বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 460 বার পঠিত
বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং এন্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) অবসায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অনিয়মের দায়ে বহিষ্কৃত প্রতিষ্ঠানটির ৯ পরিচালকের নামে থাকা সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও শেয়ার জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
সোমবার বিএফআইইউ থেকে অনলাইনে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ওই ৯ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশনা পাঠানো হয়। আর পরিচালকদের শেয়ার জব্দের নির্দেশ দিয়ে পুজিঁবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের অনুরোধে প্রতিষ্ঠানটির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পরিচালকদের শেয়ার জব্দের নির্দেশ দিয়েছি।
এর আগে রবিবার পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে পিপলস লিজিংয়ের নামে থাকা সব অ্যাকাউন্ট ও অনিয়মের দায়ে বহিষ্কৃত ৯ পরিচালকের নামে থাকা শেয়ার ও তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগের আদেশ দেন আদালত।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ক (লিকুইডেটর) হিসেবে আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই অবসায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেব ও পিপলস লিজিংয়ের কার্যালয়ে অফিস করব। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবসায়ন কাজ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি আগামী ২১ দিনের মধ্যে আমাকে সম্পদের একটি হিসেব দেবে। এরপর তা যাচাই করতে পিপলসের যে অ্যাসেট লায়াবেলিটিজ রয়েছে তা নিরীক্ষা হতে পারে। নিরীক্ষার পর দায়-দেনা পরিশোধ করা হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের সবার আগে টাকা পরিশোধ করা হবে। এরপর টাকা পাবেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তবে সব কিছু নির্ভর করবে আদালতের সিদ্ধান্তের উপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ৫৭০ কোটি টাকা বের করে নেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা। এর বড় অংশই বের করা হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সামসুল আলামিন গ্রুপের নামে। গ্রুপের ২০ প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকজন পরিচালকের নামে অনিয়ম করে বের করা হয় ১৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পরিচালক মতিউর রহমান, খবির উদ্দিন, ইউসুফ ইসমাইল, বিশ্বজিত কুমার রায়ও নামে-বেনামে টাকা বের করে নেন। পিপলসের সাবেক চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রতিষ্ঠানটির ১২৩ কোটি টাকার জমি নিজের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নিলেও পরে তা ছেড়ে দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব অনিয়ম বের হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি থেকে পরিচালক সামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন, হুমায়রা আলামিন ও খবির উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। আর চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেন স্বেচ্ছায় পদ ছাড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিপলস লিজিংয়ে ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৩১ কোটি টাকা আটকে আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ৩টি বেসরকারি ব্যাংক। এ ছাড়া কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ৫শ কোটি টাকা এবং ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীর ৭শ কোটি টাকাও আটকে গেছে।
Posted ২:২৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed