শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তথ্য গোপন করে আখতার ফার্নিশারসের ভ্যাট ফাঁকি

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   597 বার পঠিত

তথ্য গোপন করে আখতার ফার্নিশারসের ভ্যাট ফাঁকি

ফার্নিচার খাতের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান আখতার ফার্নিশারস লিমিটেড। বিশ্বমানের ফার্নিচার উৎপাদন ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে বিক্রয় তথ্য গোপনসহ নানা কৌশলে এ ফাঁকি দিয়ে আসছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সোয়া সাত কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন ও মামলা করেছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে আখতার গ্রুপের চেয়ারম্যান কেএম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি দেশে ছিলাম না। এমন ফাঁকি তো হয় না। তবে কোম্পানি আমার ছেলে দেখে। আমি অফিসে গেলে বিষয়টি জানাতে পারব। বিকালে ফোন দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’ পরে টানা কয়েক দিন ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি মোবাইলে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি জবাব দেননি।

সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আখতার ফার্নিশারস লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে বিক্রয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভ্যাট চালান না দেওয়া, ভ্যাট নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঁচামাল ক্রয় করা, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট না দেওয়া। ফাঁকি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয় এনবিআর।
এনবিআরের নির্দেশে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট, বিক্রয়সংক্রান্ত দলিলাদি ও বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে কয়েকবার চিঠি দেওয়ার পর কিছু কাগজপত্র জমা দেয়। সে কাগজপত্র ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন (সিএ রিপোর্ট) যাচাই করে ফাঁকি উদঘাটন করে সম্প্রতি প্রতিবেদন দেয় মূসক গোয়েন্দা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভ্যাট চালান দেয় না। ফার্নিচার উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট দেয় না। দাখিলপত্রে সঠিকভাবে বিক্রয় তথ্য তুলে ধরা হয় না। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভ্যাট দেয় না। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে সারা দেশে ৩২টি শোরুম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি স্থান-স্থাপনা ভাড়ার ক্ষেত্রেও ভ্যাট দেয় না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি ২৩ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঁচামাল কেনার মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকি প্রায় ৪৪ লাখ টাকা। অপ্রদর্শিত ক্রয়মূল্যের বিপরীতে ফাঁকি প্রায় ৯০ হাজার টাকা। ফার্নিচার উৎপাদন পর্যায়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকা, বিপণন পর্যায়ে প্রায় ৪২ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে যে দাখিলপত্র জমা দেয় তাতে সঠিকভাবে ফার্নিচার বিক্রয়ের তথ্য তুলে ধরে না। প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে পাঁচ বছরে প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানির কেনাকাটা বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য তুলে ধরে না। সিএ রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রায় ১৯ লাখ টাকার উৎসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি শোরুম ও কোম্পানির প্রতিষ্ঠানের ভাড়ার ওপর পাঁচ বছরে প্রায় সোয়া ৯ লাখ টাকার উৎসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের ওপর দুই শতাংশ হারে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদ প্রায় তিন কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সুদসহ প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাত কোটি ২০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সঠিকভাবে কাগজপত্র পাওয়া গেলে ফাঁকির পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি হতো বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে মূসক গোয়েন্দায় শুনানিতে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ফাঁকি হয়নি বলে দাবি করলেও তার স্বপক্ষে কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি কর্মকর্তারা স্বীকার করে স্থান-স্থাপনা ভাড়ার ওপর ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট পরিশোধ করেন। প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকার (উত্তর) আওতাধীন ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। গত ১৩ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা করে ভ্যাট উত্তর কমিশনারকে প্রতিবেদন দেয় মূসক গোয়েন্দা।

এ বিষয়ে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে কয়েকবার চিঠি দেওয়ার পর আংশিক কাগজপত্র দেয়; যা যাচাই করে প্রায় সোয়া সাত কোটি টাকার ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে। সঠিক কাগজপত্র পেলে ফাঁকির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যেত। তবুও প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে ভ্যাট উত্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:২২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11168 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।