নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | প্রিন্ট | 480 বার পঠিত
মাত্র সাত-আটটি কোম্পানির জন্য দেশের বীমা খাতে ধস নেমেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ।
এসব কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, গ্রাহকদের ২০০০ কোটি টাকার মতো পরিশোধ করলেই এ সমস্যার সমাধান হবে। শুক্রবার বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের(ক্যামেলকো) সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজারের লং বীচ হোটেলে আজ ১৯ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিজ ক্যামেলকোস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ বলেন, “ আজকের প্রতিপাদ্য-অবৈধ অর্থপ্রবাহ মোকাবিলায় কঠোর কমপ্লায়েন্স,আমাদের সকলের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে। অত্যন্ত সময়োপযোগী এই আয়োজনের জন্য আমি ICCAB- এবং BFIU কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কক্সবাজারের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে আমরা যখন একত্রিত হয়েছি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে—আমরা এখানে এসেছি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ ও স্বচ্ছ করতে।
আজকের পৃথিবীতে প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করছে, তেমনি আর্থিক অপরাধের ধরনও বদলে যাচ্ছে। এখন শুধু টাকা পাচার বা সন্ত্রাসে অর্থায়নই নয়, এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও একটি বড় হুমকি।
আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি দেশের অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে হলে সবার আগে প্রয়োজন আর্থিক অপরাধ বন্ধ করা ।
আমরা জানি, ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সম্ভাবনা বেশী, কিন্তু বীমার মাধ্যমেও অর্থ পাচারের সম্ভাবনা থাকে, যা তুলনামূলক ভাবে কম। পলিসি প্রিমিয়াম, দাবি পরিশোধ, বা রি-ইনস্যুরেন্সের বিভিন্ন ধাপে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই আমাদের বীমা খাতকে আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধের জন্য একটি দুর্বল জায়গায় না রেখে, শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
ইন্স্যুরেন্স শুধুমাত্র একটি ব্যবসা নয়, এটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। আমরা মানুষকে নিশ্চয়তা দেই, আস্থা দেই। কিন্তু এই আস্থাকে যেন কোনোভাবে Money Laundering বা Terrorist Financing-এর অপব্যবহার না করা হয়, সেটি নিশ্চিত করাটা আমাদের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব ।
বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স খাত আজ গতিশীল। আমরা ডিজিটালাইজেশন, গ্রাহকসেবা এবং নীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। কিন্তু AML/CFT কমপ্লায়েন্স এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। আমাদের লক্ষ্য হলো-কোনো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি যেন অজান্তেই illicit financial flow অবৈধ আর্থিক প্রবাহ এর মাধ্যম না হয়ে পড়ে।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চিফ অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার (CAMLCO) হলেন আমাদের প্রথম প্রতিরক্ষা। তাদের দক্ষতা এবং সততার ওপরই নির্ভর করে পুরো প্রতিষ্ঠান কতটা সুরক্ষিত থাকবে। একজন দক্ষ CAMLCO শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, পুরো আর্থিক ব্যবস্থার রক্ষাকবচ।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন আমাদের নতুন কিছু শেখার সুযোগ দেবে। তবে শুধু জ্ঞান অর্জনই যথেষ্ট
নয়। আমাদের এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ডেটা অ্যানালিটিক্স, এবং
ডিজিটাল কেওয়াইসি (KYC) ছাড়া ভবিষ্যতের আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা ডিজিটালাইজেশন, গ্রাহকসেবা এবং নীতি নির্ধারণে
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। কিন্তু AML/CFT কমপ্লায়েন্স এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
এই লড়াই কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের একার নয় । বাংলাদেশ ব্যাংক, BFIU, বীমা খাত এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান-আমরা সবাই মিলে এই সমস্যা সমাধান করতে পারি। এটি একটি জাতীয় আন্দোলন, যা আমাদের সবাইকে একযোগে চালিয়ে যেতে হবে।
আমি বলতে চাই—একসাথে কাজ করলে এবং কঠোর কমপ্লায়েন্সের নীতিতে অবিচল থাকলে আমরা বাংলাদেশের বীমা খাতকে একটি বিশ্বমানের, সুরক্ষিত খাতে পরিণত করতে পারব। এতে কেবল আমাদের অর্থনীতিই শক্তিশালী হবে না, বরং জনগণের আস্থাও বাড়বে। BIA-এর পক্ষ থেকে আমি
আশ্বাস দিচ্ছি যে, আমরা BFIU, IDRA এবং অন্যান্য সকল অংশীদারের সাথে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।
আমি বিশ্বাস করি, এই সম্মেলন থেকে আপনারা যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, তা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগিয়ে আমাদের আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত করে তুলবেন।
আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি নিরাপদ এবং অপরাধমুক্ত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলি। একটি মানি লন্ডারিং-মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
Posted ৭:৫৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
bankbimaarthonity.com | Reporter Rasel