শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদের আগে চড়া মাছ-মাংস-সবজির দাম

  |   বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   72 বার পঠিত

ঈদের আগে চড়া মাছ-মাংস-সবজির দাম

রমজান মাসের পুরোটা সময়জুড়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অসন্তোষ ছিল ক্রেতাদের মধ্যে। মাছ-মাংস-সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের।

এসব সাধারণ ক্রেতাদেরই এবার বাজার করতে গিয়ে দিশেহারা অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কারণ ঈদের আগে আরেক দফা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছ, মুরগি, ডিম, সবজি, মসলাসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতাদের কেউ সরবরাহের ঘাটতিকে দুষছেন, তো কেউ তীব্র গরমের কথা বলছেন। কেউবা আবার ঈদকে ঘিরে পাইকারী বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার ও পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাত দিচ্ছেন।

ক্রেতাদের দাবি, প্রতি বছর ঈদের আগে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর এই চিত্র নিয়মিত ঘটনা। সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকির অভাবেই এ সুযোগ নেন বিক্রেতারা। আর এর ভুক্তভোগী হতে হয় সাধারণ ক্রেতারাদেরই।

কারওয়ান বাজারের সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি বেগুন মানভেদে ৬০-৬৫ টাকা, কাকরোল ১শ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, লতি ৬০-৭০ টাকা, সজনে ডাটা ৯০-১শ টাকা, গাজর ৮০-১৪০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, শসা ৯০ টাকা, টমেটো ৪০-৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, কাঁচা আম ৬০-৭০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, মরিচ ৬০ টাকা, ক্যাপসিক্যাম ২৫০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস কাঁচা কাঁঠাল ৯০-১০০ টাকা, ব্রকলি ৪০-৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০ টাকা, লাউ ৭০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি আঁটি শাকেও ২-৫ টাকা দাম বেড়েছে। এখন প্রতি আঁটি পাটশাক ১০ টাকা, মাইরারশাক ২৫ টাকা, পুঁইশাক ২০-২৫ টাকা, লালশাক ১৫-২০ টাকা, কলমিরশাক ৮-১০ টাকা, পালংশাক ১০-১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মো. জাকির নামের এক বিক্রেতা  বলেন, ঈদে মানুষ গ্রামে যাওয়ায়, সেখানেই বেচা-বিক্রি ভালো হয়। তাই রাজধানীতে শাক-সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেড়েছে।

হৃদয় নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, তীব্র গরমের কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় সবজি বেশি নষ্ট হচ্ছে। সেটি সমন্বয় করতেই একটু বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিক্রেতা বলেন, ঈদে অনেকে বিক্রেতারা বাড়ি চলে গেছেন। তাই যারা আছেন তারা একটু বেশি লাভেই শাক-সবজি বিক্রি করছেন।

বিক্রেতারা অজুহাত যাই দিক, শাক-সবজির দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও সরকারের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবকেই দায়ী করছেন ক্রেতারা।

ইকবাল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বিক্রেতারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলেও আমাদের কিনতে হয়। যাদের অবৈধ ও দুর্নীতি করা টাকা রয়েছে, তাদের এতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সংসার চালানোই দায় হয়ে যায়। সরকার ঠিকমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে না বলেই, বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর এই সুযোগটা নিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রমজান একটি পবিত্র মাস। ঈদ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এই সময় যাতে কারো কোনো কষ্ট না হয়, সেটা সবার দেখা দরকার। কিন্তু আমাদের বিক্রেতাদের মধ্যে সেই ধর্মীয় বোধ নেই। তারা উল্টো এ সময়ে যত পারেন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন।

আমিনুর রহমান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ওপর তো জুলুম চলছে। বাজার ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই তো প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে।

রিপন চন্দ্র সরকার নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এখন নিত্যপণ্যের যা দাম, তা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তাই আমাদের চাহিদার থেকে কম বাজার করতে হয়। কারণ খেতে তো হবেই। প্রকৃতির গরমের থেকেও যেন বাজারে নিত্যপণ্যের দামের উত্তাপ বেশি।

এদিকে তীব্র গরমের কারণে চাহিদা বেড়েছে লেবুর। তাই পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাম। এখন প্রতি হালি কলম্বো লেবু ১০০-১২০ টাকা, এলাচি লেবু ৪০-৬০ টাকা, কাগজি লেবু ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এ বাজারে প্রতি হালি কলম্বো লেবু ৫০-৬০ টাকা, কাগজি লেবু ৬০ টাকা ও এলাচি লেবু ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।

শুধু শাক-সবজি নয়, দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলুর। দুই সপ্তাহ আগে ১০০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হওয়া আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, ৩০-৩৪ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪০ টাকা, ৯০ টাকার দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, ১২০-১৩০ টাকা বিক্রি হওয়া চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, ২০০ টাকা বিক্রি হওয়া দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, ১৪০ টাকার মিয়ানমারের আদা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, ২শ টাকার চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা।

আলুর দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, আলু স্টোরেজ থেকে না ছাড়ার কারণে বাজারে সরবরাহের ঘটতি রয়েছে। তাই দাম বেশি।

ঈদের সময় মসলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে এই পণ্যটিরও। দুই সপ্তাহ আগেও ২ হাজার ২শ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এলাচ এখন ২ হাজার ৫শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৩৮০ টাকার দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকা, ৩০০ টাকার শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, ৬০০ টাকার জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকা, ২শ টাকার ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি কালোজিরা বক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৬শ টাকা, গোল মরিচ ৯০ টাকা, জয়ফল ১ হাজার ১শ টাকা, জয়িত্রী ৩ হাজার ৬শ টাকা, মৌরি ৩২০ টাকা, সরিষা ১৬০ টাকা ও তেজপাতা ৯০ টাকা।

হাসান মাহমুদ নামের কারওয়ানবাজারের এক মসলা বিক্রেতা বলেন, পাইকারী বাজারে দাম বেশি, তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

এদিকে ফের বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দুই দিন আগেও ২শ টাকা কেজি বিক্রি করা ব্রয়লার মুরগি আজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। এছাড়া ৩৫০ টাকার সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা, ৩২০ টাকার সাদা কক বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। তবে লাল লেয়ার মুরগি আগের মতোই ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মো. বিল্লাল হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, পাইকারী বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে। দুই দিন আগে যে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা করে কিনে এনেছি, সেটিই এখন ২১০ টাকা। এছাড়া ঈদের কারণে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। ১শ টাকার গাড়ি ভাড়া এখন ১৫০ টাকা হয়েছে। তাই মুরগির দাম বেশি।

দাম বেড়েছে মুরগির ডিমের। এখন মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা এবং সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও লাল ডিম ছিল ৪০ টাকা এবং সাদা ডিম ছিল ৩৮ টাকা। তবে হাঁসের ডিম ১০ টাকা কমে এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে অপরিবর্তিত আছে চালের বাজার। এখন প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭২ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা, স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা, আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা। ঈদের পর আটাশ ও মিনিকেটের দাম কমবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।

মোশাররফ নামের এক বিক্রেতা বলেন, ঈদের পর মিনিকেট ও আটাশ চাল উঠবে বাজারে। তখন এই দুইটি দাম কমতে পারে।

আগের মতোই আছে গরু ৭৫০ টাকা কেজি ও খাসি ১ হাজার ১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের দাম ১শ টাকা বেড়ে এখন এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গরু ও খাসির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে মাছের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি মাছের দাম ২০-৩০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বর্তমানে প্রতি কেজি বেলে মাছ ৪শ টাকা, বাছা মাছ ৫শ টাকা, কোরাল ৬শ টাকা, আইড় ৫৫০ টাকা, নদীর টেংরা ৭০০ টাকা, পাবদা ৪শ টাকা, চিতল ৪শ টাকা, তপসী ৬শ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭শ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬শ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৬৫০ টাকা, কালিবাউস ৪শ টাকা, ইলিশ ৮০০-১৪০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকা, মাগুর ৪৫০ টাকা, শোল ৩২০ টাকা, রূপচাঁদা ৯শ টাকা, পুঁটি ৫শ টাকা, রুই ৩৫০ টাকা, কাতল ৪শ টাকা, কই ২৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মো. শহীদ নামের কারওয়ানবাজারের মাছ বিক্রেতা বলেন, ঈদের আগে পণ্যবহী গাড়ি বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই। তাই দামও বেশি।

মাছ-মুরগির এমন দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। রিনা ক্রুস নামের এক ক্রেতা বলেন, এ দেশের ব্যবসায়ীদের কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই। কোনো একটা অজুহাত পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে সাধারণ মানুষেরা জিম্মি। দাম বাড়লেও আমাদের না কিনে উপায় নেই।

এদিকে গত এক সপ্তাহে নয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

ওই বিপণন সংস্থাটির ১৮ এপ্রিলের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে মাঝারি চাল (পাইজাম ও লতা), পাম অয়েল (সুপার), মসুর ডাল (ছোট দানা), আলু, দেশি রসুন, ধনিয়া, গরু, ব্রয়লার মুরগি ও চিনির দাম বেড়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৬:২৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।