নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৮:৪৩ অপরাহ্ণ
নানা অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি এবং বিভিন্ন তহবিলের সাড়ে ১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী ও কর্মচারী সংসদের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্প্রতি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী ও কর্মচারী সংসদের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তথ্য উপাত্তসহ প্রাপ্ত অভিযোগ যাচাই বাছাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই অভিযোগের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুদক সূত্র মতে, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী ও কর্মচারী সংসদের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানযোগ্য মনে হওয়ায় কমিশন থেকে অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত-১ এর মহাপরিচালক বরাবর কমিশন থেকে নির্দেশনা দিয়ে অনুসন্ধানের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আরো ইতিমধ্যে গণমাধ্যমকে একের পর এক নানা অনিময়, দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। ২০২১ সালে ১ ডিসেম্বর শীর্ষস্থানীয় একটি অনলাইন নিউজ পোটালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে, টেন্ডার আহ্বান না করেই গোপনে প্রায় তিন কোটি টাকার ৮টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছে রংপুর সিটি করপোরেশন। সবগুলো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরও ২০২১ সারের আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। লোক দেখানো এই টেন্ডার আহ্বানের বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। সিটি করপোরেশনের চিকলী বিনোদন পার্ক, বিভিন্ন অফিস সংস্কার, মাটি ভরাট ও রাস্তা নির্মাণসহ অন্তত ২০ প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে ২৬ কোটি ৬০ লাখ ৬৭৯ টাকার দরপত্র আহ্বান করেন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর মেয়র স্বাক্ষরিত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা টেন্ডার সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ ৮ ডিসেম্বর এবং টেন্ডার দাখিলের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর। সিটি করপোরেশনের স্মারক নম্বর ১৪৭২, তারিখ ৩ নভেম্বর ২০২১। টেন্ডার নোটিশ নম্বর ৯৬/২০২১-২০২২।
টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়। এরপর টেন্ডার আহ্বান না করে প্রায় তিন কোটি টাকার আট প্রকল্পের কাজ করার বিষয়টি জানাজানি হয়। কাজ শেষ করার পর আগামী ৯ ডিসেম্বর টেন্ডার দাখিলের শেষদিন বলে যেসব প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
প্রকল্পগুলো হলো চিকলী বিনোদন পার্ক; যার মাটিভরাট কাজের মূল্য ৮৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৩১ টাকা, সিটি করপোরেশনের রাধাবল্লভ ল্যাবরেটরি অফিস সংস্কার ও পানি সরবরাহ অফিসের ভবন সংস্কার কাজ; যার কাজের মূল্য ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ টাকা, চিকলী পার্কের আরসিসি রাস্তা নির্মাণ; যার কাজের মূল্য ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ২৭৮ টাকা, সাগরপাড়া ও হনুমানতলা প্রবেশপথে দুটি গেট এবং অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ; কাজের মূল্য ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭১৯ টাকা, কলাবাড়ি ডাম্পিং স্টেশনের পাশে তিন রুমের গেস্টহাউস নির্মাণ; কাজের মূল্য ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৮১ টাকা, কলাবাড়ি ডাম্পিং স্টেশনের পাশের নির্মাণসামগ্রী রাখার ঘর নির্মাণ; কাজের মূল্য ১৭ লাখ আট হাজার ৫০৯ টাকা এবং আঙ্গুরমিয়া কেডি ক্যানালের সেতু সংলগ্ন উত্তর পাশে ফুটপাতের রাস্তা নির্মাণসহ মাটি ভরাট; কাজের মূল্য ২৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৭ টাকা। প্রায় তিন কোটি টাকার এই আট প্রকল্পের কাজ টেন্ডার আহ্বানের আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে। মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিল দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy