বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 706 বার পঠিত
বৈশ্বিক অন্যতম শীর্ষ দুই টেলিযোগাযোগ গ্রুপ টেলিনর ও আজিয়াটা এশিয়ায় নিজেদের ব্যবসা একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সোমবার এ পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ একীভূতকরণ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হতে পারে। বাংলাদেশে শীর্ষ দুই সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির মালিকানায় রয়েছে যথাক্রমে টেলিনর ও আজিয়াটা। তবে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও গ্রামীণফোন ও রবির কার্যক্রম আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই চলবে।
মূলত এশিয়ার টেলিকম বাজার দখলে নিতে একীভূত হওয়ার এ উদ্যোগ নিয়েছে নরওয়েভিত্তিক টেলিকম গ্রুপ টেলিনর ও মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা। একীভূত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে নতুন এ ব্যবসায়িক উদ্যোগের কার্যালয় হবে মালয়েশিয়ায়। মার্জকো নামে পরিচালিত হবে একীভূত কোম্পানির কার্যক্রম। আর এশিয়ায় থাকা কোম্পানি দুটির যত অবকাঠামো রয়েছে, তা একসঙ্গে ব্যবহার করা হবে। এশিয়ার নয়টি দেশে প্রায় ৬০ হাজার টাওয়ার ও ৩০ কোটি গ্রাহক রয়েছে অপারেটর দুটির।
টেলিনরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর নাগাদ একীভূতকরণের বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। মার্জকোর সিংহভাগ শেয়ার থাকবে টেলিনরের হাতে। ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে তারা হবে নতুন কোম্পানির বড় অংশীদার। আজিয়াটার হাতে থাকবে বাকি ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার।
এশিয়ায় দুই কোম্পানির ব্যবসা একীভূত হলেও রবি বাংলাদেশে আলাদা কোম্পানি হিসেবে স্বাধীনভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে আজিয়াটার হাতে।
রবি আজিয়াটার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রবি আজিয়াটা সম্ভাব্য এ একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অংশ নয়। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বিশ্বমানের দুটি টেলিযোগাযোগ গ্রুপের সম্ভাব্য এ একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের অধীন একটি আলাদা ও স্বতন্ত্র কোম্পানি হিসেবেই পরিচালিত হবে রবি। অর্থাৎ এশিয়ার এ সম্ভাব্য বৃহৎ একীভূতকরণ বাংলাদেশের সেলফোন খাতে সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলবে না। যদিও এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে গ্রুপ পর্যায়ে সম্ভাব্য একীভূতকরণের পুরো প্রক্রিয়াটিই এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দুই পক্ষের লিখিত চুক্তির ওপর নির্ভরশীল। সম্ভাব্য এ একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অনেক বিষয় এখনো চূড়ান্ত হওয়া বাকি এবং তা দুই পক্ষের একমত হওয়ার ওপর নির্ভর করছে।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিগভে ব্রেক্কে বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি অত্যন্ত ইতিবাচক হবে। গ্রাহকরাও এতে উপকৃত হবেন।
১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ দেশে গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন (জিএসএম) প্রযুক্তির সেলফোন সেবা চালু করে গ্রামীণফোন। বর্তমানে গ্রামীণফোনে টেলিনরের শেয়ার রয়েছে ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বাকি ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ গ্রামীণ টেলিকম ও ১০ শতাংশ সাধারণ শেয়ার। টেলিনরের ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যাই সর্বোচ্চ।
১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নরওয়েভিত্তিক টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান টেলিনর বিশ্বের ১৩টি দেশে সেলফোন সেবা পরিচালনা করছে। মূলত স্ক্যান্ডিনেভিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ায় বিনিয়োগ করেছে টেলিনর। এর মধ্যে ইউরোপে প্রতিষ্ঠানটির উপস্থিতি রয়েছে নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো ও বুলগেরিয়ায়। আর এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় টেলিনরের বিনিয়োগ রয়েছে। ২০০৫ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে এসব দেশের বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় টেলিনর।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সেলফোন অপারেটর ভারতী এয়ারটেল বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ২০১০ সালে। সে সময় ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে প্রতিষ্ঠা করা হয় এয়ারটেল বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ওয়ারিদের কাছে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারও কিনে নেয় সিঙ্গাপুরে ভারতী এয়ারটেলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতী এয়ারটেল হোল্ডিংস লিমিটেড। তবে কার্যক্রম শুরুর পর গত কয়েক বছরে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে ভারতী এয়ারটেল। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আলোচনা শুরু করে দেশের দুই সেলফোন অপারেটর রবি ও এয়ারটেল। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ ও ভারতের ভারতী এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশে পরিচালিত তাদের কার্যক্রম একীভূতকরণের বিষয়ে একমত হয়। এরপর উচ্চ আদালতের সম্মতিক্রমে একীভূত কোম্পানি হিসেবে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে রবি। রবি-এয়ারটেল একীভূতকরণের অংশ হিসেবে এয়ারটেল একীভূত প্রতিষ্ঠানটির একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ, ভারতের ভারতী এয়ারটেল ও জাপানের এনটিটি ডোকোমোর একটি যৌথ উদ্যোগ রবি আজিয়াটা লিমিটেড। এ কোম্পানিতে আজিয়াটার ৬৮ দশমিক ৭, ভারতী এয়ারটেলের ২৫ ও এনটিটি ডোকোমোর ৬ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এশিয়ার নয়টি দেশে আজিয়াটার ১২টির বেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা ব্যবসা রয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশে সেলফোন সংযোগ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৯৭ লাখের বেশি। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের সংযোগ ৭ কোটি ৪০ লাখ ও রবির ৪ কোটি ৭৩ লাখ। অন্য অপারেটরদের মধ্যে বাংলালিংকের সংযোগ সংখ্যা ৩ কোটি ৪৩ লাখ ও টেলিটকের ৪০ লাখ ১৪ হাজার। গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার ৪৬ দশমিক ৩৫, রবির ২৯ দশমিক ৬৩, বাংলালিংকের ২১ দশমিক ৫১ ও টেলিটকের ২ দশমিক ৫১ শতাংশ।
টেলিনর বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও মিয়ানমারে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে। আর আজিয়াটার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলংকা ও ইন্দোনেশিয়ায়।
Posted ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed