বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২০ | প্রিন্ট | 558 বার পঠিত
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়ম অনুযায়ী শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৫০ কোটি টাকা । কিন্তু বীমা আইন অনুযায়ী জীবন বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০ কোটি টাকা ও সাধারণ বীমা কোম্পানির ৪০ কোটি টাকা। উভয় বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ দিতে হবে উদ্যোক্তাদের ও অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ সংগ্রহ করা যাবে জনসাধারণ কাছ থেকে।
বিএসইসি ও বীমা আইনের এ পার্থক্যই বীমা কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে প্রধান বাধা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই বীমা কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন সংক্রান্ত শর্ত শিথিলের উদ্যোগ নিয়েছে ইন্স্যুরেন্স ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)। পরিশোধিত মূলধনের বিষয়টি কিভাবে মাঝামাঝি পর্যায়ে আনা যায় তা নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো বিএসইসি’র নিয়ম অনুযায়ীই কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত। কিন্তু শেয়ারবাজারের বাইরে থাকা অধিকাংশ বীমা কোম্পানিরই আর্থিক অবস্থায় অত্যন্ত দুর্বল। তাই এ অবস্থায় পরিশোধিত মূলধনের ক্ষেত্রে বিএসইসি ও বীমা আইনের মাঝামাঝি কিছু করা যায় কিনা তা নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুযায়ী, তালিকাবহির্ভুত ২৭টি বীমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৯টির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত এ কোম্পানিগুলোই আর্থিকভাবে শক্তিশালী। কোম্পানিগুলোর এ সংক্রান্ত রোডম্যাপ পর্যালোচনা করে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
আর্থিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোর মধ্যে নতুন ৫ ও পুরোনো ৪টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। নতুন কোম্পানিগুলো হলো-গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেড, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। পুরোনো কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, কৃস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
বীমা খাতের কোম্পানিগুলোকে অনুমোদন পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হয়। কিন্তু তিন বছর সময়সীমা অতিক্রান্ত হলেও ২৭টি বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। এর মধ্যে পুরোনো কোম্পানি ১২টি ও নতুন ১৫টি। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক তালিকাবহির্ভুত কোম্পানিগুলোকে গত ডিসেম্বরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। অন্যথায় বীমা আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। তবে সময় বেধে দেয়ার পরও গত তিন মাসে মাত্র দু’টি কোম্পানি বিএসইসি’র কাছে তালিকাভুক্তির আবেদন করেছে। সেগুলো হলো- সাধারণ বীমা খাতের দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
উল্লেখ্য, পুরনো যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স । এর মধ্যে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স তালিকাভুক্তির আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত তারা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র কাছ থেকে অনুমোদন পায়নি।
২০১৩ সালে নতুন ১৫টি বীমা কোম্পানির লাইসেন্স দেয় আইডিআরএ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর কয়েকটি কোম্পানি দু’বছর সময় বাড়িয়ে নেয়। কিন্তু সেই বর্ধিত সময় পার হওয়ার পরও কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের বাইরেই রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা নতুন জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে আলফা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রটেকক্টিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া নতুন সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সিকদার ইন্স্যুরেন্স ও সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স।
Posted ১২:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed