শনিবার ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

২০৩০ সালের মধ্যে গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হবে : চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলা

হেলাল সাজওয়াল   |   মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   129 বার পঠিত

২০৩০ সালের মধ্যে গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হবে : চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলা

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেছেন, যত পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে চাহিদা অনুযায়ি গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা সম্ভব। তবে আবাসিক খাতকে এ হিসাবের বাইরে রাখতে হবে। দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ প্রত্যাশার কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০০ এমএমসিএফডি। এর মধ্যে ৩০০০ এমএমসিএফডি সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত ২০০০ এমএমসিএফডি আর দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি থেকে সরবরাহ সক্ষমতা ১১০০ (এক্সিলারেট ৬০০ সামিট ৫০০) এমএমসিএফডি। এছাড়া জানুয়ারিতে আরেকটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য টেন্ডার হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৭ সালের দিকে সেখান থেকে আরও ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস আমরা সরবরাহে যুক্ত করতে পারবো। এছাড়া ১০০০ এমএমসিএফডি রি-গ্যাসিফিকেশন ক্ষমতার একটি ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে সেটি তৈরি হতে আরও ৬-৭ বছর লেগে যাবে। একই সাথে দেশে অনুসন্ধানে যদি আরও ৫০০-৬০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়, তবে ২০৩০ সালে আমাদের গ্যাসের মোট উৎপাদন হবে প্রায় ৫০০০ এমএমসিএফডির উপরে। তখন আবাসিক বাদে বাকি সেক্টরগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যদিও তখন চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫৫০০ এমএমসিএফডি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লস জ্বালানি খাতে বিশাল হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনের বেঁধে দেয়া সিস্টেম লস এর চেয়েও বিতরণ কোম্পানিগুলো অধিক হারে সিস্টেম লস করছে। যার মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ১০.৭৮ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৬.৩৮ শতাংশ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ১.৩৪ শতাংশ, কর্নফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ২.০৫ শতাংশ লোকসান দেখিয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ প্রান্তে সরবরাহকৃত গ্যাসের সঠিক পরিমাপ নিরুপনের লক্ষ্যে অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টে মিটারিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা হয়েছে।

এতদিন মিটারিং ব্যবস্থাপনা না থাকায় কোম্পানিগুলো লোকসান দেখাতো আবার কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বাড়তি আয় হিসেবে প্রফিট বোনাসের নামে দেশের জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নিতো। তিনি জানান, এসব বন্ধ করে দেয়ার কারণে একদিকে দেশের সম্পদ রক্ষা হয়েছে অন্যদিকে গ্যাসের চুরি বন্ধ হচ্ছে।

 

সম্প্রতি জিটিসিএল এর সিস্টেম লস মেনে না নেওয়া এবং সিস্টেম লস স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশ সম্পর্কে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, জিটিসিএলকে তাদের আর্থিক লস পোষাতে ট্রান্সমিশন চার্জ ৪৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ২ পয়সা করা হয়েছে। প্রয়োজনে তা বাড়িয়ে ১ টাকা ১০ পয়সা করা যেতে পারে। কিন্তু একটি স্বচ্ছ অ্যাকাউন্টিং প্রক্রিয়াকে নষ্ট করা কোন ভাবেই ঠিক হবে না। মিটার বসানোর ফলে প্রকৃত চিত্র জানা যাচ্ছে। শুধু জিটিসিএল নয় বিপণন কোম্পানিগুলোতেও মিটার বসিয়ে সিস্টেম লস নির্ণয় করে তা কমানো সম্ভব হয়েছে। এতদিন মিটার ব্যবস্থা না থাকার কারণে গ্যাস সঞ্চালন ও সরবরাহ সবখানে গোজামিল দিয়ে চলতো। তিনি বলেন, উৎপাদন কোম্পানিগুলো থেকে জিটিসিএল গ্যাস নেওয়ার সময় মিটারে মেপে নিচ্ছে। পরবর্তীতে বিপণন কোম্পানিগুলোকে দেওয়ার সময় তাদের প্রায় ৩ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে; এর দায় তাদেরকেই নিতে হবে। এটি তাদের কারিগরি লস হিসেবে এডজাস্ট করে ব্যবসা করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে বিইআরসির কাছে অনুরোধ করতে পারি তাদের লস রিকোভার করতে ট্রান্সমিশন চার্জ যেনো কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া হয়। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে আপিল করা হবে বলেও জানান তিনি।
জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ। বর্তমানে চলমান ৪৮ টি কুপ খননের প্রকল্প ছাড়াও; দেশের অভ্যন্তরে থাকা কূপগুলো খনন ও অনুসন্ধানে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে । ২০২৫ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশে অন্তত ১০০টি কূপ অনুসন্ধানের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর সেই টেন্ডার ওপেন করা হবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশে বিভিন্ন কূপ থেকে উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ না হওয়ায় বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে সরকারকে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০১৮ সালের এক আদেশে জিটিসিএল বিতরণ কোম্পানির ইনটেক পয়েন্ট এর বিদ্যমান মিটারিং ব্যবস্থা কার্যকর করার নির্দেশনা প্রদান করে। ওই নির্দেশনার পরে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পূর্বের পদ্ধতি বাতিল করে অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টের (জিটিসিএল বা বিতরণ কোম্পানি কর্তৃক স্থাপিত স্টেশন) মিটারিং অনুযায়ী কোম্পানি ভিত্তিক গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ বিভাজন করবে। সেই অনুযায়ী বিতরণ কোম্পানি সমূহ গ্যাস বিল (উৎপাদন, সঞ্চালন, আইওসি, এলএনজি, পেট্রোবাংলা ও অন্যান্য চার্জ সমূহ) যথাসময়ে পরিশোধের ব্যবস্থা করবে বলে সুপারিশ দেয়।

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি হতে মিটার ব্যবস্থাপনা চূড়ান্তকরণের পরিপ্রেক্ষিতে জিটিসিএল বর্তমানের দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি (বিজিএফসিএল-৯টি, এসজিএফএল-৩টি,ও বাপেক্স-৩টি) ও আইওসি কোম্পানি (শেভরন-৩টি, তাল্লো-১টি) এবং আরএলএনজি (আরপিজিসিএল-২টি) হতে মোট ২১ টি পয়েন্টে উৎসে মিটারিং এর মাধ্যমে মোট গ্যাস সরবরাহের ৭০-৮০ শতাংশ গ্যাস গ্রহণ করছে, যা পরবর্তীতে জিটিসিএল কর্তৃক জাতীয় গ্রিড পাইপ লাইনের মাধ্যমে সঞ্চালন করে ৬টি বিতরণ কোম্পানিতে বর্তমানে মোট ৬৩ টি অফ ট্রান্সমিশন পয়েন্টে (ডিজিটিডিপিএলসি এর সাথে ২৫ টি, বিজিডিসিএল এর সাথে ১৩ টি, জেজিটিডিএসএল এর সাথে ৮ টি, পিজিসিএল এর সাথে ৮টি, কেজিডিসিএলের সাথে ৭টি এবং এসজিসিএল এর সাথে ২টি) মিটারিং এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব মিটারিং ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত যৌথভাবে মিটার রিডিং গ্রহণ, যৌথ ক্যালিব্রেশন, হিসাবকরণ (গ্যাস বিভাজন, ক্রয়, বিক্রয় বিলিং) কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া মোট গ্যাস সরবরাহের অবশিষ্ট ২০-৩০% গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সমূহ অর্থাৎ টিজিটিডিপিএলসি ৪ টি পয়েন্ট, (বিজিএফসিএল-৪টি ) বিজিডিএসএল ২টি পয়েন্ট, (বাপেক্স ২ টি) জেজিটিডিএসএল ৭ টি পয়েন্ট (বিজিএফসিএল-১ টি, এসজিএফএল-৩টি, শেভরন ৩ টি), কেজিডিসিএল ১টি পয়েন্ট (বাপেক্স-টি) এবং এসজিসিএল ১টি পয়েন্ট(বাপেক্স-১টি) এর মাধ্যমে সরাসরি গ্যাস ফিল্ড হতে মোট ১৫টি পয়েন্টে মিটারিং এর মাধ্যমে গ্যাস গ্রহণ করে নিজস্ব সিস্টেমে সঞ্চালন পূর্বক বিতরণ ও বিপনণ করছে। জিটিসিএল কর্তৃক ২১ টি পয়েন্টের মাধ্যমে ইনটেক এবং বিতরণ কোম্পানি সমূহ কর্তৃক সরাসরি গ্যাস ফিল্ড হতে ১৫ টি পয়েন্টের মাধ্যমে ইনটেক হচ্ছে মোট গ্যাস গ্রহণ ও সরবরাহ।

সাক্ষাৎকারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বিতরণ কোম্পানি তিতাসকে বলে দেওয়া হয়েছে তাদের বর্তমান সিস্টেম লস আরো কমাতে হবে, গত কয়েক বছরে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস তাদের সিস্টেম লস অনেকটাই কমিয়ে এনেছে, বর্তমানে তিতাসের সিস্টেম লস ৫ শতাংশ কিন্তু সিস্টেম লস তিন শতাংশের বেশি কাম্য নয়। এজন্য তিতাসের বিতরণ লাইনে নতুন করে মিটার বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে।

তিনি বলেন, তিতাস গ্যাসের লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ রয়েছে, এখন থেকে ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলো গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ সাভার কেরানীগঞ্জ সোনারগাঁ সব এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং এসব এলাকায় এক একটি দলে তিতাসের পঞ্চাশ জনের অধিক করে জনবল থাকবে যাতে যেদিন যেই এলাকায় অভিযান পরিচালিত হবে সেই এলাকার সমস্ত অবৈধ সংযোগ তুলে আনা যায়। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার জ্বালানি খাতে লোকসান কমিয়ে আনতে যুগোপযোগী ভূমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, জনেন্দ্র নাথ সরকার ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন। চাকরির বাইরে তিনি একজন লেখক এবং গবেষক। তিনি ভূমি আইন, চাকরি বিধিমালা, শৃঙ্খলা আপিল বিধি, এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলী বিষয়ক একাধিক বইয়ের রচয়িতা। মডারেটর হিসেবে রয়েছে সুনাম। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসেবেও যোগ দেন তিনি।

 

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৮:৪৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।