হেলাল সাজওয়াল | সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 56 বার পঠিত
অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনখাতে সংকট নিরসন ও শৃঙ্খলা আনতে আগের ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) মতো বিডব্লিউটিসিসি নামে প্ল্যাটফর্ম গঠন করে লাইটার জাহাজ সরবরাহ শুরু হয়েছে। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নতুন নীতিমালা অনুসরণ করে গত ৪ নভেম্বর এ সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে বেসরকারী এই সংগঠনটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা স্থবিরতা কাটিয়ে শৃঙ্খলা ফিরেছে এই খাতে।
তবে লাইটার জাহাজ মালিক ও পণ্য আমদানিকারকরা বলছেন; সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা না নিলে নতুন প্রক্রিয়াও বিফল হতে পারে।
নতুন এ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসলেও ভিন্নমত আছে জাহাজ মালিক ও আমদানিকারকদের। কোনো পক্ষের মত যাতে উপেক্ষিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য অভ্যন্তরীণ নৌপথে লাইটার জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন শুরু করেছে; লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অডিশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি)। গত ১৫ অক্টোবর প্রণীত নীতিমালায় লাইটার জাহাজের সিরিয়াল ভুক্তি, বরাদ্দ ও জাহাজের ভাড়া নির্ধারণের একক দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে বিডব্লিউটিসিসিকে।
নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী, বিডব্লিউটিসিসির বরাদ্দ ছাড়া কোনো লাইটার জাহাজ বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রবন্দরে আসা মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত থাকতে পারবে না। তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে, যে সকল ফ্যাক্টরি ও গ্রুপ অব কোম্পানি এর নিজস্ব লাইটার জাহাজ রয়েছে, সেই সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অব্যাহতি পত্র সাপেক্ষে তাদের নিজস্ব পণ্য কেবলমাত্র নিজস্ব জাহাজে পরিবহনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ব্যবসায়ীরা ভাড়া করা জাহাজ দিয়ে তাদের বহর বাড়াতে পারবে না অথবা তাদের বহরে থাকা কিন্তু কারখানার নামে নিবন্ধিত নয় এমন জাহাজে পণ্য পরিবহন করতে পারবে না।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এই নীতিমালার কারণে নৌপথে আমদানি করা পণ্য পরিবহনে সম্প্রতি বন্ধ হওয়া একচেটিয়া আধিপত্য আবার ফিরে আসবে। তাদের দাবি, এটি প্রতিযোগিতা আইন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
লাইটার জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিগত সময়ে আমরা দেখেছি; শিডিউলিং না থাকার কারণেই বরং সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল; যাদের প্রভাবে জাহাজ মালিক এবং আমদানিকারক সবাই সমস্যাগ্রস্ত ছিল। প্রণীত নীতিমালার সুবাদে এখন সবাই সমান সুযোগ পাবে।
বন্দরের সর্বশেষ তথ্য এবং বিডব্লিউটিসিসি ও শিল্প মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্দর থেকে নদীপথে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য প্রায় এক হাজার জাহাজ আছে। এছাড়া ওয়াটার ট্রান্সপোর্টের আওতায় প্রায় ৪৫০ জনের ব্যক্তি মালিকানায় জাহাজ আছে প্রায় ৭৫০টি। এছাড়া ১১টি শিল্প গ্রুপের নিজস্ব পরিবহনের জন্য আরও ১৮০টি জাহাজ আছে। সব মিলিয়ে বহির্নোঙরে থাকা মাদার ভেসেল থেকে পণ্যে খালাসের জন্য প্রায় ৩ হাজার লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। সাধারণ আমদানিকারকরা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের মাধ্যমে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ নিতেন। কিন্তু বিগত সরকারের সময় সিন্ডিকেট করে সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে লাইটারেজ না পাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হতো আমদানিকারকদের।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে করে প্রতি বছর আমদানি করা ১০ কোটি টনের বেশি পণ্য, সার ও শিল্প কারখানার কাঁচামাল খালাস করে ৪০টি অভ্যন্তরীণ নৌপথে পাঠানো হয়।
আমদানিকারকদের কারখানার নামে থাকা লাইটার জাহাজ বাদে বিডব্লিউটিসিসির নিয়ন্ত্রণে ১ হাজার ৮শ’র বেশি লাইটার জাহাজ পণ্য পরিবহনের কাজ করে থাকে। নতুন নীতিমালা অনুসারে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের সুপারভাইজরি কমিটি এই সেলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ নৌপথে প্রতি টন গম পরিবহনে আগে খরচ হতো ৬৬২ টাকা। এখন গমের ভাড়া ৬১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ নয়, নতুন তালিকায় মেঘনা, মুক্তারপুর, কাচপুর, আলীগঞ্জ, নিতাইগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনা, মোংলা, নগরবাড়ী, টেপাখোলা, বাঘাবাড়ী, আশুগঞ্জ, ভৈরব, দাউদকান্দি, ঘোড়াশাল, পলাশ, রূপসী, সন্দ্বীপ, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বসিলা, ছাতক, সুনামগঞ্জ, মোল্লারহাট, শরীয়তপুর, মাওয়া, ইটনা, বাবুগঞ্জ, বরগুনা, লালমোহন, পায়রা, আরিচা, মীরসরাই ইকোনমিক জোন, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, বাহারছড়া, গণ্ডামারা, শিকলবাহা, কালুরঘাট সেতুসহ বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া কমানো হয়েছে। পণ্যের মধ্যে আরও আছে চিনির কাঁচামাল, চাল, রক সালফার, রক ফসফেট, এইচ আর কয়েল, বিলেট, ডাল, ভুট্টা, সয়াবিন, মোজাইক পাথর, পোলট্রি ফিড, বাঁশ, পাইপ, রড ইত্যাদি।
বিডব্লিউটিসিসি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ গন্তব্যে আগে ক্লিংকার পরিবহনে টনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হতো ৫৭৪ টাকা, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ টাকা। জিপসামে ৬০৬ টাকার ভাড়া এখন ৫৬৮ টাকা, বল ক্লের ভাড়া ৫৮৩ টাকার স্থলে ৫৫০ টাকা, টিএসপি বা ড্যাপের ভাড়া ৬৪১ টাকার স্থলে ৫৯৪ টাকা, লবণে ৭৪৯ টাকার ভাড়া ৬৭৫ টাকা, কয়লা ও চিনির (ব্যাগ) ভাড়া ৬৬৬ টাকার স্থলে ৬১২ টাকা, পাথরের (১০ মিমি) ভাড়া ৬২৫ টাকার স্থলে ৫৮১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বড় জাহাজে করে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তা ছোট জাহাজের মাধ্যমে নদীপথ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া হয়। দুই দশক আগে জাহাজমালিকেরা ‘ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল’ গঠন করে ক্রম অনুযায়ী আমদানিকারকদের জাহাজ বরাদ্দ দিত। তবে কয়েক বছর ধরে এই সংস্থার কর্মকর্তারা নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। আবার আমদানি বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী জাহাজ বরাদ্দও পাওয়া যেত না। তাতে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষতিপূরণ গুনতে হতো আমদানিকারকদের।
সক্ষমতা থাকার পরও এসময় চট্টগ্রাম বন্দরে লাইটারেজ জাহাজের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাসের জন্য প্রতিদিন প্রায় ২০০ লাইটারেজ জাহাজ প্রয়োজন হলেও এর বিপরীতে ৭০-৮০টির বেশি বরাদ্দ দিতে পারতো না; ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল।
তবে বন্দর সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পণ্য বোঝাই লাইটারেজ জাহাজগুলোকে নদীতে ভাসমান অবস্থায় গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছে আমদানিকারকরা। ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হতো। এতে আমদানি করা প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যেতো।
আবার সাধারণ জাহাজমালিকদের জাহাজ বরাদ্দ না দিয়ে নেতাদের জাহাজ বেশি বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগও ছিল। অনিয়মের কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে জাহাজমালিকদের তিন সংগঠনের দ্বন্দ্বে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল ভেঙে যায়।
মেসার্স এম রহমান শিপিং লাইন্সের মালিক মো. মতিউর রহমান জানান, বিগত সরকারের মন্ত্রী এমপি পুলিশ কর্মকর্তাদের জাহাজগুলো এখনও নীতিমালা মেনে নেয়নি। মুলত তাদের পেশী শক্তির নিকট পুর্বের নিয়ম নষ্ট হয়
ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আমদানিকারকেরা দরকষাকষি করে খোলাবাজার থেকে লাইটার জাহাজ ভাড়া নিতেন। তাতে একই পথে টনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকা কমে ৫৪০ টাকায় নেমেছে। ভোগ্যপণ্য ছাড়া সিমেন্টের কাঁচামাল পরিবহনে এই খরচ সাশ্রয় হচ্ছে আরও বেশি টনপ্রতি ১৫৪ টাকা।
আমদানীকারকরা বলছেন, পণ্য পরিবহনের জন্য আমরা চাইলে খোলাবাজার থেকে প্রতিযোগিতামূলক দরে ট্রাক ভাড়া করতে পারি, বিশ্ববাজার থেকে বড় জাহাজ ভাড়া করতে পারি। তাহলে শুধু নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য কেন নির্ধারিত সংস্থা থেকে ভাড়া নিতে হবে, যেখানে দরকষাকষির সুযোগ থাকবে না।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, নৌপথে পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। জাহাজমালিক ও আমদানিকারক কোনো পক্ষই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেই এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়; দেশের অন্যান্য পরিবহন সেক্টরের মতোই নৌপরিবহন সেক্টরকে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল করার জন্যই সিরিয়াল পদ্ধতিতে লাইটারেজ জাহাজগুলো যেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আমদানি রফতানি ও ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক ও নিরাপদ থাকার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীলতা পাবে।
এদিকে ‘নৌ পরিবহন অধিদপ্তর হতে অনুমতিপ্রাপ্ত লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ২০২৪’ অনুমোদনের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ও নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিডব্লিউটিটিসি সেলের কনভেনর সাঈদ আহমেদ। তিনি বলেন, বিডব্লিউটিসিসি ব্যবসায়িক সংগঠন, যা হবে রাজনীতিমুক্ত। এর মূল লক্ষ্য এ খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করা। স্টেক হোল্ডারদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সেল তৈরি। খরচের অপব্যবহার রোধ করা। মাদার ভ্যাসেলের পণ্য দ্রুত খালাসের মাধ্যমে ডেমারেজ থেকে রক্ষা করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের সাবেক নির্বাহী সদস্য শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিরিয়াল প্রথা চালু হলে, আমদানিকারক ও জাহাজ মালিক সবার জন্যই ভালো। তিনি বলেন, দেশের সব আমদানিকারকদেরই সমিতি আছে। সব সমিতি থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে যদি এটা পরিচালনা করা হয়, তবেই ভালো হবে।
বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া) সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন; বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় এবং বিসিভোয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় লাইটার জাহাজ পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরেছে। এখন আগের মতো কেউ সিন্ডিকেট করে একচেটিয়া আধিপত্য দেখাতে পারবেনা। সিরিয়াল সিস্টেমে সবাই তাদের জাহাজে পণ্য পরিবহন করে লাভবান হতে পারবে। আর কাউকে বরাদ্দ বঞ্চিত হতে হবে না। তিনি বলেন গত কয়েক মাসে বরাদ্দ না পেয়ে প্রায় ৬০০ লাইটার জাহাজ কেটে বিক্রি করতে হয়েছে সাধারণ মালিকদের। আর যেন কোন মালিককে এমন অবস্থায় না পড়তে হয়; সেদিকে আমাদের খেয়াল থাকবে। একই সঙ্গে যেসব আমদানিকারক মনে করছেন বিডব্লিওটিসিসির মাধ্যমে লাইটার জাহাজ ভাড়া নিলে বেশি ভাড়া দিতে হবে; সেটি কিন্তু ইতিমধ্যে অসাড় প্রমাণিত হয়েছে; ভাড়া আগের চেয়ে কমানো হয়েছে।
অর্জিত শৃঙ্খলা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অর্ন্তভূক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।
Posted ৭:০০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy