
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 817 বার পঠিত
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন পরিস্থিতি খুবই নাজুক। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৩৪টির বাস্তবায়ন হার ৩০ শতাংশের কম। আবার ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ২০ শতাংশের কম অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আইএমইডির তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেশকিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার হতাশাজনক। এর মধ্যে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বরাদ্দের মাত্র ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ২ শতাংশ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। ১ টাকাও ব্যয় করতে পারেনি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৪ শতাংশ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ১৬ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ১৭ শতাংশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১৯ শতাংশ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০ শতাংশ।
মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. জয়েত বখত বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের এ চিত্র বছরের পর বছর ধরে চলছে। দেখা যায় প্রথম ৯ মাসে বাস্তবায়ন হয় ৫০ শতাংশ। শেষের তিন মাসে তড়িঘড়ি করে বরাদ্দের বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়। অর্থবছরের শুরুতে ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব, আইনি জটিলতা, উন্নয়ন সহযোগীদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পরামর্শক সমস্যা প্রভৃতি কারণে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয় না। ফলে শেষের দিকে চ্যালেঞ্জের মুখে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়।
অর্থবছরের অর্ধেক সময়ে বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র তিনটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এগুলো হলো- সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৬১ শতাংশ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ৬০ শতাংশ এবং ৫৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। ৪০ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মধ্যে রয়েছে- অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), শ্রম ও কর্মসংস্থান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ বিভাগ।
আইএমইডির কর্তকর্তারা জানান, এডিপি বাস্তবায়নে এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে জনগণ প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ শেষ সময়ে এসে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো গুণগতমানের চেয়ে অর্থ ব্যয়কে বেশি প্রাধান্য দেয়। যে কোনোভাবে ব্যয়ের প্রবণতার কারণে সরকারের অর্থের অপচয় হয়। প্রতি অর্থবছরের শুরুতে বিভিন্ন কৌশল নিয়েও এই থেকে বের হতে পারছে সরকার।
কর্মকর্তারা আরও জানান, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের বাস্তবায়নের এই পরিস্থিতির কারণে মাঝপথে এডিপির বরাদ্দ কাটছাঁট করতে হয়। ফলে অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকল্পে বাস্তবায়নও বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হয়। মেয়াদ বাড়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যায়। অবার সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এডিপিতে প্রকল্পজট তৈরি হয়। এতে এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয় না।
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো মোট অর্থ ব্যয় করছে ৪৯ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ থেকে খরচ হয়েছে ২৮ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বা ২৫ শতাংশ। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্য নেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিল বরাদ্দ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপির অর্থ ব্যয় হয়েছিল ৪৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ৮০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বেশ কয়েকটি এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় ছয় মাসে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১৬ শতাংশ এবং সেতু বিভাগ ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া অন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২১ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ২২ দশমিক ৮৪ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ২২ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩১ শতাংশ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৩২ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৪৫ শতাংশ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৪৭ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে।
সূত্র : সমকাল।
Posted ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed