শুক্রবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাবী পরিশোধ ও জীবন বীমা তহবিলে অগ্রগতি

শূন্য থেকে পূর্ণতার দিকে প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১   |   প্রিন্ট   |   324 বার পঠিত

শূন্য থেকে পূর্ণতার দিকে প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ

বীমা খাতের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন ও সেবার মানসিকতা তৈরীতে ২০১৩ সালে প্রায় ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে কার্যক্রম চালাতে অনুমোদন দেয় সরকার। এর মধ্যে ১৩টি লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান। প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে টিকে থাকতে এইসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমের শুরুতেই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে দুই বছর পরই ফান্ডশূন্য হয়ে পড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এবার পরিশোধিত মূলধনের দিকেও হাত বাড়াতে থাকে এদের কেউ কেউ। তবে এসবের মধ্যেও আশার আলো ছড়িয়েছে সোনালী লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফের মতো গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান। পেয়েছে উত্তরোত্তর সাফল্য। প্রাথমিক অবস্থায় কিছুটা নিয়ন্ত্রহীন থাকলেও ধীরে ধীরে শক্ত অবস্থান গড়তে থাকে। তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যাত্রা শুরুর পর দীর্ঘদিন যাবত কিছুটা অনিয়ন্ত্রীতভাবে পথ চলায় প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছিল আর্থিক ফান্ড। একসময় পরিশোধিত মূলধণ থেকেও টাকা উত্তোলন করে নির্বাহ করতে হয়েছে কোম্পানির ব্যয়। কিন্তু গত কয়েকবছরে যেন সে অবস্থা থেকে ইউটর্ন করে ফিরে আসছে আবার প্রতিযোিগতার বাজারে। এমনই পূর্বাভাস পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যবসা করেছে, যা সমাপ্ত বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আবার সমাপ্ত বছরে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড ১০ কোটি টাকারও বেশি বৃদ্ধি পায়, যা আগের বছর ছিল মাত্র চার কোটি টাকা। ব্যবসায়িক অগ্রগতি ও আর্থিক তহবিল সমৃদ্ধির পাশাপাশি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রোটেক্টিভ লাইফ গত দুই বছরে প্রায় ৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা দাবী পরিশোধ করেছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বীমায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা, সার্ভাইবাল বেনিফিট (এসবি) বাবদ প্রায় ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ (ম্যাচুরিটি) বাবদ ২ লাখ টাকা প্রদান করেছে। যদিও ২০১৮ সাল পর্যন্ত অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন প্রায় ৯ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল কিন্তু শেষ দুই বছরে এই অবস্থা থেকে উত্তরোণের দিকে যায় প্রোটেক্টিভ লাইফ।

এমনকি ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স অ্যাওয়ার্ড- ২০১৯ এ ‘মোস্ট ইনোভেটিভ মাইক্রো ইন্স্যুয়ার’ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান এবং বেস্ট ব্যাংকঅ্যাসুরেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২০ অর্জন করে। প্রতিষ্ঠানটির এমন অভূতপূর্ব সাফল্য যার হাত ধরে, সেই ডাঃ কিশোর বিশ্বাসকে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ওই বছরই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিসি) দায়িত্বভার অর্পন করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

আর্থিক দৈন্যদশা থেকে প্রতিষ্ঠানটির উন্নতির পথে এমন ইউটার্নের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় সিইও ডাঃ কিশোর বিশ্বাসের কাছে। তিনি জানান-মূলত গ্রাহক সেবাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া ও গ্রাহকের আয়ের সাথে সংগতি রেখে নির্ধারণ করা প্রোডাক্টের কারণেই প্রতিষ্ঠানটি পূর্বের অবস্থা পরিবর্তন করে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে।

ডাঃ কিশোর বলেন-‘গ্রাহককে যথাসময়ে সহায়তা বা তার বিপদে যদি তাৎক্ষণিক পাশে থাকা যায় তাহলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ওই গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া টাকা জমা দেয়া, দাবী উত্থাপনের কাগজপত্র সহজে জমা দেয়ার বিষয়গুলো যদি জটিলতা এড়িয়ে সহজ করা যায় তবে তারা স্বস্তি অনুভব করে।’

এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ভাবে বলতে গিয়ে তিনি জানান-‘করোনাকালে হোয়াট্স অ্যাপ অথবা ইমেইলেও কেউ ক্লেইমের কাগজপত্রের ছবি তুলে পাঠালে তা যাচাই করে আমরা পরিশোধ করেছি। মানে গ্রাহকে হ্যাশেল ফ্রি সার্ভিস দিতে হবে। তাহলেই বীমা খাতে অগ্রগতি হবে।’ গতানুগতি প্রোডাক্টই এখন ইন্ডাস্ট্রির সামনে আগানোর ক্ষেত্রে বাঁধা উল্লেখ করে তিনি বলেন- ‘আমাদের নতুন কিছু আনা দরকার। আমি দেখছি বর্তমানে মানুষ ডেথ বেনিফিটের চেয়ে লিভিং বেনিফিটের প্রতি বেশি ইন্টারেস্টেড। আমি মরে গেলে আমার নমিটি যা পাবে তার চেয়ে আমি বেঁচে থেকে কি পাচ্ছি সেটা একটা ফ্যাক্ট। এজন্য প্রোডাক্ট একটি ইস্যু।’

তিনি বলেন-‘আমাদের একটি করপোরেট এজেন্ট আছে তারা মাত্র ১০০ টাকায় হেলথ ইন্স্যুরেন্স করছে। যেটা একজন রিক্সা শ্রমিকের জন্যও বর্তমানে তেমন কষ্টকর নয়। কিন্তু বিনিময়ে যখন সে এর বিপুল সুবিধা উপভোগ করবে তখন সে এরচেয়ে আরেকটু বড় প্রোডাক্টও নিতে চাইবে। এ ধরনের ছোট ছোট প্রোডাক্ট তৈরী করে যদি মানুষের মাঝে ইন্স্যুরেন্সের প্রতি কনসার্ণ গ্রো করা যায় তবে এই সেক্টর উন্নত হতে বেশিদিন সময় নেবে না। অর্থাৎ এমন প্রোডাক্ট তৈরী করতে হবে যেটা দুই পক্ষেরই স্বার্থ দেখবে। আমার ক্লায়েন্টকে বেনিফিটেড করবে, আবার কোম্পানিকেও বিজনেস ওরিয়েন্টেড করবে।’

একই সাথে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের এই পেশায় আসতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি গ্রাহকের সাথে লংটার্ম রিলেশন ধরে রাখার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন এই সিইও। তার মতে, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে এই পেশায় সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ একটা শিক্ষিত ছেলে বা মেয়ে বুঝতে পারবে একজন লোকের জন্য কোন পলিসি পারফেক্ট। তার আয়ের পরিধি কতটুক? টার্গেট ফিলাপের জন্য তাকে বড় পলিসি করিয়ে দিলো এবং সেটা যদি তার সাধ্যের বাইরে যায় তবে ভবিষ্যতে প্রিমিয়াম দিতে পারবে না। আবার সার্ভিস দেয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে। একজনকে পলিসি করানোর পর যদি আর যোগাযোগ না করা হয়, লং টার্ম রিলেশন তৈরী করা না যায় তাহলে পলিসি ল্যাপস হয়।

কয়েকবছর আগের তুলনায় বর্তমানে বীমা খাতের যে উন্নয়ন সে জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন কিশোর বিশ্বাস। বীমার উন্নয়নে আইডিআরএ’র অবদান সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন- সেক্টরের উন্নয়নে আইডিআরএ’র যে ভূমিকাটা সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে তা হলো জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাওয়া। এখন প্রতিটি কোম্পানির প্রতিটি তথ্য নিয়ে যে চুলচেরা বিশ্লেষন হচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমি দেখেছি একই তথ্য তিন জনের কাছে থেকে তিনভাবে চেয়েছে। কারণ কেউ ভুল দিচ্ছে কিনা বা কোন সমস্যা আছে কিনা সেটা ক্রসচেক করছে। এটা ইন্স্যুরেন্স সেক্টরের ডেভলপমেন্টের জন্য খুব জরুরী। আবার সকল কোম্পানির সফটওয়্যারের সাথে আইডিআরএ সেন্ট্রালি একটা কানেকটিভি তৈরীর পদক্ষেপ নিচ্ছে এটাও অসাধারণ বিষয়। এতে কোম্পানিগুলো আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে। পাশাপাশি আইডিআরএ যদি এডুকেটেড লোকদের এখানে আনতে পদক্ষেপ নেয় এবং মর্ডার্ণ কনসেপ্টকে অ্যাপ্লাই করে তাহলে বীমা খাত উপকৃত হবে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।