আদম মালেক | রবিবার, ১২ জুন ২০২২ | প্রিন্ট | 401 বার পঠিত
ড. এম.মোশাররফ হোসেন এফসিএ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযান। আঘাত হেনেছেন ছিঁচকে চোরের ডেরা থেকে রাঘব বোয়ালের দুর্গে। বড় রকম নাকানি চুবানি দিয়েছেন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিকে। তবে প্রতিষ্ঠানটির পর্ষদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থাই মোশাররফের জন্য কাল। এ দুষ্ট চক্রের চক্রান্তেই তিনি আজ আদালতের কাঠগড়ায় বলে মনে করছেন বীমাসংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর নির্দেশে পরিচালিত নিরীক্ষায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে অনিয়ম দুর্নীতি আবিষ্কারের সূত্রপাত। ড. মোশারফ হোসেন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর কোম্পানিটির মারাত্মক জালিয়াতির তথ্য পান। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির ২০১৯ সালের অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন তিনি অনুমোদন করেননি। এ ঘটনায় মোশাররফ ডেল্টা লাইফের চক্ষুশূলে পরিণত হন । তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানের নিয়োগ নবায়ন না করার ড. মোশাররফের প্রতি তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটি ড. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে। সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করে আর ঘুষ না দিলে বড় ধরনের জরিমানা আরোপসহ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনে। পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করে। এর ৩ দিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। ক্ষমতা হারিয়ে আরও বেসামাল হয়ে ডেল্টা লাইফের ক্ষমতাচ্যুত পর্ষদ। এই চক্রটির যোগসাজশে গেল বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিনিয়োগকারী আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদি আদালতে রিট করেন বলে সূত্র জানায়। অথচ এর অনেক আগে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক প্রশাসক সুলতানুল আবেদীন মোল্লা ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য বাদী পল্লব ভৌমিককে নির্দেশ দেয় ।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে তারা নিজেরাই ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বসে আছে। আর এই ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরার জন্যই আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে।
এদিকে প্রশাসক নিয়োগের পরপরই ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের স্থগিত পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আত্মসাৎ ও দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ক্ষতি সাধনের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয়। এদিকে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ডেল্টা লাইফের অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিটিকে অভিযোগটির অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও অনুসন্ধানকালে কোন ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণ অথবা কোন সম্পদ বা সম্পত্তি ক্রোক করা হলে তা অনতিবিলম্বে লিখিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখাকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুদকের এই তৎপরতায় ডেল্টা লাইফের সাবেক পরিচালনা পর্ষদ দুর্নীতি আড়াল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে বলে সূত্র জানায়।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২ হাজার ৯শ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা আড়াল করতে ডাটাবেজ থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত মুছে ফেলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমানের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে নিরীক্ষা চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ এসব তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। বীমা কোম্পানিটির যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, তথ্য মুছে ফেলার ক্ষেত্রেও তাদেরই সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ ঘটনায় আইডিআরএ চলতি বছরের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলায় করে। মামলায় আসামি করা হয়েছে ডেল্টা লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক মনজুরুর রহমানসহ শীর্ষ আট কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে রয়েছেন মনজুরুর রহমানের মেয়ে ও ডেল্টা লাইফের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমান, ছেলে ও সাময়িক বরখাস্ত বোর্ডের পরিচালক জিয়াদ রহমান, কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) এবং আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সাল, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) শেখ মো. মহসিন রেজা, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) মিলটন ব্যাপারী, জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (জেইভিপি) পল্লব ভৌমিক এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) আসাদুজ্জামান মল্লিক।
Posted ২:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ জুন ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy