বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 723 বার পঠিত
জ্বালানি তেল আমদানিতে বাজারদর যাচাই না করেই জাহাজ ভাড়ার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এতে তিন বছরে সংস্থাটি ৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করে। আবার সারা দেশে জ্বালানি তেল পরিবহনে সর্বনিম্ন দর যাচাই না করেই ট্যাংকার মালিকদের সঙ্গে উচ্চ মূল্যে চুক্তি করে বিপিসি। এতে পাঁচ বছরে সংস্থাটির ক্ষতি হয় ৫৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
এদিকে গ্যাস বিক্রয়ের খাতওয়ারী বিভাজন পেট্রোবাংলা কর্তৃক সঠিকভাবে না করায় বিক্রয় মূল্যের সরকারি তহবিলের মার্জিন বাবদ দুই বছরে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৯৯ কোটি টাকা। আবার গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লসের নামে বছরে ৬৪০ কোটি ৩৩ লাখ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এভাবেই সরকারি অর্থের অপচয় বা তছরুপ করে চলেছে জ্বালানি খাতের দুই শীর্ষ প্রতিষ্ঠান । ফলে সংস্থা দুটির বিরুদ্ধে প্রতি বছর জমা হচ্ছে অডিট আপত্তির পাহাড়। যদিও এগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেই। এতে ২০১৮ সাল শেষে পেট্রোবাংলা ও বিপিসির বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৩২০ কোটি টাকার বেশি।
জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, বিপিসি ও পেট্রোবাংলার পাশাপাশি এদের অধীন বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও অডিট আপত্তি বাড়ছে। এর মধ্যে এক বছরে অডিট আপত্তি বেড়েছে ৪৮ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৭ সাল শেষে জ্বালানি খাতের শীর্ষ এ দুই সংস্থার বিরুদ্ধে অডিট আপত্তির পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৬ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
সূত্রমতে, অডিট আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি ও এগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনায় সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। এতে জানানো হয়, ২০১৮ সাল শেষে পেট্রোবাংলা ও এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মোট অডিট আপত্তি ছিল তিন হাজার ৫৬১টি। আর আপত্তিকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
এর আগে ২০১৭ সাল শেষে পেট্রোবাংলা ও এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি ছিল ৭৫ হাজার ৬৭৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার। অর্থাৎ এক বছরে পেট্রোবাংলা ও এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি বেড়েছে ১৪ হাজার ৩৯৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এদিকে ২০১৮ সাল শেষে বিপিসি ও এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অডিট আপত্তির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২২৮টি। আর আপত্তিকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর ২০১৭ সাল শেষে এ অডিট আপত্তি ছিল ৫০ হাজার ৪৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার। অর্থাৎ এক বছরে বিপিসি ও এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি বেড়েছে ৩৩ হাজার ৮০০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
তথ্যমতে, ২০১৭ সাল শেষে জ্বালানি খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে আপত্তি ছিল ৩৬৭টি। আর সংস্থাটির আওতাধীন ১৪টি কোম্পানির বিরুদ্ধে আপত্তি রয়েছে তিন হাজার ৫২৫টি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অডিট আপত্তি রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিতাস গ্যাসের বিরুদ্ধে। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আপত্তির সংখ্যা ৬৫৪টি।
এর বাইরে বাপেক্সের বিরুদ্ধে আপত্তি রয়েছে ৪০২টি, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিরুদ্ধে ২৬৬, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির বিরুদ্ধে ৪১১টি, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে ৩৫১টি, জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির বিরুদ্ধে ৩৪৫টি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির বিরুদ্ধে ২২৭টি, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৬৩টি, মধ্যপুকুরিয়া গ্রানাইট কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৯১টি, জয়পুরহাট চুনাপাথর কোম্পানির বিরুদ্ধে ১১৯টি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৪৯টি, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানির বিরুদ্ধে ১২৬টি, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির বিরুদ্ধে ৬৯টি ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির বিরুদ্ধে ৫২টি।
এদিকে বিপিসি ও এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মোট অডিট আপত্তির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৩২৭টি। এর মধ্যে শুধু বিপিসির বিরুদ্ধে আপত্তি ছিল ২৪৯টি। আর সংস্থাটির আওতাধীন সাতটি কোম্পানির বিরুদ্ধে আপত্তি ছিল দুই হাজার ৭৮টি।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে অডিট আপত্তি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পদ্মা অয়েলের বিরুদ্ধে। কোম্পানির বিরুদ্ধে আপত্তির সংখ্যা ৬১৭টি। এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অন্য দুই তেল বিপণনকারী কোম্পানি যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি রয়েছে যথাক্রমে ৫৯৮টি ও ৪১২টি। এর বাইরে ইস্টার্ন রিফাইনারির বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি ২১৭টি, এলপি গ্যাস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১১১টি ও ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের বিরুদ্ধে ১০২টি ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েলের বিরুদ্ধে ২৫টি।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শেয়ার বিজকে বলেন, পেট্রোবাংলা ও বিপিসির অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সংস্থাগুলো এবং তাদের আওতাধীন কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য পেট্রোবাংলা ও বিপিসি প্রতি মাসে দ্বিপক্ষীয় ও ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করছে। এছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।
Posted ১:৩৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed