বুধবার ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দুর্নীতি

চেয়ারম্যান নাসির আলী শাহ গং হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

  |   বুধবার, ০৬ এপ্রিল ২০২২   |   প্রিন্ট   |   321 বার পঠিত

চেয়ারম্যান নাসির আলী শাহ গং হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

ডুবতে বসেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। একের পর এক দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বীমা গ্রাহক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। যারা কোম্পানি রক্ষকের ভূমিকায় তারাই ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। এযেন দেখেও দেখার কেউ নেই। কোম্পানিটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২১ বছর পার হলেও নানা অনিয়মের জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। বছরে পর বছর ধরে জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানি থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এতো কিছুর পরও আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত ও দুর্নীতিবাজরা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। নামকাওয়াস্তে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (আইডিআরএ) এর কারণে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও মূল দুর্নীতিবাজরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, কোম্পানির চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে এদেশ থেকে। বিদেশে বসে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নাসির আলী শাহ ও তার পরিবার মিলে কোম্পানিকে দেউলিয়ার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কোন আইনের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার জোরে একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান গং।

২০০৯-২০১২ সাল পর্যন্ত কোম্পানিতে যে অনিয়ম দুর্নীতি খবর পাওয়া গেছে তার প্রকৃত তথ্য ও দুর্নীতিকারীদের হোতা এখনো আড়ালেই রয়ে গেছে। মেসার্স হুদাভাসি চৌধুরী এন্ড কোং চার্টার্ড একাউন্টস ফার্ম কোম্পানির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে যে পরিমাণ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে তা দেখে যে কারোই ফিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা। তৎকালীন সময়ে কোম্পানি থেকে ১০৯ কোটি, ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত এক গ্রুপ আত্মসাৎ কররেছেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পিআর বুক জালিয়াতি, বন্ধ সার্ভিস সেলের পেটি ক্যাশ, বেতন, ভাতা, গ্রাচুইটির নামে কোটি কোটি টাকা। অপর পক্ষ নাসির আলী শাহ গং জমি ক্রয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মূলত বোর্ড ও কোম্পানির তৎকালীন ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতরা মিলিতভাবে কোম্পানি থেকে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। পথে বসিয়েছেন বীমা গ্রাহক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। তৎকালীন নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েও বীরদর্পে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব আগলে রেখেছেন নাসির আলী শাহ। তিনি বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে বোর্ড মিটিং না করে, দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করে সকল প্রকার আইন লঙ্ঘন করেছেন।

জানা যায়, কোম্পানির চেয়ারম্যান নাসির আলী শাহ ও তার স্ত্রী পরিচালক চৌধুরী ফারকান্দাহ শাহ গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় পরিচালনা পর্ষদ কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হন। সে সময় নাসির আলী শাহ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বার্ষিক সাধারণ সভায় তারা স্বশরীরে উপস্থিত না থেকে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন। বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব থেকে প্রায় দেড় বছর যাবৎ তারা দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার পরও কোম্পানির কোন বোর্ড মিটিং এ উপস্থিত থাকতে পারেননি নাসির আলী শাহ। যা ধারাবাহিকভাবে আইন লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে। কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ১০৮ পরিচালক পদের শূন্যতা (১)(চ)তে স্পষ্ট করে বলা আছে ‘পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ব্যতীত পর পর তিনটি সভা কিংবা ক্রমাগত তিন মাস ধরে কোন সভায় অনুপস্থিত থাকলে সেই পদ শূন্য হয়ে যায়’। সে হিসেবে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ ধারণ করে রাখার ইখতিয়ার তাদের নেই। আইন অনুযায়ী তারা অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

২০০৯-২০১২ সাল পর্যন্ত কোম্পানিতে যে জমি ক্রয়ে যে দুর্নীতি করা হয়েছে সেখানেও মেসার্স হুদাভাসি চৌধুরী এন্ড কোং চার্টার্ড একাউন্টস ফার্ম কোম্পানির তৎকালীন চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে থাকা ৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। পরবর্তীতে আইডিআরএ’র অনুসন্ধানে ঐ ৬ জনকে আসামি করে মামলা করার নির্দেশনা জারি করা হয়। মামলা করার তালিকায় রয়েছে এ জেড মোহাম্মদ হোসেন (কনভেনার, শেয়ারহোল্ডার ডাইরেক্টর), তৎকালীন চেয়ারম্যান এম এ মালিক, উদ্যোক্তা পরিচালক নাসির আলী শাহ, শেয়ারহোল্ডার ডাইরেক্টর নাজিম তাজিক চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ করিম ও হেড অব অডিট মো. মনিরুজ্জামান। তারা কোম্পানির ৩টি প্লট ক্রয় ও চট্টগ্রামের জহুরা টাওয়ারে ফ্লোর ক্রয়ে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সূত্র মতে, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে বড় রকমের দুর্নীতির সাথে জড়িত নাসির আলী শাহ ও তার শ্বশুরের পরিবার। ক্রয়কৃত সম্পত্তির বিবরণে দেখা যায়, কোম্পানি ৬টি প্লট ও ফ্লোর ক্রয় করেছেন ইস্টার্ন হাউজিং থেকে। তৎকালীন সময়ে নাসির আলী শাহ ও তার স্ত্রীর বড় ভাই নাজিম নেওয়াজ চৌধুরী ছিলেন ইস্টার্ন হাউজিং লি. এর মার্কেটিং ডাইরেক্টর। অপর পরিচালক নাজিম তাজিক চৌধুরী ছিলেন নাসির আলী শাহ এর শ্যালক। উক্ত পরিবার ও অন্যান্যরা মিলে কোম্পানির যাবতীয় প্লট ও ফ্লোর ক্রয় করে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড এর কাছ থেকে। সেখানে ক্রয়কৃত সম্পত্তির উচ্চ মূল্য দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন কোটি কোটি টাকা।

এতো কিছুর পরও প্রগ্রেসিভ লাইফের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১৫ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি সরাসরি উপস্থিতিতে জরুরি বোর্ড মিটিংয়ের আয়োজন করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানান পরিচালক জাকারিয়া আহাদ, বজলুর রশিদ, বাবল মিয়া ও মিজানুর রহমান। কারণ টানা দু’বছর ধরে সরাসরি কোন বোর্ড মিটিং হচ্ছে না। সকলের উপস্থিতিতে বোর্ড মিটিং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান তাদের আবেদনের কোনো সাড়া না দেয়ায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের দফতরে চিঠি প্রেরণ করেন প্রগ্রেসিভ লাইফের পরিচালক জাকারিয়া আহাদ। চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, প্রগ্রেসিভ লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির আলী শাহ, তার স্ত্রীর অবর্তমানে মনোনীত পরিচালক (শেয়ারবিহীন) নাজিম তাজিক চৌধুরী গং মিলে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, বীমা আইন লঙ্ঘন করে কোম্পানিকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন।

এ বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির আলী শাহ এর সাথে ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনি কোম্পানি সেক্রেটারির সাথে কথা বলেন।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৩১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৬ এপ্রিল ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।