নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট | 405 বার পঠিত
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে অনিয়মের কারণে আইপিও কোটা স্থগিত করে বিএসইসি।
প্রতিষ্ঠানটির আরো অনেক অনিয়ম রয়েছে, এর মধ্যে অবৈধভাবে বেতন ভাতা গ্রহণ, কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দর বৃদ্ধি, এফআরসি’র আইন লঙ্ঘন, বিএসইসি’র আইন লঙ্ঘনের ঘটনা, যা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত বলছেন স্টেকহোল্ডাররা। এতে মূল কোম্পানি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক ভিত দূর্বল হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের একাধিক ব্যক্তি রয়েছে যারা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অবৈধভাবে বেতন ভাতা গ্রহণ করে থাকেন। তার মধ্যে রয়েছে, সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ইস্যু ম্যানেজার এবং সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার ও হেড অব ইন্টারনাল অডিট মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সোনার বাংলা সিকিউরিটিজেরও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মোস্তাফিজুর রহমান একই সাথে ৩টি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে থেকে বেতন ভাতা গ্রহণ করে কর্পোরেট গর্ভন্যান্স কোড লঙ্ঘনের পাশাপাশি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের সার্ভিস রুল ২০১২ লঙ্ঘন করেছেন।
সূত্র আরো জানায়, শুধু মোস্তাফিজুর রহমানই নয় আইনের তোয়াক্কা না করে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন কৌশলে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বেতন ভাতা গ্রহণ করছেন। এসব অনিয়মের সাথে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা ও নানা আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
সোনার বাংলা ক্যাপিটালের নানা অনিয়মের বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ইনভেস্ট ইনকাম, ক্যাশফ্লোতে ইনভেস্টিং এক্টিভিটিজে না দেখিয়ে অপারেটিং এক্টিভিটিজে দেখিয়ে অবৈধভাবে নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পার শেয়ার (এনওসিএফএস) বৃদ্ধি করে দেখানো হয়েছে। এনওসিএফএস বৃদ্ধির ফলে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর উঠানামার কারসাজি হতে পারে বলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এছাড়া, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অডিটর জি কিবরিয়া এন্ড কোং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন দিতে বাধ্য হয়।
বার্ষিক প্রতিবেদনে অপর পৃষ্ঠায় দেখা যায়, সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ার ইস্যু না করে এফআরসি’র আইন লঙ্ঘন করেছেন। এফআরসি’র প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে বলা হয়, শেয়ার মানি ডিপোজিটের টাকা বিনিয়োগকারীদের মাঝে শেয়ার হিসেবে ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার মূলধনে রপান্তরিত করতে হবে। কিন্তু সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স সেই অর্থ ৬ মাস অতিবাহিত হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেয়ার ইস্যু না করে এফআরসি’র আইন ভঙ্গ করেছে। ধারাবাহিকভাবে এমন আইন বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডের জন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্ম এ ব্যাপারেও কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন দিতে বাধ্য হয়।
সম্প্রতি নানা অনিয়মের কারণে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) কোটা সুবিধা বাতিল করেছে বিএসইসি। এ বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি। চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএসইসির অনুমতি না নেওয়ার কারণে কমিশন সোনার বাংলা ক্যাপিটালের কোটা সুবিধা স্থগিত করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) বিধিমালা, ২০১৫ এর অধীনে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের যোগ্য বিনিয়োগকারী (ইআইএস) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ক্ষুদ্র কোম্পানির যোগ্য অফার) নিয়ম, ২০২২-এর অধীনে যোগ্য বিনিয়োগকারী (কিউআইএস) হিসাবে কোটা সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। কোম্পানিটির যোগ্য বিনিয়োগকারী সুবিধা গত ১ এপ্রিল ২০২৩ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এজন্য ডিএসই ও সিএসইকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার ও হেড অব ইন্টারনাল অডিট মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক আগে এসব প্রতিষ্ঠানে ছিলাম। এখন আমার তেমন কোন কিছু মনে নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’
Posted ৮:৫২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy