| শুক্রবার, ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 916 বার পঠিত
২০১৮ সালের রেমিট্যান্স আহরণে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এর আগে কোনো বছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। সদ্য শেষ হওয়া বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে এক হাজার ৫৫৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। ২০১৭ সালে এসেছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। অর্থাত্ আগের বছরের চেয়ে ২০৩ কোটিরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের উপরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদায় বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১২৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের মাস নভেম্বরে ১১৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। যেখানে গত বছরের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১১৬ কোটি ডলার। অর্থাত্ শুধু বছর হিসাবেই নয়, একক মাসের হিসাবেও রেমিট্যান্স বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যবস্থা গ্রহণ, ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উদ্যোগ এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে প্রত্যেক মাসেরই ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছিল। রেমিট্যান্স বাড়াতে নেওয়া উদ্যোগগুলোও কাজ করছিল না। ফলে সংশ্লিষ্টরা খুবই উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। তবে গত অর্থবছরে সে অবস্থা থেকে উত্তরণ হওয়ায় স্বস্তি মিলেছে। ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল। ২০১৫ সালে এসেছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স। আর ২০১৪ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ডলার।
হিসাবে দেখা গেছে বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৭৪৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আসে ৬৯৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৮ শতাংশের মতো। তবে বছরের প্রথম ছয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স আসে। আর এ প্রবৃদ্ধির কারণেই গত বছর রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। গত বছরে প্রথম ছয় মাসে ৮০৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। আগের বছরের একই সময়ে যার ছিল ৬৬০ কোটি ডলার।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যখন রেমিট্যান্সের পরিমাণ একেবারেই কমে গিয়েছিল তখন রেমিট্যান্স কম আসার কারণ অনুসন্ধান ও হুন্ডির বিষয়ে নিশ্চিত হতে সরেজমিনে তদন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই তদন্তে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়টি ধরা পড়ে। হুন্ডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার গ্রাহক ও এজেন্টের একাউন্ট বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর প্রতিমাসেই আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। একক মাস হিসাবে যা ছিল ৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পণ্য আমদানি বাড়ার কারণে বাজারে এখন ডলারের চাহিদা বেশি। সে কারণে ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই রেমিট্যান্স আনতে বেশি আগ্রহী। অন্য দিকে, বর্তমানে বেশি টাকা পাওয়ার কারণে প্রবাসীরাও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া, অবৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশকিছু উদ্যোগও কাজ করেছে।
এ দিকে, বাড়তি চাহিদার কারণে হু হু করে দাম বাড়ছে ডলারের। গত এক বছরে ডলারের দাম অনেক বেড়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম এখন ৮৪ টাকা ছুঁই ছুঁই।
অবশ্য ডলারের দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতা রপ্তানিকারক ও রেমিটারদের জন্য খুশির খবর হলেও আমদানিতে বেশি খরচ হওয়ায় চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সৌদি আরব ছাড়া অন্যগুলো হচ্ছে—আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।
Posted ৬:০২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed