফাইনারিতে আমরা অভিযান চালিয়েছি। আমরা অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে রিপোর্ট দিয়েছি।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯’ বিষয়ক সেমিনারটি রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সব জায়গায়-ই অনিয়ম রয়েছে। যেখানেই হাত দেওয়া হচ্ছে সেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সঠিক তথ্যের অভাব। এই সংস্থার তথ্যের বৈধ উৎস নেই। ভোক্তা বা ব্যক্তিগত উৎস থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করারও সুযোগ নেই। এজন্য ভোক্তা অধিদপ্তর সব গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, ভোক্তারা প্রতারিত হতে হতে এমন পর্যায়ে চলে গেছেন যে, এখন অধিকার খর্ব হচ্ছে সেটাই আর বুঝতে পারেন না। এসময় তিনি ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে থাকেন। তা থেকে ধারণা করা যায় চিকিৎসকরা কোম্পানির সুপারিশে ওষুধ লিখছেন। আবার ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিচ্ছেন। এতে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ইংরেজি মাধ্যম কোনো কোনো স্কুলে ভর্তির সময়ই কয়েক মাসের বেতন আগাম নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বই, খাতা, কলম, পোশাক স্কুল থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্রে ছবি তোলা, বাইক চালানো, ঘোড়াসহ বিভিন্ন লোকেরা পর্যটকদের চারপাশে সারক্ষণ ঘুরঘুর করছেন। পর্যটকরা নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারছেন না। আর কোনো সেবা নিলে উচ্চহারে মূল্য দিতে হচ্ছে। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস থেকেও মানুষ যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। পানির মান ভালো না। গ্যাসের চাপ কম থাকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং হচ্ছে। বিমান সময়মত ছাড়ছে না। এক কথায় যেখানেই হাত দিচ্ছি, সেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি।

এসময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, তিতাসের সেবা বিষয়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার ইঙ্গিত দেন।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ইস্যু ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে কথা বলেন। সফিকুজ্জামান বলেন, তথ্য অনুযায়ী তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সংকট হয়েছে। কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ আদেশ ধরে রাখছেন। এক কথায় এই বাজারে এক ধরনের মনোপলি বা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। এসব জেনেবুঝেও কিছু করার থাকছে না। কারণ এক বা দুটি বড় কোম্পানি কোনো অজুহাতে উৎপাদন বন্ধ রাখলে যে সংকট হয়েছে, তার চেয়ে বড় ধরনের সংকটের আশংকা রয়েছে। সরকার চায় পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে।

অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার বলেন, উন্নত দেশে উন্নয়ন সাবলীল করতে ভোক্তা অধিকার আইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অধিদপ্তরকে জনবলসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করা দরকার।

তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গায় অনিয়ম রয়েছে। নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রচুর অনিয়ম রয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর ঠিকমতো কাজ করতে পারলে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জরিমানা বা শাস্তি হবে না। তিনি ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের সহযোগিতা আশা করেন।

এএফপির ব্যুরো চিফ ও ইআরএফের সহসভাপতি শফিকুল আলম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে ব্যবসার ধরন পাল্টাচ্ছে। আবার ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে ভোক্তা অধিকার আইনটি সংশোধন করতে হবে। আইন ভঙ্গের শাস্তি আরও কঠোর করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের গবেষণা ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।

সেমিনারে ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি আরও কঠোর করার পরামর্শ দেন। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ক্যাবের উপদেষ্টা কাজী আব্দুল হান্নান। এতে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও আইন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রজবী নাহার রজনী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকরা ভোক্তার অধিকার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেন। সেগুলোর জবাব দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

Facebook Comments Box

Posted ৫:১২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Page 1

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।