| মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট | 692 বার পঠিত
জাতির পিতার স্মৃতিধন্য দেশের বীমা খাতটি বিগত ৫০ বছর ছিলো অনেকটাই নিরবে নিভৃতে। ছিল সবচেয়ে অবহেলার পাত্রও। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতার কন্যা ২০০৯ সালে দেশের দায়িত্বভার গ্রহনের পর থেকেই এ খাতের উন্নয়নে নিয়েছেন নানা উদ্যমী পদক্ষেপ। ফলে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বীমা কোম্পানিগুলো। অর্থনীতির অন্যতম এই খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেই কার্যক্রম এখন আরো বেগবান।
স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ৫০ বছরে বীমা খাতের উন্নয়ন, অগ্রগতি, অন্তরায় ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন-এর সঙ্গে। নিম্নে তার সাথে কথোপকথনটি তুলে ধরা হলো:
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কিভাবে গঠন হয়, এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. এম মোশাররফ হোসেন: ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০’ এর ভিত্তিতে ২৬ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করা হয়। আইডিআরএ’র আইন অনুযায়ী ১ জন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্য নিয়ে কর্তৃপক্ষ গঠিত করা হয়। সম্ভাবনাময় বীমা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৩৮ সালের বীমা আইন রহিত করে ২০১০ এর ১৮ মার্চ ‘বীমা আইন, ২০১০’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে। একইদিনে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০’ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে একজন চেয়ারম্যান এবং দুইজন সদস্য ও ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে আইডিআরএ সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারি জীবন বীমা কর্পোরেশন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, সর্বশেষ লাইসেন্স প্রাপ্ত আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিসহ ৩৪ টি বেসরকারি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও ৪৫ টি বেসরকারি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিসহ সর্বমোট ৮১ টি বীমা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বীমা ব্যবসা পরিচালনা করছে। এছাড়া, ১৩৭ টি বীমা জরিপকারী নন-লাইফ বীমা শিল্পের বিভিন্ন জরিপ কার্য পরিচালনা করে বীমা শিল্পে ভূমিকা রাখছে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: আইডিআরএ প্রতিষ্ঠার এক দশক পেরিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পূর্বে ও পরে বীমা খাতে অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাই।
ড. এম মোশাররফ হোসেন: ২০১১ সালে আইডিআরএ প্রতিষ্ঠার আগে লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির পরিসংখ্যান দেখলেই আমরা বিষয়টি ক্লিয়ার হতে পারবো। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা কোম্পানির গ্রোস প্রিমিয়াম ছিলো যথাক্রমে ৪৯২৮ ও ১৩৯০ মিলিয়ন টাকা সেখানে ২০১৯-২০ সালে এই অবস্থান হলো ৯৫০১ ও ৪৪০২ মিলিয়ন টাকা। এ সময়ে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬২১৫ ও ৯১৭৩ মিলিয়ন টাকায়, যা তৎকালীন সময়ে ছিল ৩৩২৮৯ ও ৯৭৩৭ মিলিয়ন টাকা। এছাড়া দাবীর পরিমাণও সে সময়ের তুলনায় অনেকগুন বেড়েছে। ২০০৮-০৯ সালে লাইফ ও নন-লাইফে দাবীর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৫৮২৬ ও ৫২১ মিলিয়ন টাকা, যা বর্তমানে ৭৭৪৫ ও ১০৯২ মিলিয়ন টাকা।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: কর্তৃপক্ষ গঠনের পর এখন পর্যন্ত কতটি আইন ও বিধি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে?
ড. এম মোশাররফ হোসেন: কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ (তিন) টি আইন, ১০ (দশ) টি বিধি এবং ১৫ (পনের) টি প্রবিধান গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। অবশিষ্ট ৪ (চার) টি বিধি ও ১৬ (ষোল) টি প্রবিধি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রণীতব্য বিধি ও প্রবিধান ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়িত হলে বীমা শিল্পে উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধন সম্ভব হবে। ১৯৭৩ সালের বীমা কর্পোরেশন আইনকে রহিত করে সময়োপযোগী নতুন ‘বীমা কর্পোরেশন আইন, ২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: বীমায় সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্রাহকের আস্থার সংকট। এই সংকট দূর করতে আইডিআরএ কী কাজ করছে?
ড. এম মোশাররফ হোসেন: আপনি সঠিক কথাই বলেছেন। বীমার প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার সংকট এ শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বীমা গ্রাহকদের প্রাপ্য দাবির অর্থ যথাসময়ে এবং যথাযথভাবে পরিশোধ না করার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। ফলশ্রুতিতে বীমা আর্থিক খাতের অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। বীমাখাতের আস্থার সংকট নিরসণ করার লক্ষ্যে আইডিআরএ বহুবিধ ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে হলো- ক) বীমাগ্রাহকদের যে সকল অভিযোগ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে জমা হয় সে গুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একজন সদস্যের নেতৃত্বে একটি সেল গঠন করা হয়েছে এবং পাঁচজন কর্মকর্তা এ বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। খ) বীমা করলে টাকা পাওয়া যায় না এমন একটি ধারণা সমাজে বদ্ধমূল ছিল। বীমার প্রতি যাতে গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং কোম্পানিগুলো বীমার টাকা পরিশোধ করে এমন ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সদস্য, কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত থেকে জনসম্মুখে সভা করে কোম্পানিগুলোর বীমা দাবির অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। বিগত ৩ বছরে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বীমা দাবি এ প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে। এতে করে বীমা করলে সহজে টাকা পাওয়া যায় এ ধরণের একটি ইতিবাচক ধারণা সমাজে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। গ) বীমাকারীর ওয়েবসাইটে দাবি সংক্রান্ত তথ্যসহ বীমা পণ্য সম্পর্কিত ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে আপালোড করার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রতিটি কোম্পানি জনসচেতনতামূলক ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে সেগুলো আপলোড করছে। বীমা বিষয়ে অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তিতে হট লাইন/শর্ট কোড গ্রহণ: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বীমা দাবি নিষ্পত্তি বা বীমা বিষয়ে যে কোন অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তিতে হট নম্বর/শর্ট কোর্ড গ্রহণ করা প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিঃ এর শর্ট কোর্ড অর্থাৎ হট লাইন নম্বরটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রাপ্ত হলে বীমা সংক্রান্ত অভিযোগসহ সকল অভিযোগ নিষ্পত্তিতে একটি যুগান্তকারী সূচনা হবে বলে আমরা মনে করে।
তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে বীমা দাবি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে নিরীক্ষিত হিসাব মতে লাইফ ও নন-লাইফ সেক্টরে মোট বীমা দাবির পরিমাণ ছিল ৯৮,২৮৫.৭৭ মিলিয়ন টাকা যার মধ্যে ৭৯.৭৭% বা ৭৮,৪০৪.১৭ মিলিয়ন টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২০ এর অনিরীক্ষিত হিসাব মতে ১,০৭,১৬২.৭৭ মিলিয়ন টাকা বীমা দাবির মধ্যে ৭২.৯৮% পরিশোধ করা হয়েছে যার পরিমাণ ৭৮,২০৭.৭৭ মিলিয়ন টাকা।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: বীমার প্রচার ও প্রসারে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
ড. এম মোশাররফ হোসেন: বীমা শিল্প প্রচার ও প্রসারে অনেক পিছিয়ে আছে যার ফলে পেনিট্রেশন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না। এ জন্য বিগত বছরগুলোতে আমরা যে সব পদক্ষেপ নিয়েছি, সেগুলো হলো –
ক) জাতীয় বীমা দিবস উদযাপন: স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রধান (কনট্রোলার অব এজেন্সি) হিসেবে যোগদান করেছিলেন। দিনটি স্মরণে ১ মার্চ তারিখে জাতীয় বীমা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয় যা বীমা শিল্পের জন্য মাইলফলক। ২০২০ সালের ১ মার্চ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথম জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধন করেন। এ কারণে ২০২০ সালে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণার পর থেকে দেশব্যাপী অর্থাৎ বিভাগীয় শহরসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই দুই বছর আড়ম্বরপূর্ণভাবে জাতীয় বীমা দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দু’বারের জাতীয় বীমা দিবসেন উদ্বোধন করেন। তিনি বীমা পরিবারের সাথে থেকে বীমা শিল্পের বিকাশে যে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখছেন তাতে বীমা শিল্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।
খ) ডকুমেন্টারি ও টিভিসি প্রচার: বীমা শিল্পের প্রসারে ডকুমেন্টারি ও টিভিসি (টেলিভিশন কমার্শিয়াল) প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বীমা শিল্পে অবদান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বীমা শিল্পের উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের আদ্যোপান্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সকল বীমাকারীকে এই ডকুমেন্টারি প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গ) প্রতি বছর বীমা মেলার আয়োজন: মানুষকে সম্পৃক্ত করার অন্যতম মাধ্যম হল মেলা। এ লক্ষ্যে প্রতি বছর বিভাগীয় পর্যায়ে বীমা মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে ঢাকায়, ২০১৭ সালে সিলেটে, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে এবং ২০১৯ সালে খুলনাতে বীমা মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। মাঝখানে করোনার বিধি নিষেধের কারণে দুই বছর এই মেলা করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী বছর আমরা আবারও এই মেলা আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল বিভাগে এই মেলা আয়োজন করা হবে। বীমা মেলার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে বীমার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার পাশাপাশি বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয় যার ফলে বীমার প্রতি মানুষের যে অনাস্থা তা কমে আসছে।
ঘ) দেশব্যাপী বিলবোর্ড স্থাপন: বীমার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি ও আগ্রহ তৈরির জন্য দেশব্যাপী বিলবোর্ড স্থাপনের জন্য বীমা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে কিছু বিলবোর্ডও স্থাপন করেছে এবং এ কার্যক্রমটি অব্যাহত রয়েছে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীতে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে?
ড. এম মোশাররফ হোসেন: বাঙালি ও বাংলাদেশী জনসাধারণের হৃদস্পন্দন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী সমগ্র জাতিই মহা সমারোহে উদযাপন করেছে। বীমা খাতও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর এমন বিরল সময়ে আমরা যে পদক্ষেপ গুলো নিয়েছে সেগুলো মধ্যে রয়েছে-
ক) বঙ্গবন্ধু আশার আলো- বীমা দাবি পরিশোধের প্রয়াস (মৃত্যুদাবির চেক বিতরণী অনুষ্ঠান): সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমা পরিবারেরই একজন সম্মানিত সদস্য। এ মহামানবের হাত ধরেই স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত বীমা শিল্পের পত্তন এবং প্রসার ঘটেছিল। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন তথা বীমা শিল্পে জাতির পিতার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ “বঙ্গবন্ধু আশার আলো-বীমা দাবী নিষ্পত্তির প্রয়াস” নামে একটি অনলাইন অনুষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিটি জীবন বীমাকারীর প্রদেয় মৃত্যু দাবির চেক হস্তান্তর করা হয়। “বঙ্গবন্ধু আশার আলো – বীমা দাবি পরিশোধের প্রয়াস” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অদ্যাবধি সর্বোমোট ৪৭,৩৮,৩৪,৩৩৬.০০ টাকার মৃত্যুদাবীর চেক বীমা গ্রাহকদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
খ) ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ০১ মার্চ ২০২১ তারিখে জাতীয় বীমা দিবসে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ এর শুভ উদ্বোধন করেন। মাতা/পিতা/আইনগত অভিভাবক এর মৃত্যু বা দুর্ঘটনাজনিত সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী অক্ষমতা/পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে সন্তানের লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয় সে বিষয়ে বিবেচনায় রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক শিক্ষার্থীদের বীমার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ এর আওতায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি ও মাদ্রাসা (মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত) শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত।
গ) বিভিন্ন বীমা পরিকল্প বাস্তবায়ন: ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ ছাড়াও ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু কম্প্রিহেনসিভ স্পোর্টস ইন্সুরেন্স’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আবার ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ এর বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষসহ সকল বীমাকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু বীমা পুরস্কার’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বীমা বৃত্তি’ চালুর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: বীমা খাত আধুনিকীকরণে আপনারা এখন পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ড. এম মোশাররফ হোসেন: বীমা খাতের উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ডিজিটাইজেশনের কোন বিকল্প নেই। গ্রাহক পর্যায়ে তথ্যের অপর্যাপ্ততা বীমা শিল্পের অন্যতম বড় একটি সমস্যা। গ্রাহকরা সময় সময় বিভিন্ন তথ্য জানতে চায় যেমন: বীমার টাকা জমা হল কিনা? পরবর্তী কিস্তি কখন জমা দিতে হবে? জমার রশিদ যদি হারিয়ে যায় তাহলে কি হবে? এসকল প্রশ্নের উত্তর যখন গ্রাহকরা পায়না তখন তাদের মধ্যে এক ধরণের অনাস্থা তৈরী হয় যার ফলে অনেক পলিসি গ্রাহক কিছুদিন প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেওয়ার পর আর প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিতে উৎসাহিত হয় না। আবার অনেকে দিলেও সব সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন। এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ Unified Messaging Platform (UMP) নামক একটি প্রযুক্তি বিগত ২০১৯ সালে গ্রহণ করে। স্টেট-অব-দ্যা-আর্ট প্রযুক্তি সম্পন্ন সর্বাধুনিক এই ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকদের পরিচিতি, বীমা পলিসির মেয়াদ, জমাকৃত প্রিমিয়ামের বিবরণসহ প্রায় ২৭ ধরণের তথ্যাদি সংরক্ষণ করা হচ্ছে যেগুলো ব্যবহার করে বীমা গ্রাহকদেরকে বিগত ২২ মার্চ ২০২০ থেকে চালু করে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যেমন: প্রিমিয়াম জমার পর এসএমএস প্রেরণ, প্রিমিয়াম রিমাইন্ডার মেসেজ প্রেরণ, বকেয়া প্রিমিয়ামের জন্য মেসেজ দেয়া এবং ইলেকট্রনিক প্রিমিয়াম রিসিপ্ট।
এছাড়া বাংলাদেশের বীমা খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে ১১৮.৫০ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ৫১৩.৫০ কোটি টাকাসহ মোট ৬৩২.০০ কোটি টাকার যৌথ অর্থায়নে Bangladesh Insurance Sector Development Project (BISDP) প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনকে পেশাদারিত্ব এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সকল বীমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। দেশের সকল বীমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসলে বীমা খাতের উন্নয়নের সাথে সাথে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হবে, ফলশ্রুতিতে বীমা গ্রাহকদের আস্থার সংকট নিরসন হবে এবং বীমা খাতের প্রিমিয়াম আয়সহ সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: ভবিষ্যতে শক্তিশালী বীমা খাত গঠনে কী কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে?
ড. এম মোশাররফ হোসেন: আগামীতে শক্তিশালী বীমা খাত তৈরীতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে আমরা এমন একটি বীমা খাত পাবো যা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে এবং উন্নত দেশের মতো জিডিপিতে আমাদের যে লক্ষ্য সেখানে বীমাকে পৌঁছে দেবে।
অ্যাকচ্যুয়ারিয়াল প্রফেশনাল তৈরি: বীমা ক্ষেত্রে একচ্যুয়ারিয়াল প্রফেশনালসগণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে একচ্যুয়ারিদের সহযোগিতা ব্যতিত কোম্পানি পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে দেশে একচ্যুয়ারিয়াল প্রোফেশনাল তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাথে সমন্বয় করে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কর্তৃপক্ষের বাজেটে এ খাতে ১ কোটি টাকাও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ বীমা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাক একচ্যুয়ারি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২ বছর মেয়াদী মাস্টার্স প্রোগ্রামের বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্টিয়ারিং কমিটি ও বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ভর্তিচ্ছুদের জন্য বিজ্ঞাপন ও ফরম প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া জীবন বীমা কোম্পানিসমূহে একচ্যুয়ারিদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি বীমা কোম্পানিতে একচ্যুয়ারিয়াল বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রবাসী কর্মীদের জন্য বীমা সুবিধা চালু: প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ শ্রম বিনিময়ের উদ্দেশ্যে প্রবাসে যায়। প্রবাসে তারা নানা প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করে থাকে। প্রবাসে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে মারা যায় আবার অনেকে মানসিকভাবে সমস্যায় ভুগে। তাদের এদুরবস্থা বিবেচনায় নিয়ে প্রবসীকর্মীদের জন্য বীমা সুবিধা চালুর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়পূর্বক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রবাসী কর্মী বীমা নীতিমালা প্রস্তুত করে। যার আলোকে জীবন বীমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে প্রবাসগামী সকল কর্মী বর্তমানে বীমার আওতায় চলে এসেছে। এ বীমা স্কিমের আওতায় দুই ধরণের বীমা সুবিধা রয়েছে প্রথমটির প্রিমিয়াম হার ৯৯০ টাকা এবং বীমা অংকের পরিমাণ ২০০০০ টাকা এবং দ্বিতীয়টির প্রিমিয়ামের পরিমাণ ২৪৭৫ টাকা এবং বীমা সুবিধার পরিমাণ ৫,০০,০০০ টাকা। গ্রাহকের মৃত্যুতে বীমা অংকের শতভাগ প্রদান করা হবে তাছাড়া, চোখ, হাত সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের হানি হলেও বীমা অংকের শতভাগ প্রদান করা হবে। তাছাড়া, আংশিক অঙ্গহানির ক্ষেত্রে ক্ষতির মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে আংশিক বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে।
দ্রুত বীমা দাবি নিষ্পত্তি : বীমা বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তনের লক্ষ্যে বীমা দাবি নিষ্পত্তির বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে করে কর্তৃপক্ষের মনিটরিং টিম এবং বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। বীমা বিষয়ে জনসচেনতা বৃদ্ধির জন্য বীমা কোম্পানির বীমাদাবী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে বীমা বিষয়ে গ্রাহকদের ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থ পাচার রোধে পদক্ষেপ: অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কে একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে কর্তৃপক্ষ থেকে বীমা কোম্পানিসমূহকে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়। প্রতি বছর চিফ অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার (ক্যামেলকো) এর অংশ গ্রহণে সম্মেলন করা হয়। উক্ত সম্মেলণে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন রোধে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। জাতীয় বীমা নীতি, ২০১৪ এর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ এর Financial Intelligence Cell (FIC) গঠন করা হেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর অনুরোধে এবং সন্ত্রাসে অথায়ন রোধে সকল বীমা কোম্পানির জন্য অভিন্ন কণঈ ফরম চালু করা হয়েছে ।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: বীমায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
ড. এম মোশাররফ হোসেন: আমরা এখন পর্যন্ত স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ইনোভেশন টিম গঠন করেছি। ইনোভেশন টিম বীমা সেবার বিকাশ এবং অনিয়ম প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত নতুন উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে কাজ করছে। পাবলিক সার্ভিসেস সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পরে প্রশাসনিক দক্ষতা অনেক উন্নত হয়েছে, যার ফলে কর্তৃপক্ষের পরিসেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। A2i হতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদেরকে একাধিকবার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের উদ্ভাবনী দল নিরলসভাবে বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা প্রবর্তন করে, যেমন-বীমা নম্বরযুক্ত গাড়ির সাথে যোগাযোগের নম্বরসহ বীমাকারীর নাম উল্লেখ করে একটি স্টিকার লাগানো, যাতে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি সহজেই এবং দ্রুততম উপায়ে বীমাকারীর নিকট দাবি উত্থাপন করতে পারে। বীমা কোম্পানি পরিদর্শন: একটি পুর্নাঙ্গ পরিদর্শন ম্যানুয়াল তৈরী করে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। বীমা শিল্পে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বীমা কোম্পানির শাখাগুলোতে নিয়মিতভাবে পরিদর্শন দল প্রেরণ করা হয় এবং পরিদর্শনের প্রেক্ষিতে শুনানিঅন্তে বীমা আইন, ২০১০ এর সংশ্লিষ্ট বিধান মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বীমা জরিপ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিধি প্রণয়ন: বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ১৩৯ টি লাইসেন্সধারী বীমা জরিপকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪১টি, খুলনা বিভাগে ৩টি এবং বগুড়া ১টি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান কার্যরত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যরত জরিপকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ নিম্নরূপ ০৭ (সাত) শ্রেণির জরিপকার্য পরিচালনা করে থাকেঃ (১) অগ্নি, (২) মটর, (৩) নৌ-কার্গো, (৪) নৌ-হাল, (৫) এভিয়েশন, (৬) ইঞ্জিনিয়ারিং এবং (৭) অন্যান্য। ২০১৮ সনে জরিপের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রবিধানমালা জারি করা হয়। সেন্ট্রেল রেটিং কমিটি গঠন: নন-লাইফের প্রিমিয়াম ট্যারিফ নির্ধারণে কর্তৃপক্ষ বীমা আইনের বিধান মোতাবেক গঠিত সেন্ট্রেল রেটিং কমিটি’ কর্তৃক ট্যারিফ সংশোধণীর প্রস্তাব কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: নতুন নতুন পরিকল্প নিয়ে কার্যক্রম চলমান আছে কিনা?
ড. এম মোশাররফ হোসেন: আমরা এ পর্যন্ত অনেক নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছি, যেগুলো নিয়ে কাজ চলছে এবং ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- হাওর এলাকার কৃষকদের জন্য শস্য বীমা সুবিধা চালু: কৃষি আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। কৃষদের কষ্টের বিনিময়ে উৎপাদিত ফসল নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এছাড়া, যাদের জীবিকা সম্পূর্ণরূপে কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল তারা ফসলের ক্ষতিতে মারাত্মক ভাবে বিপদ গ্রস্থ হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশে বাণিজ্যিকভাবে কৃষি বীমা চালুর জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বীমাকারীদের সাথে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫,০০০ কৃষককে নিয়ে বাগেরহাট ও নেত্রকোনায় পরীক্ষামূলকভাবে কৃষি বীমা চালু করেছে যার ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যাঞ্ছক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় ঝুঁকি প্রবণ হাওড় এলাকায় শস্য বীমা চালু এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি নিরসনের লক্ষ্যে বীমাকারীদের সাথে আলোচনাক্রমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কনসেপ্ট পেপার তৈরি করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। কৃষি বীমা বিষয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষকরা যেমন আর্থিক নিরাপত্তা পাবে তেমনিভাবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। স্বাস্থ্য বীমা প্রচলন: রাষ্ট্র মালিকানাধীন জীবন বীমা কর্পোরেশন সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত বীমা পরিকল্প তৈরি করে কার্যক্রম গ্রহণ করার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘স্বাস্থ্য কর্মসূচী প্রকল্প’ নামে একটি বীমা প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে টাঙ্গাইলের কালিহাতি, মধুপুর এবং ঘাটাইল উপজিলায় বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া, সর্বসাধারণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা চালুর জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা সাশ্রয়ী ও কার্যকরী বিবেচিত হলে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরণ করা হবে।
অগ্নি / ভূমিকম্পসহ বড় ধরনের দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে বড় ভবনগুলোর বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় নিয়ে আসা: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে সরকারি ও বেসরকারি বৃহৎ স্থাপনা/ভবনসমূহের ঝুঁকি নিরসনে বীমার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মনোযোগ আকর্ষণ করে পত্র প্রদানের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে এবং উক্ত পত্রের অনুলিপি অবহিতকরণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গৃহায়ন ও পূর্তমন্ত্রণালয়ের সচিব এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সকল বিভাগীয় শহরের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট প্রেরণ করা হয়। তাছাড়া সকল বেসরকারি বীমা কোম্পানিকেও তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন ভবন বা ভাড়াকৃত ভবনকে বীমার আওতায় আনার জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ব্যাংকাসুরেন্স (Banassurance) পদ্ধতি চালুকরণ: ব্যাংলাদেশে বীমা পণ্যের বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ এজেন্ট নির্ভর। কিন্তু উন্নত বিশ্ব এমনকি ভারত ও নেপালেও ব্যাংকাসুরেন্স পদ্ধতিতে বীমা পরিকল্প বাজারজাত করা হচ্ছে, এতে করে ব্যাংক হিসাব রয়েছে এমন বৃহৎ একটি শ্রেণীর নিকট বীমা সুবিধা পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংকাসুরেন্স পদ্ধতি চালুর জন্য ইতোমধ্যে দুটি বীমাকারীকে পাইলটিং করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে এছাড়া, এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্যাংকাসুরেন্স ব্যাবস্থা চালু করা গেলে প্রায় ৮ কোটি ব্যাংক হিসাবধারীর নিকট ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির বীমা বিপননের সুযোগ তৈরী হবে যার মাধ্যমে ব্যাংক ও বীমা শিল্প দুটোই উপকৃত হবে।
Posted ১:০৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy