শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
ফারইস্ট লাইফে লুটপাটের মামলা

ডিবি’র জিজ্ঞাসাবাদে হেমায়েত উল্লাহর দ্বিতীয় দিন

আবুল কাশেম   |   মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   207 বার পঠিত

ডিবি’র জিজ্ঞাসাবাদে হেমায়েত উল্লাহর দ্বিতীয় দিন

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হেমায়েত উল্লাহকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা মহনগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে তলব করা হয়। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে ডিবি কর্মকর্তারা তাকে নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গভীর রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রতিদিনের মতো তার কর্মস্থল পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কার্যালয়ে আসেন। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে তলব করা হয়। তিনি দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে যান। মো. হেমায়েত উল্লাহ ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গ্রাহকদের প্রায় ২ হাজার ৮শ কোটি টাকা লুটপাটের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী।

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট লাইফের পক্ষ থেকে মো. জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ডিএমপি’র শাহবাগ থানায় ১৪ জনের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৫(৯)২০২২। এই মামলায় কোম্পানীর সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের তিন দফায় ৭দিনের রিমান্ডে আছেন। এছাড়া ১৯ সেপ্টেম্বর সাবেক পরিচালক এমএ খালেক, তার ছেলে এই কোম্পানির সাবেক পরিচালক রুবায়াত খালেকের বিরুদ্ধে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

এজাহারে আরও উল্লেখ রয়েছে, ফারইস্ট লাইফের গ্রেফতারকৃত সাবেক চেয়ারম্যান, দুই সাবেক পরিচালক এবং পলাতক অপর ১১ আসামীর সঙ্গে আরও কতিপয় পরিচালক ও অসাধু কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজশে ২০১১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রতারণামূলক বিনিয়োগের নামে এই কোম্পানির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

এজাহারে ১১ আসামীকে পলাতক বলা হয়েছে। এই ১১ আসামীর মধ্যে সাবেক চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হেমায়েত উল্লাহ, অন্যতম। এছাড়া আরও অনেকে এখনো গ্রেফতার হয়নি। তারা হলেন, কারাবন্দি খালেকের ছেলে সাবেক পরিচালক শাহরিয়ার খালেদ, খালেকের মেয়ের জামাই সাবেক পরিচালক তানভিরুল হক, খালেকের শ্যালক সাবেক পরিচালক নূর মোহাম্মদ ডিকন, কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল আমিন, সাবেক চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হেমায়েত উল্লাহ, সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিএফও মো. আলমগীর কবির, হিসাব বিভাগের প্রধান সাবেক এ এম ডি মো. কামরুল হাসান খান, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যাংকিং শাখার প্রধান শেখ আব্দুর রাজ্জাক, হেড অব ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স সাবেক জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. কামাল হোসেন হাওলাদার এবং ব্যাংকিং শাখার সাবেক ফার্স্ট অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মাকবুল এলাহী।

এদিকে ফারইস্ট লাইফের প্রায় ২ হাজার ৮শত কোটি টাকা লোপাট ও আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জন গ্রেফতার হলেও বাকী ১১ জন এখনও গ্রেফতার হয়নি। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে বিভিন্ন কোম্পানিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তাদের অনেকে। এই বিষয়ে ’দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি; পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এরমধ্যে ফারইস্ট লাইফের সাবেক চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হেমায়েত উল্লাহ বর্তমানে পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদের জন্য আইডিআরএ কাগজ জমা দিলে তার আবেদন নাকোচ হয়। ফলে কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফারইস্ট লাইফের হেড অব ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স সাবেক জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো.কামাল হোসেন হাওলাদার বর্তমানে প্রাইম ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে এএমডি ইনচার্জ ইন্টারনাল অডিট কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।

সূত্র মতে,২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগে এই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২০২১ ২১ ডিসেম্বর হেমায়েত উল্লাহকে কোনো বীমা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না দিতে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। সব বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও বরাবর পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, হেমায়েত উল্লাহ ২০১১ থেকে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ফারইস্ট লাইফেল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি বীমা আইন, ২০১০ ও বিমা আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবেন মর্মে তার নিয়োগপত্রে সুস্পষ্টভাবে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বকালে কোম্পানিতে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এ জন্য তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।

আরও অভিযোগ রয়েছে, সাবেক মুখ্য নির্বাহী হেমায়েত উল্লাহকে পারফরমেন্স বোনাস প্রদান এবং কোম্পানি কর্তৃক অতিরিক্ত আয়কর বহন করা হয়েছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- এফআইএলআইসিএল-ইসিএসএল’কে ১২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং পিআইএলআইএল-ইসিএসএল’কে ৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান। অসঙ্গত প্রক্রিয়ায় আজাদ অটোমোবাইলস থেকে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকার মটরগাড়ি ক্রয়সহ পরিবহন সংক্রান্ত অনিয়ম হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্টদের আইনের বাইরে ৬৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাতাদি প্রদান। আইন লঙ্ঘন করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে ৭ কোটি ৫ লাখ টাকার হোমলোন প্রদান। পলিসি ও রেভিন্যু স্ট্যাম্প বিষয়ে ৭৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:১৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।