নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০২ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট | 156 বার পঠিত
তারিখটি ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২। দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পরিবারের জন্য স্মরণীয় এবং আনন্দঘন একটি দিন। ওই দিন যেনো দিবাকর উদিত হয়েছিল আনন্দের বার্তা নিয়ে। উল্লাস আর হিল্লোল বয়ে গেছে পুরো সংবাদপত্র শিল্প জুড়ে। চার বছর আগে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে একটি নতুন ধারার দৈনিক পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি। একদল উদ্যমী মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টায় দৈনিক রূপে আত্ম প্রকাশ করে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা। দৈনিক রূপে আত্মপ্রকাশের আগে কয়েক বছর ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা ম্যাগাজিন আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। তখনই অনুধাবন করা গিয়েছিল ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা জগতে বিস্ময়কর সৃষ্টি করতে এসেছে। এসেই চলে যাবার মতো পত্রিকা নয় দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি। ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা কর্তৃপক্ষের বিত্ত বৈভবের প্রাচুর্য না থাকলেও মনে ছিল অদম্য সাহস আর উদ্দীপনা। শুধু অফুরন্ত প্রাণ প্রাচুর্য আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে অসীম সাহস বুকে ধারণ করে যাত্রা শুরু হয়েছিল দৈনিক বাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার। একটি দৈনিক পত্রিকা, তা যদি ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতির মতো বিশেষায়িত খাত নিয়ে প্রকাশিত হয় তার অব্যাহত প্রকাশনা চালিয়ে যাওয়া যে কত কঠিন কাজ তা একমাত্র ভোক্তভোগিরাই জানেন। বিগত দিনে আমাদের পত্রিকা প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে গিয়ে অনেক অসুবিধা হয়েছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ কখনোই হাল ছাড়েন নি। বিশেষ করে করোনকালীন সময়ে আমরা বারবার হোচট খেয়োিছ। কিন্তু আমরা থেমে থাকিনি। পত্রিকা প্রকাশনা একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। গত ৪ বছর ধরে প্রকাশনা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া একটি বিরল কৃতিত্বই বটে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আগত অতিথিদের অনেকই একথা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন।
এই কৃতিত্বের অংশীদার পত্রিকার অগণিত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং বিজ্ঞাপনদাতাগণ। তাদের সার্বিক সহায়তা না পেলে আমাদের পক্ষে এই বন্ধুর পথ পরিক্রমা অব্যাহত রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। পত্রিকার চতুর্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান আরো আড়ম্বরে আয়োজন করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আমাদের এই সীমাবদ্ধতা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ রইলো।
রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মাল্টিপারপাস হলে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় বিকেল সাড়ে তিনটায় এবং তা অব্যাহতভাবে চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। যদিও অনুষ্ঠান সমাপ্তির নির্ধারিত সময় ছিল সন্ধ্যা ৭টায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠান স্থলে আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমন শুরু হয়। একের পর এক বিশিষ্টজন অনুষ্ঠান স্থলে আসতে থাকেন। কারো হাতে ফুলের তোড়া, কারো হাতে ব্যানার। অথিতিদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে হলরুম করতালিতে পূর্ণ হয়ে উঠে। মুখরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠান স্থলের প্রতিটি প্রান্তর। একে একে আসাতে থাকেন দেশের ব্যাংক বীমা তথা আর্থিক খাতের মহিরুহগণ। তাদের উপস্থিতিতে দর্শক শ্রোতাগণ উজ্জীবিত হয়ে উঠেন। আগত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় পত্রিকার পক্ষ থেকে। পুরো হল ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। সুরের মুর্ছনায় আবেশ তাড়িত হয়ে পড়ে। শ্রোতাগণ অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে অতিথিদের আগমন প্রত্যক্ষ করেন। তাদের প্রতি জানান শ্রদ্ধা ও সম্মান। আলোর বন্যায় পুরো হল রুম ঝলমল করতে থাকে। দেশের খ্যাতিমান এবং উদীয়মান শিল্পীগণ সঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকেন। তাদের সুরের মুর্চ্ছনায় পুরো হলে বিরাজ করে পিন পতন নিরবতা। শিল্পীগণ একের পর এক পুরনো দিনের গান পরিবেশন করেন। কখনো বা হালের নতুন কোনো গান পরিবেশন করেন। একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এমন জমকালো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেন। তাদের অনেকেই বলেন, অর্থনীতি বিষয়ক কোনো পত্রিকা এমন সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে তা আমরা ভাবতে পারিনি।
অনুষ্ঠান শুরুর পর দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক মোহাম্মদ মুনীরুজ্জামান আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। তিনি বলেন, আমি একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, চটকদার সংবাদ পরিবেশন করে সাময়িক জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায় কিন্তু সেই জনপ্রিয়তা কোনো ভাবেই টেকসই হয় না। তাই আমি প্রথম থেকেই স্বপ্ন দেখতাম এমনএকটি পত্রিকা প্রকাশ করবো যা দেশের সাধারণ মানুষের কথা বললে এবং জনগণকে সঠিক তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করবো। সেই স্বপ্ন থেকেই ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আমি ব্যাংক বীমা অর্থনীতি নামক ম্যাগাজিনটিকে দৈনিক হিসেবে বাজারে নিয়ে আসি। অর্থনীতি বিষয়ক একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ৪ বছর একটানা প্রকাশ করা সত্যি দুরূহ কাজ। আমি সেই দুরূহ কাজটিই সম্পন্ন করার চেষ্টা করে চলেিেছ। কতটা সফল হয়েছি সে বিচারের ভার আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি কখনোই কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছোট করা বা হয়রানির জন্য কোনো সংবাদ পরিবেশন করেনা, আগামীতেও করবে না। আদালতের বিচারকগণ একটি নীতি বাক্য মেনে চলেন তাহলো, দশজন অপরাধি মুক্তি পাক অসুবিধা নেই। কিন্তু একজন নিরপরাধ ব্যক্তিও যেনো অকারণে সাজা ভোগ না করেন। দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতিও তেমনি বিশ্বাস করে কোনো নিউজ প্রকাশিত হোক বা না হোক কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু নিরপরাধ ব্যক্তি যেনো প্রকাশিত সংবাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সমাজে হেয় প্রতিপন্ন না হয়। একটি ভুল বা মিথ্যে সংবাদ প্রকাশিত হলে পাঠক বিভ্রান্ত হন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ইমেজ নস্ট হয়। একবার কোনো সংবাদ প্রকাশিত হলে তার বিরুদ্ধে যতই প্রতিবাদ করা হোক না কেনো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যে ক্ষতি হয় তা আর কোনোভাবেই পূরণ করা যায় না। তাই আমরা একটি সংবাদ পরিবেশনের আগে বার বার তা যাচাই করে নিই। আগমীতে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি তার বস্তনিষ্ঠতার অঙ্গিকার সদাই মেনে চলবে। অনুষ্ঠানে যারা কস্ট করে উপস্থিত হয়েছেন তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের উপস্থিতি আমাকে আগামী দিনের পথ চলায় অনুপ্রাণিত করবে। আপানাদের স্বতঃফূর্ত উপস্থিতি আমাকে বিশেষভাবে আবেগ তাড়িত করেছে। শত কর্মব্যবস্থাতার মাঝেও আপনাদের উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ এবং অনুপ্রাণিত করেছে। আজ মনে হচ্ছে, দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার উদ্যোগ ভুল ছিল না। উপমহাদেশের সংবাদ পত্র প্রকাশিত হয় বৃটিশ আমলে ১৮১৮ সালে। সেই হিসেবে আমাদের এই উপমহাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের ইতিহাস ২০৪ বছরের। আর আমাদের দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার বয়স ৪ বছর অতিক্রম করে পাঁচ বছরে পদার্পণ করলো। বিগত দিনগুলোতে আপনারা দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকাকে যেভাবে সহায়তা করেছেন ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে এ বিশ্বাস আমার আছে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতি সেক্টরের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তারা ফুল দিয়ে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানান। একই সঙ্গে তারা সংক্ষিপ্তভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন। একজন অতিথি বলেন, আজ দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা তার অব্যাহত প্রকাশনার ৪র্থ বছর অতিক্রম করে পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ করলো।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকাকে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। আমরা চাই এই পত্রিকা শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান করুক। তার এই বক্তব্য শুনে হলে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ করতালিতে পুরো হল মুখরিত করে তোলেন। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডিন্ট শেখ কবির হোসেন বিদেশে অবস্থান করায় অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিতি থাকতে পারেন নি। তিনি ভিডিও বার্তায় দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার সকলকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, একটি সংবাদ পত্রিকার যে কোনো প্রতিষ্ঠানের উপকার করতে পারে। সংবাদপত্র যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে তাহলেও সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়। কারণ তারা তাদের ভুল সংশোধনের সুযোগ পান। আমি প্রত্যাশা করি দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবে। একজন অতিথি বলেন, দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা দেশের বীমা সেক্টরের উন্নয়নে আরো বেশি অবদান রাখবে এই প্রত্যাশা করি। তিনি আরো বলেন, আগামীতে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকায় বীমা খাতের জন্য সপ্তাহে অন্তত একটি আলাদা পাতা বের করার প্রস্তাব করছি। আমরা অতীতে যেভাবে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকাকে সহায়তা করেছি ভবিষ্যতেও করবো। আর একজন অতিথি বলেন, বীমা খাত সম্পর্কে এখনো তেমন একটা অবহিত নয়। তাই বীমা খাতের উপর আরো বেশি সংবাদ প্রকাশ করার অনুরোধ করছি। নিগেটিভ কোনো সংবাদ থাকলেও তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেনো তা এই সেক্টরের উপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। একজন অতিথি দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার পরিবেশিত সংবাদের প্রশংসা করেন।
বিশেষ করে তিনি দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার চীফ রিপোর্টার মো. আবুল কাশেম এর লেখা ভূমি আইন সংক্রান্ত একটি সংবাদের অত্যন্ত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমি ভূমি আইনের খুঁটিনাটি অনেক কিছুই জানতাম না। এই প্রতিবেদন পড়ার পর ভূমি আইন সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। আগামীতেও এ ধরনের শিক্ষামূলক সংবাদ প্রকাশের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। একজন অতিথি বলেন, দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকা আগামীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিষয়ক পত্রিকায় পরিণত হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আশা করি পত্রিকা কর্তৃপক্ষ সেই প্রতাশা পূরণে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাবেন।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার চতুর্থ বর্ষপূর্তি এবং পঞ্চম বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান যাতে সুন্দর হয় সে জন্য এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মীই ছিলেন অত্যন্ত সজাগ। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও অনুষ্ঠান সফল করায় সম্পাদক সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি আরো বলেন, আপনাদের উপস্থিতি আমাদেরকে দৃঢ় প্রত্যয়ী করেছে। আজ বুঝতে পারছি আমরা একা নই। আমাদের সঙ্গে দেশের ব্যাংক বীমা তথা অর্থনীতি সেক্টরের প্রায় সবাই আছেন। আগামীতে আমাদের চলার পথে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি।
Posted ৩:১০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০২ অক্টোবর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy