বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 1016 বার পঠিত
প্রচলিত ব্যবস্থায় স্থানান্তরযোগ্য বা অস্থাবর সম্পদ জামানত রেখে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নেই। এই সুযোগ দেওয়া হলে আরও বেশি মানুষের কাছে ঋণ সহজলভ্য হবে এমন উদ্দেশ্য নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথ উদ্যোগে ‘সিকিউরড লেন্ডিং অ্যান্ড মুভেবল কোল্যাটারাল রিফর্ম’ প্রকল্পের আওতায় ‘সিকিউরড ট্রানজেকশন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন’ প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে।
এরই মধ্যে আইনটির একটি খসড়া তৈরি করে মতামতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাপ্ত মতামতের ওপর আলোচনা করে প্রস্তাবিত আইনে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং আইনটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আগামী ২৩ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময় কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে জমি, ভবন বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তি জামানত রাখতে হয়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ভবনের পাশাপাশি ভবন নির্মাণের উপকরণ এবং সংযুক্ত মালপত্রও জামানত হিসেবে বিবেচিত হবে। কারখানায় স্থাপিত যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল, গহনা, জমির ফসল, আসবাবপত্রসহ প্রভৃতি স্থানান্তরযোগ্য সম্পদের বিপরীতে ঋণ পাওয়া যাবে। তবে এসব সম্পদের মূল্যমান নির্ধারণে আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে।
সিকিউরড ট্রানজেকশন রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ নামে এটি গঠিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অথবা তাহার প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি পদাধিকার বলে ওই কর্তৃপক্ষের বোর্ড চেয়ারম্যান হবেন। বোর্ডের সদস্য হিসেবে আরও থাকবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব বা তার প্রতিনিধি, প্রস্তাবিত আইনের অধীনে নিযুক্ত রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের রেজিস্ট্রার বা তার প্রতিনিধি এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অস্থাবর সম্পদ জামানত হিসেবে ব্যবহার করে ঋণ ব্যবস্থা চালু করা হলে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও আদায় সহজ হবে। এক্ষেত্রে একই সম্পত্তি জামানত হিসেবে রেখে আগে কখনও ঋণ নেওয়া হলে ওই জামানতের বিপরীতে আর ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) জামানতের তথ্যও সন্নিবেশিত হচ্ছে। কোনো নতুন গ্রাহক ঋণ নিতে গেলে সিআইবির তথ্যভাণ্ডার দেখা হয়। ওই গ্রাহক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে কি না এবং ঋণ নিলে কী ধরনের সম্পদ বন্ধক রেখেছে, তা দেখে ব্যাংক নতুন ঋণ দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণের জামানত না থাকার কারণে তা প্রান্তিক মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে। তবে এ ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হওয়ার কারণে অনেকে নিঃস্বও হচ্ছে। এসএমই খাতের ছোট ছোট উদ্যোগে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অস্থায়ী সম্পদ জামানত হিসেবে ব্যবহার করা গেলে এসব উদ্যোগ পৃষ্ঠপোষকতা পাবে।’
প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) কর্তৃক সরাসরি অর্থব্যয়সহ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের এই প্রকল্পে সরাসরি কোনো অর্থব্যয় নেই। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গঠিত মনিটরিং কমিটির সভাপতি হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২৮ মার্চ কর্মশালার আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি পত্র দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামানের অনুমোদন নিয়ে ওই কর্মশালার আয়োজন করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভাগ।
কর্মশালায় বাংলাদেশের সব ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি), ব্যাংক পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি), বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ), ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও গার্মেন্ট কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে।
Posted ২:৩৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed