বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ০৬ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 580 বার পঠিত
দেশীয় শিল্পকে রক্ষায় বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীর মুখোশ উন্মোচন করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। রোববার রাজধানী পল্টন টাওয়ারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে ‘ইমপ্রুভড ট্রেড অ্যান্ড বন্ডেড ওয়্যারহাউস পলিসিজ’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
এতদিন শুধু তৈরি পোশাক খাতকে শতভাগ রপ্তানিমুখীর জন্য শুল্কমুক্ত বা বন্ড সুবিধার আওতায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছিল সরকার। তবে আগামীতে এগ্রো প্রসেসিং, চামড়াজাত পণ্য, পেপার, কেমিক্যালসহ কয়েকটি খাতকে এর আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল এবং চামড়া খাতের বিকাশের জন্য বন্ড সুবিধা দিচ্ছে সরকার। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করছে। এনবিআরের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বন্ডের অপব্যবহার রোধে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে এত প্রবৃদ্ধির পেছনে বন্ড সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রণোদনার ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানির ৮৫ ভাগ আয় আসে তৈরি পোশাক থেকে। পাশাপাশি আমরা অন্যান্য পণ্যের রপ্তানিও বাড়াতে চাই। এজন্য এগ্রো প্রসেসিং, চামড়াজাত পণ্য, পেপার, কেমিক্যালসহ কয়েক খাতকে বন্ডেড ওয়্যারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধার আওতায় কাঁচামাল এনে পণ্য তৈরি করে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে। এতে প্রকৃত উদ্যোক্তা যেমন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে রাজস্ব বোর্ডের কাস্টম বন্ড কমিশনারেট। ইতোমধ্যে তারা ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল ও স্থগিত করেছে। অদূর ভবিষ্যতে বন্ড সুবিধা প্রদানের পুরো সিস্টেম অটোমেশনের আওতায় এনে মনিটরিং করার চিন্তা করছে এনবিআর। এতে এর অপব্যবহার রোধ অনেকাংশে সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘খোলাবাজারে বন্ডের পণ্য বিক্রি হওয়ায় কাপড়, সুতা, কালি এবং কাগজশিল্পের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সরকারও এ খাত থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে। বন্ডের অপব্যবহার রোধে আমাদের ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম অফিস কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গত দেড় মাসে অন্তত ৬০টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স জব্দ করেছে। এগুলোর সব কয়টির লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ঢাকায় ১৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আরও ১৭টি বাতিলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চট্টগ্রামেও ২৯টির বাতিলের প্রক্রিয়া রয়েছে।
বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে অটোমেশন চালু করা হচ্ছে এবং আইনের সংশোধনসহ সবধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আমি আপনাদের আহ্বান করছি, বন্ড অপব্যবহারকারীদের মুখোশ উন্মোচন করুন। জাতির কাছে তাদের চেহারা তুলে ধরুন। সামাজিকভাবে তাদেরকে মর্যাদা হেয় করুন, দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করুন।
ইআরএফ ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিককের জন্য যৌথভাবে এই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করে। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সহসভাপতি সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার।
উল্লেখ্য, দেশের শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড (শুল্কমুক্ত) সুবিধা দেয় সরকার। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বন্ড লাইসেন্স নিয়ে এসব কাঁচামাল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন। দীর্ঘদিন ধরে শুল্কমুক্ত পণ্যের অপব্যবহার করে আসছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। বন্ড কর্মকর্তারা একাধিকবার সতর্ক এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিলেও অপব্যবহার ঠেকানো যাচ্ছে না।
Posted ৩:৩৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed