| সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 867 বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৭ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী শপথ নেবেন আজ। বঙ্গভবনে বিকালে সাড়ে ৩টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ তথ্য জানান।
সচিব আরও জানান, নতুন মন্ত্রিসভার আকার হচ্ছে ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট। এর মধ্যে মন্ত্রী ২৪, প্রতিমন্ত্রী ১৯ ও উপমন্ত্রী হচ্ছেন তিনজন। তার মধ্যে ৯ জন এই প্রথমবার মন্ত্রী হয়েছেন। নতুন করে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ১৫ জন এবং উপমন্ত্রী হয়েছেন তিনজন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের প্রাপ্ত দপ্তরেরও ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চতুর্থ মেয়াদে অর্থাৎ টানা তৃতীয় মেয়াদে এক ঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরু হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আ ক ম মোজাম্মেল হককে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, ওবায়দুল কাদেরকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে, ড. আবদুর রাজ্জাককে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ড. আবদুর রাজ্জাক এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। আসাদুজ্জামান খান কামালকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই রাখা হয়েছে। তিনি এর আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সর্বশেষ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ড. হাছান মাহমুদকে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এর আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আনিসুল হককে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি গত মন্ত্রিসভায়ও একই দায়িত্ব পালন করেছেন। আ হ ম মোস্তফা কামালকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এর আগে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ডা. দীপু মনিকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল মান্নানকে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি গত মন্ত্রিসভায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জাহেদ মালেক স্বপনকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এর আগে একই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
নুরুজ্জামান আহমেদকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এর আগে খাদ্য প্রতিমন্ত্রী এবং সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এর আগে একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থপতি ইয়াফেস ওসমানকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রীর (টেকনোক্র্যাট) দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং মোস্তাফা জব্বারকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি গত মন্ত্রিসভায় একই মন্ত্রণালয়ের টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। মোস্তাফা জব্বার ও ইয়াফেস ওসমান এবারও টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
শ ম রেজাউল করিমকে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য এবং নতুন করে মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। শাহাব উদ্দিনকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিযয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রথমবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। বীর বাহাদুর উশৈসিংকে নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নুরুল ইসলাম সুজনকে নতুন করে রেলপথমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাজুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাকে নতুন করে এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ড. আবদুল মোমেনকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এর আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে নতুন করে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজীকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন করে সাধনচন্দ্র মজুমদারকে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং টিপু মুনশিকে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী হলেন যারা : নতুন করে কামাল আহমেদ মজুমদারকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী, ইমরান আহমদকে প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, জাহিদ আহসান রাসেলকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, আশরাফ আলী খান খসরুকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, খালিদ মাহমুদকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, জাকির হোসেনকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, ফরহাদ হোসেনকে জনপ্রশাসন, স্বপন ভট্টাচার্যকে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী, জাহিদ ফারুককে পানিসম্পদ, মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, শরিফ আহমেদকে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, কেএম খালিদকে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, ডা. এনামুর রহমানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী, মাহবুব আলীকে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এবং শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এছাড়া নসরুল হামিদকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী পদে বহাল রাখা হয়েছে। বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল মেয়াদে একই দায়িত্ব পালন করেছেন। শাহরিয়ার আলমকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনি এই পদে বিগত মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জুনায়েদ আহমেদ পলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী। তিনি এর আগে একই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উপমন্ত্রী হলেন যারা : বেগম হাবিবুন নাহারকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপমন্ত্রী, এনামুল হক শামীমকে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এবং মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আপাতত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের এটাই চূড়ান্ত তালিকা।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন। তার মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এমপিরা ছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নবনির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়েছেন। জয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং সব মিলিয়ে চতুর্থ বারেরমতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করবেন, সেই সংখ্যক অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে দশ ভাগের ৯ ভাগ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ দশ ভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবেন দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি নির্বাচন বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের।
Posted ২:৩৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed