বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 399 বার পঠিত
অনিয়মের অভিযোগ এনে লাইসেন্স বাতিল ও ব্যবসা বন্ধের জেরে ২০১৫ সালে বড় সংকটের মুখে পড়ে বেসরকারি স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। এর জের ধরে পরের দু’বছর ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়ে কোম্পানিটি। এক বছরের বেশি সময় ধরে আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৬ সালের শেষদিকে লাইসেন্স ফিরে পায় কোম্পানিটি। ইমেজ সংকট কাটিয়ে গ্রাহকের আস্থার ওপর ভর করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। সর্বশেষ সমাপ্ত আর্থিক বছরে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। চলতি আর্থিক বছরেও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
চলতি আর্থিক বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অর্ধবার্ষিকে প্রায় ১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা নিট প্রিমিয়াম আয় করেছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির নিট প্রিমিয়াম আয় প্রায় ৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ছিল। এ হিসেবে আগের তুলনায় চলতি আর্থিক বছরের ছয় মাসে কোম্পানিটির নিট প্রিমিয়াম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বা ৫১ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসে সাধারণ বীমা কোম্পানিটি প্রায় পাঁচ কোটি তিন লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে, যা এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব কাওসার মুন্সি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘লাইসেন্স নিয়ে জটিলতার কারণে ২০১৫ সাল থেকে পরের দুই বছর প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। হঠাৎ করে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইমেজ সংকটও তৈরি হয়েছিল। পরিচালনা পর্ষদের দিকনির্দেশনা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী, গণমাধ্যম ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তায় ২০১৬ সালে লাইসেন্স ফিরে পেয়েছি। এরপর সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কোম্পানির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী যার যার অবস্থান থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সবার সম্মিলিত শ্রম আর গ্রাহকের আস্থার ওপরে ভর করেই আমরা সংকট কাটিয়ে উঠেছি। আশা করছি, এগিয়ে যাবার এ ধারা অদূর ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কোম্পানিটি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ফি-বছর গড়ে প্রায় ছয় কোটি ২২ লাখ টাকা করে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে। এর মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ, লাইসেন্স বাতিল ও ব্যবসা বন্ধের কারণে ২০১৫ সালের নভেম্বরে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা সর্বনিম্ন তিন কোটি ১৯ লাখ টাকায় নেমেছিল। ২০১৬ সালের অক্টোবরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে লাইসেন্স ফিরে পায় কোম্পানিটি। এরপর সংকট উতরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে কোম্পানিটি। এর জেরে ২০১৮ সালে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স সর্বোচ্চ সাত কোটি ৯২ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে। চলতি আর্থিক বছরেও মুনাফায় প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেইসঙ্গে উত্থান-পতনের মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের বোনাস লভ্যাংশ দিচ্ছে কোম্পানিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর রাতে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের বহুতলবিশিষ্ট পোশাক কারখানা ভবন আগুনে পুড়ে যায়। ওই ভবনের পুনঃবীমার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে একই গ্রুপের মালিকানাধীন স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে ২০১৫ সালের ২১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য বীমা কোম্পানিটির লাইসেন্স স্থগিত করে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় কোম্পানিটি। আইডিআরএর নির্দেশনা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আবার আপিল করে আইডিআরএ। পরে চেম্বার বিচারপতি শুনানি করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শেষে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখে আইডিআরএ’র সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেন আপিল বিভাগ। এর জেরে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের। লাইসেন্স বাতিলের পরও পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমলে নিয়ে লাইসেন্স ফিরে পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে কোম্পানিটি। এর জের ধরে ২০১৬ সালের অক্টোবরে লাইসেন্স ফিরিয়ে দেয় আইডিআরএ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে নিবন্ধন নেওয়া বেসরকারি সাধারণ বীমা স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির চার কোটি ৩২ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৫২ দশমিক ৪০ শতাংশই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ছয় দশমিক ৫৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ এ প্লাস রেটিং পাওয়া কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৮ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
Posted ১২:২৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed