
বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 688 বার পঠিত
বাজারে প্রচলিত তরল দুধের ৯৬ ব্র্যান্ডের মধ্যে ৯৩টির নমুনায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে। হাইকোর্টে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তবে কোন কোন কোম্পানির দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট না করায় ওইসব কোম্পানির নাম আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের নাম-ঠিকানাও দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ মে’র মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এ তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের হয়ে আদালতে ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী ফরিদুল আলম। অন্যদিকে শুনানিতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার দুধ ও দইয়ে ভেজাল-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, বাজার থেকে সংগৃহীত কাঁচা তরল দুধের ৯৬ নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই সিসা, অ্যান্টিবায়োটিক অণুজীব পাওয়া গেছে। প্যাকেটজাত দুধের ৩১ নমুনার মধ্যে ১৮টিতেই ভেজাল পাওয়া গেছে। এছাড়া দুধ ও দইয়ে উচ্চমাত্রার বিভিন্ন রাসায়নিক পাওয়া গেছে। কোন কোন কোম্পানি দুধে এই ভেজাল বা রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সঙ্গে জড়িত, প্রতিবেদনে তাদের নাম-ঠিকানা না দেওয়ায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে গরুর দুধ, দই এবং গোখাদ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, সিসা রয়েছে তা নিরূপণের জন্য একটি জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে খাদ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব, কৃষি সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সব সদস্য, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি এবং বিএসটিআই চেয়ারম্যানকে জরিপের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিতায় গতকাল মামলাটি শুনানির জন্য আসে। এরপর এ আদেশ দেন আদালত।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাভির খোলা দুধের ৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ দুধেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর অণুজীব। ১৫ শতাংশ দুধে মিলেছে মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা। ১৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি টেট্রাসাইক্লিন, ৯ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও তিন শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আফলাটক্সিনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাজারে থাকা প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার ৬৬-৮০ শতাংশে বিভিন্ন অণুজীব, ৩০ শতাংশে একইভাবে মানুষের শরীরের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার টেট্রাসাইক্লিন, একটিতে বেশি মাত্রার সিসা, কয়েকটিতে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও এনরোফ্লোক্সাসিন পাওয়া গেছে।
এর আগে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের আলোকে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ওইদিন আদেশ দেন।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ চার থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে সাত দশমিক ৬৬ পর্যন্ত। আফলাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা শূন্য দশমিক পাঁচ হলেও পাওয়া গেছে শূন্য দশমিক ৯৯৬ পর্যন্ত। টেট্রাসাইক্লিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৬৭১.১৩ পর্যন্ত, সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ১৪৮.৩৬ পর্যন্ত। কীটনাশকের মাত্রা পাঁচ সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৯.৫০-১৬.২০ পর্যন্ত। প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে টেট্রাসাইক্লিনের সহনীয় মাত্রা ১০০ হলেও দেশীয় প্যাকেটজাত দুধে পাওয়া গেছে ১৮৭.৫৮ পর্যন্ত। আমদানি করা প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে এ উপাদানের মাত্রা ৭১৭.৮২ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আর আফলাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা শূন্য দশমিক পাঁচ হলেও পাওয়া গেছে এক শূন্য দশমিক ৯৩ পর্যন্ত।
Posted ২:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed