আদম মালেক | রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 392 বার পঠিত
করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত জনজীবন। এর মধ্যে বেড়েই চলছে চালের দাম। গত ৩ মাসে চালের দাম প্রতি বস্তায় বেড়েছে (৫০ কেজি) ৬০০ টাকা। গরিবের মোটা চালের কেজিও ৫২ টাকায় পৌঁছেছে। ভরা মৌসুমে চালের এই আকাশচুম্বী মূল্যে নিম্ন-আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
অনেকেই আশা করেছিল, আমন মৌসুমে ধান উঠলে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। কিন্তু দেখা গেল, দাম তো কমেইনি, উল্টো বাড়ছে। দফায় দফায় দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারের হিসাবই এলামেলো হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই পেঁয়াজ-আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম আগে থেকেই বেশি। এখন চালের দামও লাগামহীন হয়ে ওঠায় নিম্ন-আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
চালের লাগামহীন মূল্যে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, করোনার মধ্যে সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় করা। বিশেষ করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তিনি বলেন, করোনার প্রথম ওয়েভে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে।
তবে চালের দাম বৃদ্ধির ভিন্ন ভিন্ন কারণ উল্লেখ করছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, আমন ধানের বড় অংশই কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন ফড়িয়া ও মিলাররা, যা তাদের বাজারে ছাড়ার কথা। তারা তা না করে গুদামে আটকে রেখেছেন। এ কারণে চালের সংকট ও দাম দুই বেড়েছে। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে তারা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলাররা চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। দামও বাড়িয়েছেন। ফলে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলাররা বলছেন, গ্রামে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন কোম্পানি ধান কিনে আটকে রেখেছেন। ধান সংকটের কারণে ধান ও চালের দাম বেড়েছে। এভাবে চালের দাম যখন বাড়ে সংশ্লিষ্ট কেউই দায় নিতে রাজি হয় না।
রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বর্তমানে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬২-৬৬ টাকা দরে, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫৮-৬২ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪-৬০ টাকা। ৫৪-৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ব্রি-২৮ ও পাইজামসহ মাঝারি মানের চাল, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫০-৫২ টাকা এবং দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৪-৪৬ টাকা, আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৪২-৪৫ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের দাম প্রায় ৪৮ শতাংশ, মাঝারি ২৩ ও সরু চালের দাম ১৭ শতাংশ বেশি।
বাজারে দাম বাড়তে থাকলেও কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, চালের কোনো ঘাটতি নেই। মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে এবার আমনে লক্ষ্যের চেয়ে ১৫ লাখ টন চাল কম উৎপাদিত হয়েছে। খাদ্য অধিদফতরের গুদামে চালের মজুদ গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। পরিমাণের দিক দিয়ে যা সাড়ে পাঁচ লাখ টন। এ পরিস্থিতিতে চাল আমদানির ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে ভারতের সাথে দেড় লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। ভারতীয় চালের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। আরো দেড় লাখ টন আমদানির বিষয়টি আগে থেকেই প্রক্রিয়াধীন ছিল, যার বড় অংশও ভারত থেকে আসছে। সরকার আমদানি করেই মজুদ বাড়াবে। তবে সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টনের বেশি আমদানি হবে না। সরকারের ভাষ্যমতে, সরকারিভাবে চাল আমদানিতে বাড়তি জোর দেয়ার কারণ, চালকল মালিকরা ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে দাম প্রতি কেজি ৪১ টাকা না করলে নতুন আমন মৌসুমের চাল সরকারকে দিতে রাজি নন। ফলে আমদানি ছাড়া বিকল্পও নেই।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, সরকারিভাবে চাল আমদানিতে বাড়তি জোর দেওয়ার কারণ, খাদ্য অধিদফতরের গুদামে চালের মজুত গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। পরিমাণের দিক দিয়ে যা সাড়ে ৫ লাখ টন। ওদিকে চালকল-মালিকরা ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে দাম প্রতি কেজি ৪১ টাকা না করলে নতুন আমন মৌসুমের চাল সরকারকে দিতে রাজি নন। ফলে আমদানি ছাড়া বিকল্পও নেই।
খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার আমদানি করেই মজুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতে চালের দাম সবচেয়ে কম। দেশটির সঙ্গে চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে বেসরকারি আমদানি উৎসাহিত করতে কর কমানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
Posted ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed