সোমবার ২১ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x
মানবদেহে ভারী ধাতব পদার্থ

হুমকিতে স্বাস্থ্যখাত

স্বাস্থ্য ডেস্ক   |   বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   853 বার পঠিত

হুমকিতে স্বাস্থ্যখাত

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত মানবদেহে সীসাসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থের কারণে সৃষ্ট হুমকি থেকে মুক্ত হতে পারছে না । কেননা এসব ভারী ধাতব পদার্থের আধিক্যের কারণে অঙ্গহানিসহ সরাসরি ক্যান্সারের সৃষ্টির মাধ্যমে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ থেতে পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে ঘটতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়।

সম্প্রতি আবারো গরুর দুধে দেখা দেয় এমন কড়া জনস্বাস্থ্য বিষয়ক হুমকি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভারী ধাতব পদার্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সীসা ও ক্রোমিয়াম। কেননা এই পদার্থগুলোর ক্ষতির মাত্রা বেশি ও দ্রুত।

সম্প্রতি সরকারের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় দেখা গেছে, গাভির তরল খোলা দুধে মাত্রতিরিক্ত কীটনাশক, সীসা ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। এসব ক্ষতিকর উপাদানের পাশপাশি দুধে তারা পেয়েছেন আলফাটক্সিন এবং বিভিন্ন অণুজীবও। খোলা দুধের পাশপাশি প্যাকেটজাত গাভির দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সীসার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। এমনকি সাধারণ দোকানের দই থেকে শুরু করে নামি-দামী প্রতিষ্ঠানের দইয়েও মিলেছে অতিরিক্ত সীসা-অনুজীব।

প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গাভির খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করে। প্রায় সব গোখাদ্যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কীটনাশকও মিলেছে কোনো কোনো খাবারে। রয়েছে সীসা ও ক্রোমিয়াম।

সাধারণত মাটিতে বা মাটির সংস্পর্শে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, টাইটেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, কপার, জিংক, ভ্যানাডিয়াম থাকে। এর মধ্যে আয়রন থাকে সর্বোচ্চ ৪২ হাজার পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), ক্যালসিয়াম ১ হাজার ২০০ পিপিএম এবং অন্যান্য পদার্থ থাকে ৫ হাজার পিপিএম’র কম পরিমাণে। এসব পদার্থ পানি, বিভিন্ন উপায়ে দূষিত বায়ুমণ্ডল এবং খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ঢুকছে।

এদিকে ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। আর এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

সরকারের প্রচেষ্টায় পরিবেশ দূষণ কিছুটা রোধ করার পরও সাভারের ভাকুর্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে মাছ এবং মুরগির জন্য খাবার তৈরির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিলো। এসব পোল্ট্রি ফিডের মাধ্যমে মাছ এবং মুরগিতে যে পরিমাণ ক্রোমিয়াম রয়েছে তা ৮০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়ও নষ্ট হয় না। অথচ সাধারণত বাসা-বাড়িতে মাত্র ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রান্না করা হয়।

এ বিষয়ে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এ কে এম সামসুজ্জামান জানান, ভারী ধাতব পদার্থ বিশেষ করে সীসা শরীরে এন্টি অক্সাইডের যে জৈবিক ক্রিয়া আছে তা ঘটতে দেয় না। ফলে সরাসরি দেহের কোষের ক্ষতি করে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় অস্থিমজ্জা এবং লিভার ও কিডনি। অস্থিমজ্জা নষ্ট হওয়াতে রক্তের লোহিত কণিকা উৎপন্ন হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তশূন্যতায় ভোগে। তাছাড়াও শ্বেত কণিকা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বিঘ্নিত হয়। ফলে ঘন ঘন রোগের সংক্রমণ দেখা দেয়, এমনকি ক্যান্সার হতে পারে।

এ পরিস্থিতি থেকে আমরা দ্রুত উত্তরণ না পেলে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবো। কেননা দেশের জনগণের স্বাস্থ্যে বিপর্যয় শুরু হলে প্রতিরোধ, প্রতিকার কোনোটারই উপায় থাকবে না। ইতোমধ্যে এসব কারণে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Facebook Comments Box

Posted ১২:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।