মঙ্গলবার ১৭ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম এম ফেরদৌসকে প্রশাসক নিয়োগ

সোনালী লাইফের পরিচালনা বোর্ড সাসপেন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   279 বার পঠিত

সোনালী লাইফের পরিচালনা বোর্ড সাসপেন্ড

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ফেরদৌস (অব.) এনডিসি, পিএসসিকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান ও কয়েকজন পরিচালকের ১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইডিআরএ’র পরিচালক (উপসিচব) আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২১ এপ্রিল রোববার থেকে প্রশাসক নিয়োগ ও বোর্ড সাসপেন্ড আদেশ কার্যকর হবে।

জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ফেরদৌস, এনডিসি, পিএসসিকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের পর যতদ্রুত সম্ভব কোম্পানিটিতে দেশি বা বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে একটি পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা সম্পন্ন করবেন। এ ছাড়াও বীমা পলিসি ইস্যুসহ কোম্পানির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
আইডিআরএর একটি সূত্র জানিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ফেরদৌস রোববার সোনালী লাইফের প্রধান কার্যালয়ে যান এবং কয়েকজন বোর্ড সদস্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে কেন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে না তার ব্যাখ্যা চেয়ে বীমা কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। চিঠিতে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ১৮ এপ্রিল কর্তৃপক্ষে আয়োজিত এ সংক্রান্ত শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
এর আলোকে গত ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শুনানিতে অংশ নেন সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। তবে এর আগের দিন ১৭ এপ্রিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ৩ জন পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরা হলেন আহমেদ রাজিব সামদানী, হুদা আলী সেলিম ও হাজেরা হোসেন।

প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিলের শুনানিতে কোম্পানির পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান নূর-এ হাফজা পৃথকভাবে জবাব দাখিল করেন। আর বোর্ডের পক্ষে জবাব দাখিল করেন কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী মনিরুজ্জামান।

কাজী মনিরুজ্জামানের জবাবে কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের অনুকূলে ইস্যুকৃত শেয়ারের মূল্য, মাসিক বেতন গ্রহণ, তার নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ প্রদান, বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ব্যয় বাবদ অর্থ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে।

তবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস দাবি করেন, সোনালী লাইফের কাছে তার পাওনা ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৩০৫ টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত অফিস ভাড়া বাবদ ১১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮শ’ টাকা, অফিস ভাড়ার বিলম্ব ফি বাবদ পাওনা ২৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৬ টাকা, কোম্পানিকে ঋণ দেয়া বাবদ পাওনা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৪২ টাকা তিনি গ্রহণ করেছেন।

তবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের এই দাবির সাথে কোম্পানির বুক অব একাউন্টস, লেজার সিস্টেম জেনারেটেট ভাউচার, ব্যাংকের এডভাইস চেক ইত্যাদি ডকুমেন্টেসের সাথে কোন মিল না থাকায় তার এই বক্তব্য গ্রহণ করা হয়নি আইডিআরএ’র শুনানিতে।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ভাড়ার টাকা সমন্বয় করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য না হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বছরভিত্তিক ফ্লোর এরিয়ার চাহিদা নির্ধারণ করে মোট ১৮৪ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৮শ’ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে ২০১৩ সালে চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
তবে ভাড়ার ওই চুক্তিতে কোম্পানির পক্ষে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করেননি। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ভবন মালিক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের জামাতা ও সোনালী লাইফের স্পন্সর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল। এ ধরণের চুক্তি স্বাক্ষরকে আইডিআরএ অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য ও অপকৌশল বলে মনে করছে।

অপরদিকে নূর-এ হাফজা তার জবাবে বলেন, তার নামে ইস্যুকৃত প্লেসমেন্ট শেয়ারের মূল্য তিনি পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। এছাড়া তিনি কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন তা পরিশোধ করতে ইচ্ছুক বলেও জানান।

আইডিআরএ বলছে, অসম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ বা তথ্য গোপন, অস্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল সিস্টেমের অনুপস্থিতি, ক্যাশ চেকে বড় অংকের লেনদেন, এফডিআর জামানত রেখে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ গ্রহণ এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কোম্পানিটির ব্যাংক সিগনেটরির প্রায় সকলেই একই পরিবারের সদস্য।

এমন অবস্থায় সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ বীমা কোম্পানিটির কার্যক্রম এমনভাবে পরিচালনা করছে যে, এতে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে কোম্পানি ও বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

এর আগে সোনালী লাইফের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অডিট ফার্ম হুদাভাসী চৌধুরী এন্ড কোং-কে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওই তদন্তে ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ উঠে আসে।

এদিকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অফিস ভাড়াকে ওই ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক চেয়ারম্যান মুস্তফা গোলাম কুদ্দুস। তার দাবি কোম্পানিটির তৎকালীন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমান ‘জালিয়াতির’ মাধ্যমে এটা করেছিলেন।
সম্প্রতি কোম্পানির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এই দাবি করা হয়। মুস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, মীর রাশেদ বিন আমান তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রদত্ত অফিস ভাড়াকেই ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ হিসেবে দেখিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাশেদ বিন আমান অর্থনৈতিক জালিয়াতির জন্য শুধুমাত্র বিভিন্ন তথ্য বিকৃতি ও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবই বিকৃতি করেননি বরং কোম্পানির হোস্টাইল টেকওভারের পরিকল্পনা নিয়ে কাজে নেমেছিলেন।

এরআগে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনালী লাইফ জানায়, রাশেদ বিন আমানের সময়ে কোম্পানির তহবিল বেআইনিভাবে ব্যবহার করে তার নিজ ও নিজস্ব পরিবারভুক্ত সদস্যদের অনেকের নামে সোনালী লাইফের শেয়ার ক্রয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। যা তিনি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং প্রচেষ্টায় অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হোস্টাইল টেকওভারের পরিকল্পনাটি কোম্পানির তহবিল থেকে আত্মীয়স্বজনদের নামে শেয়ার ক্রয়ের প্রমান পাওয়া যায়।

এরকম পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিলো নির্দিষ্ট সময়ে একটা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে সোনালী লাইফের বর্তমান পরিচালকদের উৎখাতের মাধ্যমে রাশেদ বিন আমানের পরিবারের সদস্য ও আশির্বাদপুষ্টদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা। এগুলো করার জন্য তিনি কোম্পানির যাবতীয় ব্যাংক হিসাবই ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করেছেন।

অডিট রিপোর্টের মধ্যে এমন কোনো তথ্য উল্লেখ্য নেই, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস কতো টাকা তার নিজস্ব ভবন ব্যবহার করার জন্য ভাড়া বাবদ সোনালী লাইফের কাছে প্রাপ্য ছিলেন। কোনো বাড়ির মালিক বিনা ভাড়ায় বাড়ি ভাড়া দেবেন না এটাই আইনসম্মত এবং ভাড়া পাওয়ার সম্পূর্ণ আইনগত অধিকার সম্পত্তির মালিকের রয়েছে। কিন্ত রাশেদ বিন আমান এই বাড়ি ভাড়াকে জালিয়াতির মাধ্যমে ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ হিসেবে দেখিয়েছেন। এটা সত্যের অপলাপ।

মুস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, ভাড়া সংক্রান্ত তথ্য অডিট প্রদানকারী সংস্থা সম্পূর্ণ আমলে না নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে। উল্লেখ্য যে, অডিট রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাকে শুধুমাত্র আংশিক তদন্তের জন্য রেফারেন্সের শর্তাবলীর মধ্যে ভাড়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়নি বিধায় তারা সেটি উল্লেখ করেনি।

তিনি বলেন, অডিট কোম্পানি হুদাভাসি এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) অডিট রিপোর্টের কোনো কপি সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদকে বা কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেনি।অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সদ্য প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি সোনালী লাইফকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করার জন্য এই ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে কোম্পানির ধারনা।

কোম্পানির একটি সূত্র বলছে, আইডিআরএ সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ করলেও এতে গ্রাহকদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সোনালী লাইফ তার অঙ্গীকার ও কমিটমেন্টে শতভাগ অবিচল রয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ৮:২৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।