শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থামছে না সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে হরিলুট

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   281 বার পঠিত

থামছে না সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে হরিলুট

থামছে না সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে হরিলুট। একের পর এক আয়োজন হচ্ছে দুর্নীতির মহোৎসব। এসেছে ঘাস চাষ ও খিচুড়ি রান্নার মতো হাস্যকর প্রকল্প। কোনোটি বাতিল হলেও ফাঁকফোকর গলিয়ে কোনোটি অনুমোদন পাচ্ছে। আবার অনেক প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করেই তুলে নিচ্ছে পুরো প্রকল্পের অর্থ। আর এসব দুর্নীতিতে একধাপ এগিয়ে আছে সরকারের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা। তাই বাড়ছে দুর্নীতির আগ্রাসন। প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতির জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করা। যেমন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শত শত সেতু মানুষের কোনো কাজে লাগছে না। কারণ এসব সেতুর কোনো সংযোগ সড়ক নেই। কোথাও কোথাও ফসলি জমির মাঝে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। এমনও আছে, আশপাশে রাস্তা নেই, কিন্তু পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তাই পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, এসব সেতু নির্মাণের প্রকল্প কীভাবে গ্রহণ করা হলো। এসব প্রকল্প নির্মাণের পেছনে সরকারি অর্থ লুটপাট করা ছাড়া আর কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না বলে দাবি তাদের।

বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, বিদেশ সফরের চেয়ে এই টাকা গবেষণায় ব্যয় করলে দেশ আরো উপকৃত হতো। উন্নয়ন প্রকল্পে এ-রকম ব্যয় বাদ দেয়া বাঞ্ছনীয়। বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে এমন কিছু বরাদ্দ আছে যা হাস্যকর। এ ধরনের ব্যয় হওয়া প্রস্তাবে প্রশ্ন থেকে যায়।

ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ সফরের প্রস্তাব দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। এতে ৩২ কর্মকর্তার জন্য মোট বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ঘাস চাষের কৌশল শিখতে প্রায় ডজন তিনেক কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ রাখায় এ প্রকল্প নিয়ে সমালোচনা চলছে গত কয়েকদিন ধরে। তবে একনেক সভায় ঘাস চাষ শেখার জন্য বিদেশ সফরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মকর্তার সংখ্যা ও বরাদ্দ কমানোর পাশাপাশি ‘সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় লোক’ ছাড়া অন্য কাউকে বিদেশে না পাঠাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। এ প্রকল্পের পর এসেছে খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ ভ্রমণের আবদার। তাই প্রথমবারের মতো শতভাগ সরকারের টাকায় দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) জমা দেয়া হয়।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বিদেশে প্রশিক্ষণে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে বিদেশে ভ্রমণের এই পরিকল্পনা বাতিল করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এরপরও এসেছে বিদেশ ভ্রমণের বায়না। জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। গত ৫ বছরে প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। এখন নতুন করে কিছু অঙ্গ (কম্পোনেন্ট) যুক্ত করে প্রকল্পে ব্যয় বাড়িয়ে বিদেশে শিক্ষা সফর বাবদ আলাদা বরাদ্দের আবদার করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর আগেও একবার প্রকল্পের সংশোধনী এনে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়েছিল। নতুন করে আবার ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। যদিও এ বিদেশ ভ্রমণে বরাদ্দ দাবি নিয়ে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এসেছে ৭ গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দের আবদার। এজন্য ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চারলেনে উন্নীত করতে চায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। সাড়ে ১৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক ও ৬ মিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা রবাদ্দ চেয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে সড়ক নির্মাণের একক দর এলজিইডির প্রচলিত দরের প্রায় ৭ গুণ বেশি।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, বর্তমানে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে থাকা সত্তে¡ও কেরানীগঞ্জে চারলেন সড়কের আদৌ প্রয়োজন আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে চায় এলজিইডি। কিন্তু ওই অঞ্চলে বেদখল হওয়া সরকারি জমি কিংবা স্থাপনা উদ্ধারের পরিকল্পনা নেই। আরো বেশ কয়েকটি খাত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সম্প্রতি প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:৪১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11187 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।