বিবিএনিউজ.নেট | ১১ মে ২০১৯ | ১২:৪৩ অপরাহ্ণ
রফতানির অপার সম্ভাবনা জাগিয়ে নানা সংকটের গর্ভে নিমজ্জিত হয়েছে কলারোয়ার মুরারীকাটি গ্রামের টালি শিল্প। বিদেশে চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি অসম প্রতিযোগিতার মুখে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ৩৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী টালি বিপণন ব্যবস্থার অভাব এবং রফতানি নীতিমালা না থাকার পাশাপাশি টালি শিল্পে আধুনিকায়ন না হওয়াই মূলত এ সংকটের প্রধান কারণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা সদরের মুরারীকাটি গ্রামের কয়েকটি কুমার পরিবার রফতানিযোগ্য মাটির টালি তৈরি শুরু করে। ২০০২ সালে ইতালীয় ব্যবসায়ী রাফাইলো আলদো আসেন বাংলাদেশে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নারায়ণগঞ্জে টালি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু ওই এলাকার মাটি দিয়ে তৈরি টালি পছন্দসই না হওয়ায় তিনি দেশে ফিরে যান। কিন্তু ওই কোম্পানির ম্যানেজার রুহুল আমিন টালি তৈরির জন্য উপযুক্ত মাটি খুঁজতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরেন। অবশেষে কলারোয়ার কুমারপাড়ায় এসে পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত মাটি। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হয় হাতে তৈরি টালির বিদেশযাত্রা।
শৌখিন এ রফতানিযোগ্য পণ্যটির কারণে মুরারীকাটি গ্রামের কুমার সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবার আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে শুরু করে। পরবর্তীতে এটি আর কুমারদের হাতে সীমাবদ্ধ থাকে না। মুরারীকাটি গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবার রফতানিযোগ্য মাটির টালি তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আশেপাশের অনেক নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থান হয়।
২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কলারোয়ার মুরারীকাটি গ্রামের টালি শিল্প বেশ রমরমা ছিল। এ সময়ের মধ্যে অনেক নতুন উদ্যোক্তা আসেন এ শিল্পে। কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় পতন। আমদানি চাহিদা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় ৫০টি কারখানার মধ্যে অন্তত ৪০টি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলোর অবস্থাও ভালো নয়।
কোনো রকমে উৎপাদনে থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে কলারোয়া ক্লে ইন্টারন্যাশনাল, বাদল দাশ ক্লে ইন্টারন্যাশনাল, ভাই ভাই টালি কারখানা, শ্রীকান্ত টালি, আব্দুস ছাত্তার টালি, নেছার আলী টালি, তেলেশ পাল টালি, আব্দুর রব টালি ও এমাদুল টালি।
কলারোয়ার মুরারীকাটি গ্রামের সর্বপ্রথম রফতানিযোগ্য টালির উদ্যোক্তা গোষ্টপদ পাল জানান, বিদেশে চাহিদা না থাকায় এখন একেকটি টালির উৎপাদন খরচ ওঠানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে। একটি ফ্লোর টালি উৎপাদনে খরচ পড়ে ৮ থেকে ১৩ টাকা। সেখানে রফতানিকারকরা দাম দিচ্ছেন ৯ থেকে ১৪ টাকা। প্রতিটি রিক্ট অ্যাঙ্গুলার টালি বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা। অথচ সেটির উৎপাদন খরচ ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা। হেড ড্রাগুলার টালি তৈরিতে খরচ হয় ৫ টাকা, বিক্রিও হয় ৫ টাকা দরে। একেকটি নকশাযুক্ত টালি উৎপাদনে খরচ ৯ থেকে ১২ টাকা। কিন্তু বিক্রয়মূল্য এখন একই।
এর মধ্যে জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম বাড়ার পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। ফলে অধিকাংশ কারখানাই এখন লোকসানে। গোষ্টপদ পাল জানান, ২০১৬ সালের পর থেকে এক এক করে ৩৫ থেকে ৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অন্তত ৭০০ নারী-পুরুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।
তার মতে, এর অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী টালির বিপণন ব্যবস্থা না থাকা, টালি শিল্পে আধুনিকায়ন না হওয়ার পাশাপাশি রফতানি নীতিমালা না করা।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি নাসিম ফরুক মিঠু খান বলেন, চিংড়ি রফতানির মতোই বেশ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছিল কলারোয়ার মুরারীকাটি গ্রামের টালি শিল্প। নানা সংকটের কারণে আজ সেই সম্ভাবনাময় শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারলে উদ্যোক্তারা যেমন লাভবান হতেন, তেমনি সরকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারত। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। সূত্র: বাসস
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |