বিবিএ নিউজ.নেট | বুধবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট | 309 বার পঠিত
আবেদ হোল্ডিংসের ফ্লোর স্পেসের বকেয়া পরিশোধে গড়িমসি করছে বীমা খাতের প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ( ডেল্টা লাইফ)। এই বীমা কোম্পানির কাছে বকেয়া বাবদ ৪০ কোটি ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯১ টাকা পাওনা রয়েছে আবেদ হোল্ডিংস। এই ফ্লোর স্পেস নির্মাণে সম্পূর্ণ টাকা ব্যাংক থেকে লোন নেয়া হয়েছিল। আর সেই ব্যাংক লোনের টাকার সুদ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আবেদ হোল্ডিংসের।
আইডিআরএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদ আবেদ হোল্ডিংসের কাছ থেকে ক্রয় করা ফ্লোর স্পেসের বকেয়া দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করছে না। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ৭ বছর ধরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিকট আবেদন করেছে। তবে আইডিআরএ এ ব্যাপারে কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম বরকতুল্লাহ বলেন, প্রথম যখন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে ফ্লোরটা দেয়ার ব্যাপারে কথা হয় তখন (২০১৩ সালে) রাজনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। সেই জন্য কনস্ট্রাকশন করতে বিলম্ব হয়। আর সেই দেরি হওয়ার কারণেই তারা নিজস্বভাবে আমার কাছ থেকে টাকা কেটে নিয়ে বলছেন, আর টাকা দিবে না। তারপর আমি তাদের বলি এটাতো হতে পারে না। আমরা এটা নিয়ে বসতে পারি এবং আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান বেড় করতে পারি। তারপর যদি না হয় তাহলে আমরা কোর্টে যেতে পারি। কিন্তু তারা কোর্টে যায়নি। তবে সেই ক্ষেত্রে আমরা আরবিট্রেটর নিয়োগ করেছিলাম। আর সেই আরবিট্রেটরের সাথে কথা বলেও কিছু হয়নি।
তিনি বলেন, বিষয়টা আমরা আইডিআরএ কে জানিয়েছে যে ডেল্টা লাইফ আমাদের কাছ থেকে একটা ফ্লোর নিয়ে খালি ফেলে রেখেছে। এতে ডেল্টা লাইফের যেসকল শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যদি এই ফ্লোরটার ভাড়া দেয়া হত তাহলে মাসিক ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা আসত। এত দিনে প্রতিষ্ঠানটির ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার মত অতিরিক্ত মুনাফা হত। তবে এ ব্যাপারে আইডিআরএ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে এবং তারা তাদের মত কাজ করছেন কিন্তু এতদিন হয়ে গেলেও সঠিকভাবে কোনো কাজ হয়নি।
একেএম বরকতুল্লাহ বলেন, ডেল্টা লাইফে আগে যারা প্রশাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তারাও আমাদের নিয়মিত আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের এই আশ্বাসের মধ্যেই সময় শেষ হয়ে গেছে। কাজের মত কোনো কাজ হয়নি। মোট কথা আমাদের এই বিষয়টাকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা অন্যসব বড় বড় বিষয় নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকেন। এখন আবার ডেল্টা লাইফে যে নতুন প্রশাসক এসেছেন আমরা তাদের চিঠির মাধ্যমে বিষয়টা অবগত করেছি তারাও আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন এমডি স্যারের সাথে কথা বলে বিষয়টা সমাধান করবেন। তাদের এই আশ্বাসের মধ্যেই আমরা এখনো আছি। তবে আমরা চাই অতি দ্রুত শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টির সমাধান হোক। কারণ আমরা ওই বিল্ডিংয়ের কাজ সম্পন্ন করেছি লোনের মাধ্যমে। আর সেই ব্যাংক লোন বাবদ প্রতিবছর অনেক টাকা ব্যাংকে দিতে হচ্ছে। তাই এর সঠিক সমাধান হওয়া জরুরি।
তিনি আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত তারা বিষয়টা নিয়ে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। ওখানে গিয়ে বিষয়টা বেকট করতে চেয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট অর্ডার দিয়েছেন বিষয়টা নিয়ে প্রশাষক নিয়মিত কাজ করবে। এখন প্রশাসক বিষয়টা দেখছেন আর আমরা তাদের সাথে আলোচনা করে যাচ্ছি। তবে আমরা চাচ্ছি বিষটা যেন শান্তিপূর্ণভাবে মিমাংসা হয়। কিন্তু ডেল্টা লাইফ তা করছে না। আমি তাদের আরও বলেছি যে আপনারা আমাদের টাকা দিয়ে দেন তাহলে অতি শিঘ্রই আমি ফ্লোরের রেজিস্ট্রি করে দিব। কিন্তু টাকাও দিচ্ছে না আবার রেজিস্ট্রিও করছে না। আর যদি টাকা না দেই তাহলে আমরা কোনো দিন ওই ফ্লোরের রেজিস্ট্রি করে দিব না। যদি রেজিস্ট্রি করে না দেই তাহলে তারা কোনো দিন এই ফ্লোরের মালিক হতে পারবেনা। এতে ক্ষতিটা তাদের বেশি হবে।
এর আগে প্রাথমিক পর্যায়ে ভবন পরিচালনার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে গত ২০১৫ সালের জুন মাসে সকল সার্ভিস চার্জ প্রতি বর্গফুট ৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক ইউটিলিজ এর মূল্য এবং অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ধার্যকৃত হারের সংগৃহীত অর্থ দ্বারা অত্র ভবন পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয়নি বিধায় পূর্বে নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ পরিবর্তিত হয়ে গত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সার্ভিস চার্জ প্রতি বর্গ ফুট ১২ টাকা হারে পুনঃনির্ধারণ করা হয়। নিধারণ করা চার্জ ওই ভবনে অবস্থিত অন্য তিনটি বীমা কোম্পানি পরিশোধ করলেও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স তা এখনও পরিশোধ করেনি। তাই বিষয়টি উভয়পক্ষের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করেছে আবেদ হোল্ডিংস লিমিটেড।
এসিএনএবিআইএন নামের বাংলাদেশের একটি চার্টার্ড ফার্ম আবেদ হোল্ডিংসের অফিসে গিয়ে তাদের বকেয়া দাবীর বিষয়টি নিশ্চিত হয়। কিন্তু চার্টার্ড ফার্ম তাদের পাওনা টাকা আদায়ের ব্যাপারে কোনো প্রকার অগ্রগতি দেখায় নি। পরে আবেদ হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা কর্তৃক আইডিআরএ কাছে চিঠি তিনটি প্রেরণ করে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪/০২/২০১২ তারিখে আবেদ হোল্ডিংস কর্তৃক নির্মিত ভবন ডিআর টাওয়ারের ৯ম তলার ফ্লোর ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নিকট বিক্রির জন্য চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়। আর সেই চুক্তি মোতাবেক ২০/০২/২০১২ তারিখে একটি বায়নানামা দলিল সম্পাদিত হয়। চুক্তিপত্র ও বায়নানামা দলিলের শর্তানুযায়ী, ২০১৩ সালের জুন মাসে ফ্লোর স্পেস হস্তান্তরের তারিখ নির্ধারিত ছিল।
Posted ৩:৩৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy