বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ১১ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 805 বার পঠিত
কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় ‘চিটাগাং গ্রিন অ্যাপারেল জোন’ নির্মাণে তিন বছর আগে চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও বিজিএমইএ। কিন্তু এরই মধ্যে মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লট বরাদ্দের ঘোষণা আসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠনটি। শেষ পর্যন্ত জায়গাটি আইটি হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাট বিএফআইডিসি রোড সংলগ্ন ১১ দশমিক ৪৮ একর জমিতে ‘চট্টগ্রাম গ্রিন অ্যাপারেলস জোন’ নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি চসিকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, সাততলাবিশিষ্ট ১১টি ভবন নির্মাণসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ নিশ্চিত করার কথা ছিল চসিকের। নির্মাণ ব্যয় বিজিএমইএ এবং চসিক আলোচনার মাধ্যমে বহন করবে। পরে বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছ থেকে খরচের টাকা আদায় করা হবে।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে উভয় পক্ষে তিনটি বৈঠকও হয়। বৈঠকে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪৩৫ কোটি টাকা। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সভায় পাস হয়ে ২০১৭ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এ প্রসঙ্গে চসিকের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা বলেন, আমরা বিজিএমইএকে কালুরঘাটের জমিতে শিল্পজোন নির্মাণে জায়গা বরাদ্দ এবং অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিজেএমইএর অসহযোগিতার কারণে সেটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তাদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আমরা সেই জমি সরকারের হাইটেক পার্ক নির্মাণে বরাদ্দ দিচ্ছি। এরই মধ্যে মন্ত্রী এবং মেয়র এ জমির বিষয়ে মৌখিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে বিজেএমইএর নেতারা বলেন, যেহেতু সরকার মিরসরাইতে বিজিএমইএকে ৫০০ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে, সেহেতু এ প্রকল্পটি কার্যত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ সিটি করপোরেশন থেকে ওই জায়গা বরাদ্দ নিয়ে অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য ব্যয় বিজিএমইএ বহন করলেও ওই জায়গার মালিক কখনো বিজিএমইএ হতে পারবে না। আবার ওই জায়গার ভাড়াও চসিককে দিতে হবে। প্রকল্পটির জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক জোন করার কথা ওঠেনি।
তবে চট্টগ্রামের ছোট ও মাঝারি গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, কালুরঘাটে অ্যাপারেল জোন হওয়ার কথা শুনে চট্টগ্রামের ছোট ও মাঝারি মানের পোশাক কারখানাগুলোর মালিকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। মিরসরাইয়ে গার্মেন্ট শিল্প এলাকা নির্মাণ হলেও সেখানে প্লট নেয়ার সামর্থ্য কয়জনের আছে সেটা দেখতে হবে। কারণ সেখানে যারা প্লট নিচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ কিংবা গাজীপুরের ব্যবসায়ী। সে তুলনায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীর সংখ্যা নেহাত কম। কালুরঘাটে শিল্প এলাকায় পোশাক শিল্পের জন্য জোন হলে অন্তত মাঝারি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারতেন।
ব্যবসায়ীদের হিসাবে, ‘গ্রিন অ্যাপারেল জোন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রায় অর্ধশত ছোট-বড় পোশাক কারখানার স্থান হতো। কর্মসংস্থান হতো প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের। তাছাড়া শেয়ারিং ভবনে যারা চট্টগ্রামে ব্যবসা করছিলেন, তাদের পাশাপাশি এখানে ব্যবসা করতেও কোনো সমস্যা হতো না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিজিএমইএ ৫০০ একর জায়গা পাওয়ায় কালুরঘাটের প্রকল্পটিতে আপাতত এগোতে চাচ্ছেন না বলে জানান বিজিএমইএর পরিচালক কাজী মাহাবুবুদ্দিন জুয়েল।
ছোট ও মাঝারি পোশাক শিল্প মালিকদের মিরসরাইতে প্লট নেয়ার সামর্থ্য আছে কিনা, বণিক বার্তার পক্ষ থেকে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যখন পোশাক শিল্পের সূচনা হয়েছিল, তখন বিভিন্ন ভবন ভাড়া নিয়ে কিংবা শেয়ারিং ভবনে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশনসের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে দেশব্যাপী পোশাক কারখানার সংস্কার শুরু হয়। এতে করে চট্টগ্রামের মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম শহরের বাইরে খাস জমিগুলো টোকেন মূল্যে এ পোশাক ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেয়া হলে এ পোশাক শিল্পের অবস্থার পরিবর্তন হবে।
বিজিএমইএর এ আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া একাধিক পোশাক কারখানার মালিক বলেন, চট্টগ্রামের বেশির ভাগ পোশাক কারখানা শেয়ারিং ভবনে ব্যবসা করছে দীর্ঘদিন। এদিকে কালুরঘাট শিল্প এলাকার গ্রিন অ্যাপারেল প্রকল্পটি ছিল আমাদের মতো মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য স্বপ্নের মতো। এ প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ায় কার্যত আমাদের আর কোনো আশা থাকল না। মিরসরাইতে প্লট কেনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই যদি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায় কিংবা চট্টগ্রাম শহরের বাইরে খাস জমিতে সরকার গার্মেন্ট শিল্পের জন্য প্রণোদনা দেয়, তাহলে চট্টগ্রামের পোশাক খাত হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
Posted ১২:২১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed