মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এডিবির প্রতিবেদনের তথ্য

সামাজিক নিরাপত্তায় এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ

বিবিএনিউজ.নেট   |   সোমবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   476 বার পঠিত

সামাজিক নিরাপত্তায় এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ

সমাজে সম্পদ ও আয়বৈষম্য কমানোর জন্য চালু করা হয় সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশি এ কার্যক্রম চালু রয়েছে। কোন দেশ তার বাজেট থেকে কী পরিমাণ অর্থ এ খাতে ব্যয় করছে, তার ওপর নির্ভর করে আয় ও সম্পদ বৈষম্য কমার বিষয়টি। বাংলাদেশেও বেশ জোরেশোরে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম চালু আছে। কিন্তু বাংলাদেশের থেকে অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর চেয়েও বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পাওয়া জনগোষ্ঠীর হার কম।

সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত ‘দ্য সোশ্যাল প্রটেকশন ইন্ডিকেটর ফর এশিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমনটি উঠে এসেছে। অবশ্য প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে ২০১৫ সালের তথ্যের পর ভিত্তি করে। প্রতিবেদনটিতে এশিয়ার ২৫টি দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, এই ২৫টি দেশে গড়ে যে-সংখ্যক মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সুবিধা পায়, বাংলাদেশে তার হার অনেক কম।

প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সুবিধা পাওয়া জনগোষ্ঠীর হার ১৬ দশমিক ছয় শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। বাংলাদেশের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে পিছিয়ে থাকা নেপাল ও পাকিস্তানেও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সহায়তা পাওয়া জনগোষ্ঠীর হার বেশি। নেপালে মোট জনগোষ্ঠীর ১৮ শতাংশ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা পায়। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে চরম ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা পাকিস্তানেও ১৯ দশমিক এক শতাংশ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সুবিধা পায়। এ দেশ দুটির মাথাপিছু আয় ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের তুলনায় কম।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ৬৩ শতাংশ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সুবিধা পায়, যদিও দেশটি বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় থাকা মানুষের হার সবচেয়ে বেশি মালদ্বীপে। দেশটির ৮৩ দশমিক তিন শতাংশ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা পায়। অন্যদিকে সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা জালের আওতায় আছে ভুটানে। দেশটির মাত্র ছয় দশমিক চার শতাংশ মানুষ এ সুবিধা পায়। আর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতকে এ তালিকায় রাখা হয়নি।

এশিয়ার যে ২৫টি দেশ ওই তালিকায় রাখা হয়েছে, তার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গলিয়া ও সিঙ্গাপুরে শতভাগ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা জালের আওতায় রয়েছেন। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে ৯৬ শতাংশ মানুষ এ সুবিধা পায়। আর সবচেয়ে কম হারে সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা পায় মিয়ানমারের মানুষ। দেশটির মাত্র এক দশমিক সাত শতাংশ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় রয়েছে।

অঞ্চলভিত্তিক গড় হিসাবে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পায়। সে তুলনায় বাংলাদেশে এ কার্যক্রমের সুবিধা পাওয়া মানুষের হার অনেক কম। পূর্ব এশিয়ায় এমন সুবিধা পাওয়া মানুষের হার সাড়ে ৯৩ শতাংশ। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ হার ৬৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

এদিকে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার যে সুবিধা বিতরণ করা হয়, সেখানে অনেক ধরনের বিশৃঙ্খলা ও লিকেজের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনেক ক্ষেত্রে ভিজিএফ ও ভিজিডির মতো কর্মসূচির সুবিধা প্রকৃত প্রাপ্য ব্যক্তির পরিবর্তে সচ্ছল ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণের অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার দক্ষতার সঙ্গে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মাঝে সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন সুবিধা বিতরণে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএসএস) প্রণয়ন করেছে। কীভাবে দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে ওই কৌশলপত্রে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এ কৌশল প্রণয়ন করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, কোন দেশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে, তা বিচার করতে হবে দেশটি এ খাতে তাদের জিডিপির কত শতাংশ ব্যয় করছে, তার ওপর। আর ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে জিডিপির অংশ সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট জিডিপির মাত্র এক শতাংশ ব্যয় করেছে। এক্ষেত্রে এশিয়ার ২৫টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে জাপান। দেশটি ২০১৫ সালে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করেছিল ১২ দশমিক এক শতাংশ। ভুটানের ব্যয় ছিল মোট জিডিপির দশমিক সাত শতাংশ। পাকিস্তানের এক দশমিক সাত শতাংশ, নেপালের দুই শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ব্যয় ছিল ৩২ দশমিক দুই শতাংশ।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:২৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11363 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।